Pages

Showing posts with label খামার ব্যবসা. Show all posts
Showing posts with label খামার ব্যবসা. Show all posts

Tuesday 10 October 2017

বাণিজ্যিক পোল্ট্রি খামার পরিকল্পনা

আমাদের দেশে প্রাণীজ আমিষের অভাব খুবই প্রকট। আমিষের এ অভাব মেটাতে মুরগি পালনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান বিশেষ জরুরী। খুব অল্প সময়ে অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সাম্প্রতিক সময়ে মুরগি পালন একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় কৃষি শিল্প হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পরিকল্পনায় মুরগি খামার স্থাপনের মাধ্যমে মুরগি পালনকে লাভজনক করে তোলা যায়। মুরগি খামার দু’ধরনের হতে পারে। যেমন-পারিবারিক মুরগি খামার ও বাণিজ্যিক মুরগি খামার। পারিবারিক মুরগি খামারে অল্পসংখ্যক মুরগি পালন করে সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে বাণিজ্যিক মুরগি খামার গড়ে তোলা যায়। উৎপাদনের উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। মাংস উৎপাদনের জন্য মুরগি পালন করলে একে বলা হয় ব্রয়লার খামার। আবার ডিম উৎপাদনের জন্য খামার করলে একে বলা হয় লেয়ার খামার। তবে যে খামারই স্থাপন করা হোক না কেন তা লাভজনক করতে চাইলে প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও সঠিক পরিচালনা।

বাণিজ্যিক মুরগি খামারের জন্য স্থান নির্বাচন

মুরগির খামার একটি স্থায়ী ব্যবস্থা। খামার বলতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে মুরগি প্রতিপালন করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানকে বুঝায়। মুরগির খামার বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন ডিম উৎপাদন খামার, মাংস উৎপাদন খামার, প্রজনন খামার, ব্রিডার খামার, বাচ্চা উৎপাদন খামার ইত্যাদি। যে ধরনের মুরগি খামারই স্থাপন করা হোক না কেন সাফল্যজনকভাবে খামার পরিচালনার জন্য এর স্থান নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কৌশল। খামারের জন্য স্থান নির্বাচনের সময় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন-
  • খামারের স্থান উঁচু হওয়া উচিত। খামার এমন স্থানে গড়তে হবে যেখানে বন্যার পানি কখনও প্রবেশ করতে না পারে।
  • যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার মাটি বালু ও কাঁকর মিশ্রিত হতে হবে এবং মাটির পানি শোষণ ক্ষমতা থাকতে হবে।
  • খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানে পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • খামারের স্থানটি মানুষের বাড়িঘর থেকে দূরে কোলাহলমুক্ত জায়গায় হতে হবে।
  • যে স্থানে খামার করা হবে সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হতে হবে। মানুষের চলাচলের জন্য ব্যবহৃত মূলপথ থেকে অন্তত আধা কিলোমিটার দুরে খামারের স্থান নির্বাচন করা উচিত।
  • যেখানে খামার করা হবে সেখানে বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • খামারের স্থান নির্বাচনের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন আশেপাশে সস্তায় ও সহজে মুরগির খাদ্য ক্রয় করার সুযোগ-সুবিধা থাকে।
  • খামারে উৎপাদিত পণ্য, যেমন-ডিম, মুরগি ইত্যাদি সহজে বাজারজাতকরণের সুযোগ থাকতে হবে।
  • খামার স্থাপনের জন্য নির্বাচিত স্থানের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম কি না সেটাও বিবেচনা করতে হবে।

বাণিজ্যিক মুরগি খামার পরিকল্পনায় বিবেচ্য বিষয়সমূহ

যে কোন খামার বা শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভের জন্য চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা। বাণিজ্যিক মুরগি খামার ব্যবস্থাপনায় তিনটি মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে হয়, যথা-
  • মুরগির খাদ্য
  • বাসস্থান ও
  • রোগ দমন। মুরগির খামার একটি বিশেষ ধরনের শিল্প।
তাই এ খামার প্রতিষ্ঠার জন্য মূল বিষয় ছাড়াও আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হয়। মুরগির খামার পরিকল্পনার সময় নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
জমির পরিমাণ
বার্ষিক যত সংখ্যক ডিম/ব্রয়লার উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে তদনুযায়ী লেয়ার/ব্রয়লার প্রতিপালনের ঘর এবং অন্যান্য সুবিধা, যেমন- অফিস, শ্রমিক ঘর, খাদ্য গুদাম, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণের ঘর, সংরক্ষণাগার ইত্যাদি তৈরির জন্য মোট জায়গার সঙ্গে আরও প্রায় ১.৫ গুণ ফাঁকা জায়গা যুক্ত করে খামারের মোট জমির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়।
মুরগির বাসস্থান
নিরাপদ ও আরামে থাকার জায়গার নাম বাসস্থান। বাসস্থান নিরাপদ রাখতে হলে নির্বাচিত স্থানের উপযোগী দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে তা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে ঝড়বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দূর্যোগে সহজে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। বাসস্থানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা, যেমন-পরিমাণমতো থাকার জায়গা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক খাদ্য ও পানির পাত্র, তাপ ও আলো এবং বায়ু চলাচলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। পালনকারীর সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করে ঘর পাকা, কাঁচা বা টিনের হতে পারে। প্রজাতি বা স্ট্রেইন অনুযায়ী যতগুলো মুরগি রাখা হবে এদের মোট জায়গার পরিমাণ হিসেব করে ঘর তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি ঘরের মাঝে ২৫-৩০ ফুট বা ততোধিক জায়গা আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবাহের জন্য খালি রাখা দরকার।
  • ঘর তৈরিঃ বাজারজাত করার বয়স পর্যন্ত প্রতিটি ব্রয়লারের জন্য ১ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন। এভাবে হিসেব করে ব্রয়লার উৎপাদনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করেই ঘরের সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে। সাদা খোসার ডিম উৎপাদনকারী প্রতিটি মুরগির জন্য ৩ বর্গফুট জায়গা এবং বাদামি খোসার ডিম উৎপাদনকারী মুরগির জন্য ৪ বর্গফুট জায়গা হিসেব করে থাকার ঘর তৈরি করতে হবে। এসব মুরগি খাঁচায়, মাচায় অথবা লিটার পদ্ধতিতে পালন করা যায়। পালন পদ্ধতির উপর নির্ভর করে ঘরের পরিমাণ ভিন্ন ধরনের হতে পারে। খাঁচা পদ্ধতিতে প্রতিটি উৎপাদনশীল মুরগির জন্য কেইজে ৬০-৭০ বর্গইঞ্চি জায়গা প্রয়োজন হবে। কাজেই এ হিসেবে খাঁচা তৈরি করা হয়। খাঁচার সারি লম্বালম্বিভাবে এক সারি বা একটার উপর আরেকটা রেখে ৩/৪ সারি করা যায়। আবার সিঁড়ির মতো করে সাজিয়ে উভয় পার্শ্বেও সারি করা যায়। প্রতিটি উৎপাদনশীল মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ মাচায় ১.২-১.৩ বর্গফুট এবং লিটারে ১.৫-১.৭৫ বর্গফুট। মুরগির দৈহিক ওজন এবং আবহাওয়াভেদে এই পরিমাপের পরিবর্তন হতে পারে। লিটার পদ্ধতিতে সাধারণত প্রতি ১০ বর্গফুট মেঝের জন্য ৫ কেজি লিটার প্রয়োজন হয়। এ পদ্ধতিতে পালন করতে মুরগির ঘরের মেঝে পাকা হলে ভালো হয়। কাঁচা মেঝের ক্ষেত্রে শক্ত এঁটেল মাটির মেঝে হলেও চলবে। তবে এ ধরনের মেঝে বর্ষাকালে স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যেতে পারে। শুকনো বালির মেঝের ক্ষেত্রে বর্ষাকালে সমস্যা হতে পারে।
  • ঘরের চালা ও বেড়ার নমুনাঃ বাংলাদেশের পরিবেশে দোচালা বা গেবল টাইপ চালই মুরগির জন্য বেশি আরামদায়ক। লেয়ারের ঘরের বেড়ার উচ্চতার পুরোটাই তারজালি দিয়ে তৈরি করতে হবে। বেশি বাতাস বা বেশি শীত হতে মুরগিকে রক্ষা করার জন্য বেড়ার ফাঁকা অংশ প্রয়োজনে ঢেকে দেয়ার জন্য চটের পর্দার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রয়লার লালন-পালনের সুবিধার্থে প্রথম সপ্তাহে ৯৫০ ফা থেকে কমাতে কমাতে ষষ্ঠ সপ্তাহে ৭০০ ফা-এ নামিয়ে আনার জন্য বেড়ায় বেশি ফাঁকা জায়গা রাখা যাবে না। কিন্তু প্রয়োজনীয় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এজন্য দেয়ালের উচ্চতার ৬০% তারজালি দিয়ে তৈরি করতে হয়। তবে শীতের দিনে তারজালির এ অংশটুকু চটের বস্তা দিয়ে ঢাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ডিম পাড়ার বাসাঃ মাচা অথবা লিটারে পালন পদ্ধতিতে প্রতি ৫টি মুরগির জন্য ১টি করে ডিম পাড়ার বাসা সরবরাহ করতে হয়। প্রতিটি বাসা দৈর্ঘ্যে ১ ফুট, প্রস্থে ১ ফুট ও গভীরতায় ১.৫ ফুট হওয়া প্রয়োজন। খাঁচা পদ্ধতিতে পালন করলে আলাদাভাবে ডিম পাড়ার বাসা বা বাক্স লাগে না। খাঁচাগুলো ঢালসহ এমনভাবে তৈরি করা হয় যাতে করে মুরগি ডিম পাড়া মাত্রই ডিমগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে খাঁচার সামনে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে বাইরের বর্ধিত অংশ এসে জড়ো হতে পারে।
  • আলোকায়নঃ লেয়ারে দৈনিক (২৪ ঘন্টায়) আলোর প্রয়োজন হবে ১৬ ঘন্টা। কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা বছরের ছোট-বড় দিন অনুযায়ী দৈনিক ২.৫ ঘন্টা হতে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত হবে। আলোর উৎস বৈদ্যুতিক বাল্ব। যেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই সেখানে উজ্জ্বল হারিকেনের আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। বাল্বের শক্তি হবে ৪০ ওয়াট, আলোর রং স্বাভাবিক, আলোর তীব্রতা মৃদু (২০ লাক্স) হবে। ১টি বাল্বের আলোকায়ন এলাকা ১০০০ বর্গ ফুট। বাল্ব স্থাপনের এক পয়েন্ট হতে আরেক পয়েন্টের দূরত্ব হবে ২০ফুট। প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম যে কোনো উৎস থেকেই ব্রয়লার গৃহে আলোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রথম সপ্তাহে ব্রয়লার গৃহে খাবার ও পানি দেখার জন্য সারারাত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে রাতের বেলায় মাঝে মাঝে আলো নিভিয়ে আবার জ্বালাতে হবে এবং এভাবে সারারাত মৃদু আলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। সাধারণত প্রতি ১০ বর্গফুটের জন্য ৫ ওয়াট পরিমাণ আলো প্রয়োজন।
মুরগির খাদ্য ব্যবস্থাপনা
খাদ্যের গুণগত মান, খাদ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা, খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ, প্রতি কেজি খাদ্যের দাম, খাদ্য হজমের দক্ষতা প্রভৃতি খাদ্য ব্যবস্থাপনার অন্তর্ভূক্ত। খাদ্য খরচ মোট উৎপাদন ব্যয়ের প্রায় ৬০-৭৫% এবং খাদ্যের গুনাগুণ ও মূল্যের ওপর লাভলোকসান নির্ভর করে। সেজন্য খামার ব্যবস্থাপনায় খাদ্যের গুরুত্ব অনেক বেশি। কিন্তু বাসস্থানের পরিবেশ অনুকূল ও আরামদায়ক না হলে শুধু খাদ্য দিয়ে তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। তেমনি খামার রোগমুক্ত না হলেও তা লাভজনক হবে না। তাই খাদ্য সংগ্রহ করা সহজ কি না এবং খাদ্যের মূল্য ন্যায্য কি না তা বিবেচনা করে খামার স্থাপন করতে হবে।
লেয়ার মুরগির সংখ্যা অনুসারে প্রতিটি মুরগির জন্য দৈনিক ১১০-১২০ গ্রাম খাদ্যের প্রয়োজন হিসেবে কমপক্ষে ২ মাসের খাদ্য সংরক্ষণাগার তৈরি করতে হয়। প্রতিটি ব্রয়লার ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪ কেজি খাদ্য খাবে। তাই এ পরিমাণকে ব্রয়লারের মোট সংখ্যা দিয়ে গুণ করে যে ফল দাঁড়াবে সে পরিমাণ খাদ্য ধারণক্ষমতাসম্পন্ন গুদাম তৈরি করতে হবে। বয়সভেদে ব্রয়লারের জন্য ২.৫-১০ সেন্টিমিটার লম্বা খাদ্যের পাত্র বা ফিড ট্রাফের প্রয়োজন। সাধারণত ৫০টি বাচ্চার জন্য একটি খাদ্যের লম্বা ট্রে বা পাত্র এবং তদনুযায়ী পানির পাত্র প্রতি ১০০টি বাচ্চার জন্য প্রবহমাণ পানির ১টি ড্রিংকার প্রয়োজন হয়।
মুলধনের অবস্থা কী? নিজের টাকা আছে না কি এসব হিসাব করে ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হবে। মূলধনের উপর ভিত্তি করেই খামার স্থাপনের জমি, বাসস্থানের আকার ও সংখ্যা, প্রয়োজনীয় খাদ্যের পরিমাণ অনুসারে গুদামের ব্যবস্থা, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানির পাত্র, ব্র“ডিং যন্ত্রপাতি, খামার পরিচালনার লোকজনের জন্য অফিসসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।
খামার স্থাপন ও পরিচালনার হিসাব
খামার স্থাপন ও পরিচালনার খরচ দুইভাগে বিভক্ত। যথা-
ক) স্থায়ী খরচঃ স্থায়ী খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্ন্নরূপ-
খামারভুক্ত জমির মূল্যঃ
এলাকা অনুযায়ী প্রতি বিঘা জমির মুল্য কমবেশি হয়ে থাকে।
মুরগির গৃহায়ণ ব্যবস্থা বাবদ খরচঃ ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম বিভিন্ন রকমের হতে পারে। যথা-বাঁশ, টিন বা বিচালী, মাটির ঘর, ইট, সিমেন্ট বা পাকা দালান ঘর। ঘর তৈরির সাজসরঞ্জাম অনুযায়ী প্রতি বর্গফুট ঘর তৈরির খরচ, তা যেভাবেই ঘর তৈরি করা হোক না কেন প্রতি বর্গফুট হিসেবে খরচ ধরে ঘরের মোট খরচ বের করতে হবে।
ম্যানেজারের অফিস, ডিম/মাংস সংরক্ষণাগার, খাদ্য গুদাম, খাদ্য ছাড়া অন্যান্য জিনিসপত্র রাখার স্থান, শ্রমিকদের বিশ্রাম ঘর, অসুস্থ ও মৃত মুরগি রাখার জায়গা নির্মানবাবদ খরচ।
আসবাবপত্র ক্রয় বা তৈরি ও যানবাহন ক্রয়বাবদ খরচ, খাবার ও পানির পাত্রের দাম, ডিম পাড়ার বাক্সের দাম ও ডিম রাখার ঝুড়ি কেনার জন্য খরচ।
খ) আবর্তক বা চলমান বা চলতি খরচঃ আবর্তক খরচের খাতওয়ারী হিসেব নিম্নরূপ-
মুরগি সংক্রান্ত খরচঃ ডিমের ব্যবহার অনুযায়ী ডিমপাড়া মুরগির খামার দু’প্রকার। যথা-নিষিক্ত বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদন খামার এবং অনিষিক্ত বা খাবার ডিম উৎপাদন খামার। খাবার সাদা বা বাদামি খোসার ডিম বা বাচ্চা ফুটানোর ডিম উৎপাদনকারী মুরগি বা বাচ্চা কোথায় পাবেন, আপনি সেগুলো আনতে পারবেন কি না সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে হবে। নিষিক্ত ডিম বা ডিমের জন্য প্রজননক্ষম পুলেট ও ককরেলের মূল্য, অনিষিক্ত বা খাওয়ার ডিম উৎপাদনের জন্য উন্নতমানের হাইব্রিড পুলেটের মূল্য অথবা একদিন বয়সের ব্রয়লার বাচ্চা ক্রয়ের খরচ।
সুষম খাদ্যের মূল্যঃ
মাথাপিছু দৈনিক ১১০-১২০ গ্রাম হিসাবে।
লিটার কেনাবাবদ খরচ। খাঁচায় মুরগি পালন করলে মেঝে পাকা হলেই ভালো।
প্রতিষেধক টিকা এবং চিকিৎসায় ওষুধপত্রের মূল্য।
খামার পরিচালনায় জনবলের বেতনভাতা খরচ, ম্যানেজারের বার্ষিক বেতনভাতা, অফিস স্টাফের বার্ষিক বেতনভাতা ও শ্রমিকদের বার্ষিক বেতনভাতা।
পরিবহন ও যাতায়াত খরচ, বিভিন্ন কাজে ম্যানেজারের যাতায়াত খরচ এবং খাদ্য সংগ্রহ, ডিম বাজারজাতকরণ ও ডিমপাড়া শেষে মুরগি বিক্রির জন্য পরিবহন খরচ।
মুলধনের সুদঃ ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে মূলধনের উপর বার্ষিক সুদ।
ডিপ্রিসিয়েসন বা অপচয় খরচঃ জমিবাদে স্থায়ী খরচের অপচয়ের শতকরা হার ইত্যাদি যত খরচ হয় সব যোগ করে বার্ষিক খরচ/ মোট খরচের হিসেব রাখতে হবে।
  • মেরামত খরচ এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাবদ
  • এডভারটাইজিং বা বিজ্ঞাপন বাবদ ব্যয়
  • নষ্ট বা বাদ যাওয়া ডিমের মূল্য, ডিম বাছাই ও ছাঁটাই খরচ, যতগুলো ডিম বিক্রির অনুপযুক্ত হলো তার মূল্য।
  • অসুস্থ বা মৃত মুরগির মূল্য
  • খামার হতে সম্ভাব্য বার্ষিক আয়
ডিম বিক্রিঃ
লেয়ার খামারের ক্ষেত্রে বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে উৎপাদন ধরে বর্তমান বাজার দরে ডিমের মোট মূল্য।
ডিম পাড়া শেষে মুরগির মূল্যঃ
  • শতকরা ৮৮টি মুরগি সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকার ক্ষমতা আছে এ হিসেবে ডিম পাড়া শেষে বাজার দরে মোট মূল্য।
  • ব্রয়লার খামারের ক্ষেত্রে গড়ে ৮ সপ্তাহ পর পর মাংসের জন্য মুরগি বিক্রি।
  • প্রতিটি মুরগি থেকে বছরে প্রায় ৩০ কেজি বিষ্ঠা পাওয়া যেতে পারে। এভাবে হিসেব করে বর্তমান বাজার দরে মোট বিষ্ঠা বা সারের মূল্য।
  • অকেজো আসবাবপত্র বিক্রিবাবদ মোট আয়।
খামার হতে বার্ষিক কত টাকা লাভ হতে পারে তা নির্ধারণ করতে হবে। অনুমেয় অর্থ মুনাফা করতে হলে খামারজাত পণ্য হতে শতকরা ১০-১২ হারে টাকা হারে লাভে মোট কত টাকা আয় হতে পারে তা হিসেব করতে হবে। বর্তমান বাজার দরে কতগুলো ডিম বিক্রি করলে এ নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করা যায় তা হিসেব করতে হবে। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন-বার্ষিক গড়ে ৭০-৭৫% হারে খাবার ডিম বা অনিষিক্ত ডিম উৎপাদন এবং ৬০-৬৫% হারে বাচ্চা ফুটানো বা নিষিক্ত ডিম উৎপাদন ধরে, প্রতিটি ডিম গড়ে ২.৫০-৩.০০ টাকা হিসেবে বিক্রি করা গেলে এবং বছর শেষে ৮৮% মুরগি নীরোগ ও স্বাস্থ্যবান থাকলে আর অবশিষ্ট অনুৎপাদনশীল মুরগি বিক্রি করে ও উৎপাদন খরচ বাদে ১০-১২% লাভ থাকবে। এ জাতীয় হিসেব করে পরিকল্পনা করতে হবে। এভাবে মোট আয় থেকে মোট ব্যয় বাদ দিয়ে প্রকৃত লাভ-লোকসান নির্ধারণ করতে হবে। উপরোক্ত বিষয়সমূহ ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে খামার স্থাপনের পরিকল্পনা করা উচিত।
কেস স্টাডি:
পোলট্রি ফার্মে মাহমুদার সংসারে সুখের হাসি
বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে মেঝো মেয়ে মাহমুদা আক্তার। দিনমজুর বাবা কুদু মিয়ার আয়-রোজগার দিয়ে অনেক কষ্টে চলত তাদের ছয় সদস্যের পরিবারটি। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার থানাধীন বালিয়াপাড়া গ্রামে তাদের বসবাস। পড়ালেখা করেছেন গাঁয়ের স্কুলে মাত্র পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত। কুদু মিয়া বড় দুই মেয়েকে সাদামাঠাভাবে বিয়ে দিতে পারলেও মেঝো মেয়ে মাহমুদা আক্তারকে বিয়ে দিতে গিয়ে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়েছে। পিত্রালয় ও স্বামীগৃহ একই গ্রামে। লাল মিয়ার ছেলে মোবারকের সঙ্গে আট বছর আগে বিয়ে হয় মাহমুদার। দেখতে দেখতে চলে যায় বিয়ের আট বছর। অভাব যেন সংসারে আদাজল খেয়ে লেগে আছে। এরই মধ্যে সংসারে আসে ফারুক ও রিতা নামের দুটি সন্তান। এক বছর আগে মাহমুদার রিকশাচালক স্বামী মোবারক মিয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি মারা যাওয়ায় তার সংসারে ঢুকে অভাবের দানব। স্বামীর মৃত্যুর পর মাঝিবিহীন নৌকার মতো হয়ে পড়ে তার সংসার। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া তো দূরের কথা, তিন বেলা খাবার দেয়া সম্ভব ছিল না।   আধপেটা খেয়ে কাটিয়েছেন বহুদিন। লজ্জায় কারও কাছে কিছু বলতে পারেননি। কোনো উপায় না পেয়ে সন্তানদের নিয়ে ফিরে যায় বাবার বাড়িতে। ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাতে একপর্যায়ে উপজেলার ফকির বাড়িতে অবস্থিত ভাই ভাই স্পিনিং মিলে কাজ নেন তিনি। মাস কয়েক সেখানে কাজ করে রোজগার যা হতো তা দিয়েই কোনো মতে চলত তিন সদস্যের ছোট পরিবারটি। পরে বেশ কয়েক মাস স্থানীয় সরকারের আওতায় একটি প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করেছেন। ছেলেমেয়ের অসুখবিসুখ হলে চিকিৎসা করাতে পারত না। হঠাৎ একদিন লোক মারফত জানতে পারে যুব উন্নয়ন অধিদফতরে হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। পরে উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মাঠ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে তিনি হাঁস-মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ নিয়েও পুঁজির অভাবে খামার চালু করতে পারছিল না সে। অবশেষে বাবার দেয়া কানের দুল বিক্রি করে ৯ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২০১১ সালে শুরু করেন ব্রয়লার মুরগির খামার। বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ছোট ঘরে প্রথমে তিনি একদিন বয়সের ২০০টি ব্রয়লার বাচ্চা তার খামারে তোলেন। প্রথমবার মুরগি বিক্রি করে লাভও হয় ভালো। দ্বিতীয় দফায় তার খামারে ৩০০টি বাচ্চা তোলেন। হঠাৎ মুরগির খামারটিতে মড়ক লেগে মুরগিগুলো মারা যায়। আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে যান তিনি।  পরে তার খামারটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র পথটিও। নানাভাবে চেষ্টা করেও খামারটি পুনরায় চালু করতে পারছিলেন না। তিনি কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েন। পরে তিনি প্রশিকা (এনজিওথেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। সামান্য টাকায় খামারটি পুনরায় চালু করতে পারছিলেন না। তিনি যোগাযোগ করেন আড়াইহাজার সদর বাজারের রাফসান পোলট্রি ফিড নামে একটি খাবার বিক্রেতার সঙ্গে। ওই ব্যবসায়ী তাকে ব্যবসা চালিয়ে যেতে সাহায্য করেন। খাবারের দোকানের মালিক মাহবুব মিয়া জানান, মাহমুদা একজন পরিশ্রমী নারী। তাকে আমি আমার সাধ্যমতো সাহায্য করেছি। কঠোর পরিশ্রমই তাকে সফলতার মুখ দেখিয়েছে। অন্য আর ১০টি খামারি থেকে তিনি ভিন্ন। সফলতার দিক দিয়ে তিনি বেশ এগিয়েছেন। অল্পদিনের মধ্যে তিনি সবার কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন। মনোবল আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাকে এগিয়ে দিয়েছে। পোলট্রি ব্যবসা করে তার দিন বদলেছে। মাহমুদা বলেন, বিয়ের অল্প দিনের মধ্যে স্বামীকে হারিয়ে তিনি চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছিলেন। তিনি বলেন, ‘মুরগির খামার করে আমি আমার পোলা-মাইয়া লইয়া অহন অনেক সুখে আছি, আমার চেয়ে সুখী আর কেউ নেই।’ আমার দিন বদলে গেছে। ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াচ্ছি। তার চেয়ে সুখী ওই গাঁয়ে আর কেউ নেই বলে তিনি দাবি করেন। এ ছাড়াও তিনি বাড়ির পাশে একটি পুকুর ভাড়ায় নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ করছেন। সেখানেও তার মোটা অঙ্কের টাকা লাভ হচ্ছে। এক সময় অন্যের ঘরে থাকলেও টাকা জমিয়ে থাকার জন্য পিঁড়া পাকা করে দোচালা একটি টিনের ঘর দিয়েছি। ছেলেমেয়েদের ভালো খেতে দিতে পারছি। এখন এলাকায় বিভিন্ন খামরি আমার কাছ থেকে মুরগি পালন বিষয়ে নানা পরামর্শ নিতে আসে। পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধের ব্যাপারে এলাকায় সচেতনমূলক কাজ করছেন। এ ব্যবসার পাশাপাশি তিনি এলাকায় সেলাই কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বর্তমানে তার খামারে ব্রয়লার মুরগির সংখ্যা এক হাজার। ব্রয়লার মুরগির পাশাপাশি তিনি একটি লেয়ার খামার গড়ে তুলার চেষ্টা করছেন। তার সফলতা দেখে ওই গ্রামের অনেকেই পোলট্রি ব্যবসা করতে শুরু করছে।
মুরগির খামার বদলে দিল রাশিদার জীবন
নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোডের বাসিন্দা রাশিদা। বৈবাহিক জীবনে দুই সন্তানের জননী তিনি। কিন্তু রিকশাচালক স্বামী লুৎফর মিয়াকে তিন বেলা খাবার জোগান দিতে গিয়ে উন্নয়নের পথ থেকে অনেকটা ছিটকে পড়তে হয়। পাশের বাড়ির এক এনজিওকর্মীর পরামর্শে রাশিদা মুরগির ফার্ম দেওয়ার প্রস্তুতি নেন। স্বামীর সহযোগিতা নিয়ে এলাকার এক স্বর্ণের দোকান থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এ ফার্মের কাজ শুরু করেন। একে একে তিনি ৫টি শেডের মাধ্যমে মুরগি পালন করতে থাকেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তাদের যে লাভ হতো তা দিয়ে তাদের সংসার বেশ ভালোভাবে চলছিল। নিজের নামে ব্র্যাক ব্যাংক টাকা সঞ্চয়ও করছিলেন। কিন্তু ২০১১ সালে তার স্বামী লুৎফর সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পা হারান। এরপর স্বামীর সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হন রাশিদা। দুই সন্তান-স্বামীসহ চারজনের পরিবার একাই সামাল দিতে হয় রাশিদাকে। কিন্তু আর্থিক সঙ্কটই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও জীবনের এত বড় বিপর্যয় রাশিদাকে তার লক্ষ্য থেকে পিছপা করেনি। কোমর বেঁধে কাজ করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালান রাশিদা। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশার ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের আওতায় রাশিদা ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন, যা দিয়ে তার সংসারের অভাব ঘোচানোর স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি ২৫০টি মুরগির বাচ্চা ও বাচ্চার খাবার এবং ওষুধ কেনেন। এরপর রাশিদাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সর্বশেষ তিনি ২০১২ সালের এপ্রিলে আশা থেকে বাইশ হাজার টাকা এবং তাদের জমানো টাকা দিয়ে খামারের পরিধি বাড়ান। এখন তার তিনটি শেডে বিভিন্ন সাইজের ১৬০০ মুরগি আছে। তাদের সংসারে এখন আর কোনো আভাব নেই। ছেলেমেয়ে, স্বামী নিয়ে তার সংসার এখন ভালোই চলছে। রাশিদার দেখাদেখি অনেকে ঋণ নিয়ে নার্সারি, হাঁস-ুরগি পালন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।


সংগৃহীত ও সংকলিত
 

তথ্য: 
তথ্য আপা প্রকল্প

কবুতর পালন

কবুতর পালন

ভুমিকা
গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর খুবই জনপ্রিয়। গ্রাম-গঞ্জ এমনকি শহরের বাসা-বাড়িতে অনেকে কবুতর পালন করে। কম পরিশ্রম ও অল্প খরচে কবুতর পালন করে পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব। অনেক বাড়িতেই হাঁস-মুরগীর মতো কবুতরও পালন করা হয়। পরিবারের গৃহকর্ত্রী ও স্কুল কলেজ যাওয়া ছেলে-মেয়েরা কবুতর পালনের কাজ করে থাকে।  বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাঠের বাক্সে পুরনো পদ্ধতিতে কবুতর পালন করা যায়। তবে ইদানিং বাজারে বাচ্চা কবুতরের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় উন্নত পদ্ধতিতে কবুতর পালনের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নত পদ্ধতিতে কবুতর পালন করলে আর্থিক দিক দিয়েও লাভবান হওয়া সম্ভব।
বাজার সম্ভাবনা
কবুতরের মাংস খেলে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং খেতেও খুব সুস্বাদু। এর বেশ বাজার চাহিদা রয়েছে। তাছাড়া অনেকে সখের বশে বাড়িতে পালার জন্যও কবুতর ক্রয় করে।
প্রয়োজনীয় মূলধন
কবুতর পালন শুরু করার জন্য ২০০০০ থেকে ৩০০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারী ও বেসরকারী ঋণদানকারী ব্যাংক (সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (আশা, গ্রামীণ ব্যাংক, ব্রাক, প্রশিকা) -এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি (NGO) প্রতিষ্ঠান শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।
ব্যাংকঃ
সোনালী ব্যাংকঃ http://www.sonalibank.com.bd/
জনতা ব্যাংকঃ http://www.janatabank-bd.com/
রূপালী ব্যাংকঃ http://www.rupalibank.org/rblnew/
অগ্রণী ব্যাংকঃ http://www.agranibank.org/
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকঃ www.krishibank.org.bd/
এনজিও
আশাঃ http://asa.org.bd/
গ্রামীণ ব্যাংকঃ http://www.grameen-info.org/
ব্রাকঃ http://www.brac.net/
প্রশিকাঃ http://www.proshika.org/
কবুতর পালনের লাভের হিসাব
  • ১০ জোড়া কবুতরের জন্য ১টি ঘর বানাতে খাবার পাত্র, পানির পাত্রসহ খরচ হবে আনুমানিক ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০টাকা।
  • প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ জোড়া কবুতরের ক্রয়মূল্য প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। প্রয়োজনমত যে কোন সময় ক্রয়মূল্যেই এসব কবুতর বিক্রয় করা যাবে।
  • ১০ জোড়া কুবতর থেকে প্রতিমাসে ৮ থেকে ৯ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে। এগুলো বিক্রি করে প্রতিমাসে গড়েত৬০০ থেকে ৮০০ টাকা আয় করা সম্ভব।
কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা

কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত তথ্য:

কবুতরের জাত
বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতর রয়েছে। আমাদের দেশে ২০ টিও অধিক জাতের কবুতর আছে বলে জানা যায়। নিম্নে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
১। গোলা
এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনাআপনি এখানে এসে বসবাস করে। এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয়।
২। গোলী
গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির। এ জাতের কবুতর পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এদের লেজের নীচে পাখার পালক থাকে। ঠোঁট ছোট হয় এবং পায়ে লোম থাকে না। এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত।
৩। টাম্বলার
এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজী খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। আমাদের দশে এই জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।
৪। লোটান
লোটন কবুতরকে রোলিং (rolling) কবুতরও বলা হয়। গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজী খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজী খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত।
৫। লাহোরী
আমাদের দেশে এই কবুতরটি শিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল লাহোর। এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙ্গীন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায়।
৬। কিং
কিং জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব বাচ্চা উৎপাদনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং। এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।
৭। ফ্যানটেল
এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর। ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে। এদের লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে। পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় এবং দেশ বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৮। জ্যাকোবিন
এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায়। এদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারত বলেই ধারণা করা হয়। এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের হয়। এদের দেহ বেশ লম্বাটে। চোখ মুক্তার মত সাদা হয়।
৯। মুকি
এ জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মত পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে। মুকি জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয়। এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। এ জাতের কবুতরের মাথা সাদা, বুক খুব একটা চওড়া নয় তবে উঁচু ও বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে না।
কবুতরের প্রজনন, ডিম উৎপাদন ও ডিম ফুটানো
হাঁস-মুরগির মতো যে কোনো মর্দা কবুতর মাদী কবুতরের সাথে সহজে জোড়া বাঁধে না। এদেরকে এক সাথে এক সপ্তাহ রাখলে জোড়া বাঁধে। মুরগীর ন্যায় কবুতরের জননতন্ত্রে ডিম উৎপন্ন হয়। তবে ডিম্বাশয়ে একসাথে সাধারণত মাত্র দু'টি ফলিকুল তৈরি হয়।
এ কারণে প্রতিটি মাদী কবুতর দু'টি ডিম পাড়ে। ডিম পাড়ার ৪০-৪৪ ঘন্টা পূর্বে ডিম্ব স্খলন হয় এবং ডিম পাড়ার কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা পূর্বে তা নিষিক্ত হয়। অর্থাৎ যে ১৬-২০ ঘন্টা পর্যন্ত ডিম ডিম্বনালীতে থাকে সে সময়ে তা নিষিক্ত হয়ে থাকে।
ডিম পাড়ার পর থেকে মর্দা ও মাদী উভয় কবুতর পর্যায়ক্রমে ডিমে তা দিতে শুরু করে। মাদী কবুতর প্রায় বিকেল থেকে শুরু করে পরের দিন সকাল পর্যন্ত ডিমে তা দেয় এবং বাকী সময়টুকু অর্থাৎ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মর্দা কবুতর তা দিয়ে থাকে। তা দেয়ার পঞ্চম দিনেই ডিম পরীক্ষা করে উর্বর বা অনুর্বর ডিম চেনা যায়। বাতির সামনে ধরলে উর্বর ডিমের ভিতর রক্তনালী দেখা যায়। কিন্তু অনুর্বর ডিমের ক্ষেত্রে ডিমের ভিতর স্বচ্ছ দেখাবে। সাধারণত ডিম পাড়ার ১৭-১৮ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এভাবে একটি মাদী কবুতর সাধারণত ১২ মাসে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। জন্মের প্রথম দিন থেকে ২৬ দিন বয়স পর্যন্ত কবুতরের বাচ্চার ক্রমবর্ধমান অবস্থা থাকে। প্রথমে সারা দেহ হলুদ পাতলা বর্ণের লোম দ্বারা আবৃত থাকে।
এই সময় নাক ও কানের ছিদ্র বেশ বড় দেখায়। প্রায় ৪-৫ দিন পর বাচ্চার চোখ খোলে বা ফুটে। পনের দিনে সমস্ত শরীর পালকে ছেয়ে যায়। প্রায় ১৯-২০ দিনে দু'টো ডানা এবং লেজ পূর্ণতা লাভ করে ও ঠোঁট স্বাভাবিক হয়। এই ভাবে ২৬-২৮ দিনে কবুতরের বাচ্চা পূর্ণতা লাভ করে। কবুতর সাধারণত ২০-৩০ বছর পর্যন্ত বাঁচে।

পিজিয়ন মিল্ক
কবুতরের খাদ্যথলিতে পিজিয়ন মিল্ক উৎপাদিত হয়। এই খাদ্য থলিতে দু'টি অংশ বা লোব থাকে। ডিমে তা দিতে বসার প্রায় অষ্টমদিন থেকে "পিজিয়ন মিল্ক" উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। এন্টিরিত্তর পিটুইটারী গ্রন্থির প্রোল্যাকটিন (Prolactin) হরমোনের প্রভাবে এই ' পিজিয়ন মিল্ক' উৎপন্ন হয়। এ কারণে কবুতর ছানার জন্য কোনো বাড়তি খাবারের প্রয়োজন হয় না। কারণ প্রায় ৭ দিন পর্যন্ত ছানা তার মাতা-পিতার কাছ থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত খাবার পেয়ে থাকে। এটিকে পিজিয়ন মিল্ক বা কবুতরের দুধ বলা হয়। পিজিয়ন মিল্ক হলো পৌষ্টিক স্তরের কোষের মধ্যে চর্বির গুটিকা (globules of fat) যা পিতা মাতা উভয়ের খাদ্য থলিতে যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ হয়। পিজিয়ন মিল্ক কবুতর ছানার জন্য একটি আদর্শ খাবার। এতে ৭০% পানি, ১৭.৫% আমিষ, ১০% চর্বি এবং ২.৫% বিভিন্ন খনিজ পদার্থ থাকে। মাতাপিতা উভয় কবুতরের খাদ্য থলির অভ্যন্তরীণ আবরণ থেকে পিজিয়ন মিল্ক উৎপন্ন হয়। কবুতরের জিহ্বা লম্বা ও সরু। মুখ গহ্বরের নীচের অংশ বেশ প্রশস্ত হয় যা ছানাকে খাওয়ানোর উপযোগী। মাতা ও পিতা কবুতর ছানার মুখের মধ্যে মুখ প্রবেশ করিয়ে খাবার সরাসরি অন্ননালীতে পৌছে দেয়।
কবুতরের ঘর
আমাদের দেশে বিশেষত গ্রামে টিন বা খড়ের চালা ঘরের কার্ণিশে মাটির হাড়ি অথবা টিন বেঁধে রেখে কবুতর পালনের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কাঠের তৈরি ছোট ছোট খোপ তৈরি করেও কবুতর পালা হয়ে থাকে। মজার ব্যাপার হলে, কয়েক জোড়া কবুতরের ঘর করে এক জোড়া কবুতর পালন করলে কয়েক দিনের মধ্যে বাকী ঘরগুলোতে নতুন জোড়া কবুতর এসে বাসা বাঁধে। কবুতর পোষা খুব সহজ এবং লাভজনক তা বলাই বাহুল্য। অল্প-পরিসরে যা বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালনের জন্য অবশ্যই সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয়। নিম্নে কবুতরের ঘর বা খোপ তৈরির বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ আলোচনা করা হলো।
স্থান নির্বাচনঃ কবুতরের খামারের জন্য উঁচু ও শুষ্ক সমতল ভূমি থাকা প্রয়োজন।
ঘরের উচ্চতাঃ কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর, বেজী ইত্যাদি যেন কবুতরের ঘর নাগালে না পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে ঘর উঁচু করতে হয়। এ উদ্দেশ্যে কাঠ বা বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার উপর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে।
ঘরের পরিসরঃ প্রতি এক জোড়া কবুতরের জন্য একটি ঘর থাকা প্রয়োজন। এক জোড়া কবুতর যাতে ঘরের ভিতর স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরতে ফিরতে পারে তা লক্ষ্য রেখে ঘর নির্মাণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য সম্মত ব্যবস্থাঃ কবুতরের ঘর বা খোপ এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন সেখানে পোকা-মাকড়, কৃমি, জীবাণু ইত্যাদির উপদ্রব কম থাকে এবং ঘর সহজেই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা যায়।
সূর্যালোকঃ ঘরে যাতে সূর্যের পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ সূর্যের আলো যেমন পাখির দেহে ভিটামিন-ডি সৃষ্টিতে সাহায্যে করে তেমনি পরিবেশও জীবাণুমুক্ত রাখে।
বায়ু চলাচলঃ কবুতরের ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ দূষিত বাতাস বা পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাবে পাখির স্বাস্থ্যহানি ঘটতে পারে।
কবুতরের খাদ্য
হাঁস-মুরগির ন্যায় কবুতরের খাদ্যে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, খনিজ ও ভিটামিন প্রভৃতি থাকা প্রয়োজন। কবুতর তার দেহের প্রয়োজন এবং আকার অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। প্রতিটি কবুতর দৈনিক প্রায় ৩০-৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাবার গ্রহণ করে থাকে। কবুতর প্রধানত গম, মটর, খেশারী, ভুট্টা, সরিষা, যব, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি শস্যদানা খেয়ে থাকে। মুক্ত অবস্থায় পালিত কবুতরের জন্য সকাল-বিকাল মাথা পিছু আধ মুঠ শস্যদানা নির্দিষ্ট পাত্রে
খাদ্য উপাদান
পরিমাণ (%)
ভুট্টা
৩৫
মটর
২০
গম
৩০
ঝিনুকের গুঁড়া/চুনাপাথর চূর্ণ/অস্থিচূর্ণ
০৭
ভিটামিন/এমাইনো এসিড প্রিমিক্স
০৭
লবণ
০১

মোট = ১০০
রেখে দিলে প্রয়োজন মত তারা খেতে পারবে। বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর উৎপাদনের জন্য নিম্নে প্রদত্ত খাদ্য মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম।
কবুতরের খাদ্য তালিকা
এই সাথে কবুতরের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। এক পাত্রে কবুতরের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী খাবার ও অন্য পাত্রে প্রয়োজন মত পরিষ্কার ও বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি রাখতে হবে।
কবুতরের শারীরবৃত্তিক তথ্যাদি
* দেহের তাপমাত্রা = ৩৮.৮-৪০০ সে
* দৈহিক ওজন = (ক) হালকা জাতঃ ৪০০-৪৫০ গ্রাম
(খ) ভারী জাতঃ ৪৫০-৫০০ গ্রাম
* পানি পান = (ক) শীতকালঃ ৩০-৬০ মিলি প্রতিদিন
(খ) গ্রীষ্মকালঃ ৬০-১০০ মিলি প্রতিদিন
* খাদ্য গ্রহণ = ৩০-৬০ গ্রাম প্রতিদিন (গড়)
* ডিম ফুটানোর সময়কাল = ১৭-১৮ দিন।
কবুতরের গুরুত্বপূর্ণ রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ
রোগের নাম
কারণ
লক্ষণ
চিকিৎসা
প্রতিরোধ
সালমেনেলোসিস/ প্যারাটইফোসিস
সালমোনেলা টাইফিমিউরিয়াম
শ্লেষ্মাযুক্ত আঠালো, ফেনা ও দুর্গন্ধযুক্ত ডায়রিয়া দেখা দেয়। দেহ ক্রমাগত শুকিয়ে যায়। ভারসাম্য হীনতা ও পক্ষাঘাত পরিলক্ষিত হয়।
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।
পাসটিউরেলা মালটোসিডা
ডাইরিয়া, জ্বর (৮২-৮৩০ ঈ) কোন লক্ষণ ব্যতীত ২৪-৪৮ ঘন্টা মধ্যে কবুতর মারা যায়
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।
করাইজা অথবা আউল'স হেড
হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা
সর্দি, চোখের পাতাদ্বয় ফুলে প্যাঁচার মাথার ন্যায় দেখায়, অক্ষিঝিলি্ল প্রদাহের ফলে চোখ দিয়ে (muco-purulent) পদার্থ নির্গত হয়।
এন্টিবায়োটিক সেনসিটিভিটি টেস্ট করে সঠিক এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হবে। এই সাথে ভিটামিনস ও মিনারেলস খাওয়াতে হবে।
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।
মাইকোপ্লাজমোসিস
মাইকোপ্লাজমা কলাম্বিনাম
সর্দি, চোখ ও নাক দিয়ে প্রথমে পানি এবং পরে muco-purulent পদার্থ নির্গত হয়। মুখ ও কন্ঠ অত্যধিক প্রদাহে স্ফীত থাকে এবং দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়। শ্বাসকষ্ট হয়।
টিয়ামুলিন, টাইলোসিন এনরোফ্লুক্সসিন, স্পাইরামাইসিন, লিনকোমাইসিন গ্রুপের ঔষধ
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।
ক্ল্যামাইডিওসিস অথবা অরনিথোসিস
ক্ল্যামাইডিয়া সিটাসি
চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে, স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং রোগ ভোগের পর মরা যায়
ক্লোরটেট্রাসাইক্লিন, টাইলোসিন, লিনকোমাইসিন, স্পাইরামাইসিন ইত্যাদি
১। জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
২। টিকা প্রদান করতে হবে।
নিউক্যাসল অথবা প্যারামিক্সো ভাইরাস-১
প্যারামিক্সো ভাইরাস টাইপ-১
সবুজ রংয়ের ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট, মুখ হাঁ করে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে। ভারসাম্যহীনতা, মাথা ঘোরা, পাখা ও পায়ের পক্ষাঘাত ইত্যাদি।
এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন, ইমিউনো স্টিমুলেটর
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
* টিকা প্রদান করতে হবে।
ডিফথেরো স্মল পক্স (বসন্ত রোগ)
বোরেলিয়া কলাম্বরী ভাইরাস
পালকহীন ত্বক বিশেষ করে চোখ, ঠোঁটের চারপাশে এবং পায়ে ক্ষত বা পক্স দেখা যায়
এন্টিবায়োটিক, এমাইনো এসিড, ভিটামিন এ এবং সি, ইমিউনো স্টিমুলেটর, টপিক্যাল আইওডিন
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
পরজীবী রোগ
আইমেরিয়া, এসকারিস, ক্যাপিলারিয়া, ট্রাইকোমোনা
দুর্বলতা, খাদ্য গ্রহণে অনীহা, শুকিয়ে যাওয়া, ডাইরিয়া (মলে রক্ত থাকে ককসিডিয়া), পুষ্টিহীনতা ও অবশেষে মৃত্যু ঘটে।
কৃমিনাশক, ভিটামিন ও মিনারেল প্রিমিক্স, এমাইনো এসিড
* জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে।
অপুষ্টিজনিত ও বিপাকীয় রোগসমূহ
ভিটামিন এ এর ঘাটতি
দেহে ক্ষত হয়, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় এবং অক্ষিঝিলি্লর প্রদাহ দেখা দেয়, ক্ষুধা কমে যায়, দৈহিক বৃদ্ধি ও পালকের গঠণ ব্যাহত হয়, উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়
২০০ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন
নিয়মিত ভিটামিন, প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান অথবা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান করতে হবে।
ভিটামিন ডি এর ঘাটতি
অস্থি নরম ও বাঁকা হয়ে যায়, ডিম উৎপাদন ও হ্যাচাবিলিটি হ্রাস পায়, ডিমের খোলস পাতলা হয়।
৪৫ আই ইউ প্রতিদিনের প্রয়োজন
ভিটামিন ডি ও মিনারেল প্রিমিক্স প্রদান, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার (কডলিভার অয়েল, ফিস মিল) প্রদান করতে হবে।
ভিটামিন ই
এনসেফালোম্যালাশিয়া রোগ হয়, পক্ষাঘাতের ফলে চলতে অসঙ্গতি দেখা দেয়। বুক ও পেটের নীচে তরল পদার্থ জমে, ইডিমা হয়। ডিমের উর্বরতা কমে যায়।
১ মিগ্রা
সেলিনিয়াম সহ ভিটামিন ই প্রদান করতে হবে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার (শস্য দানা, গম, চাউলে কুড়া, শুটকি মাছ) খাওয়াতে হবে।
ভিটামিন কে
রক্তক্ষরণের কারণে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।

------
ভিটামিন কে প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (সবুজ শাকসবজি ও মাছের গুঁড়া)।
ভিটামিন বি১
পা, ডানা ও ঘাড়ে পক্ষাঘাত হয়। ঘাড়ের পক্ষাঘাতের ফলে ঘাড় পেছন দিকে করে আকাশের দিকে মুখ করে থাকে, চলনে অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়।
০.১ মিগ্রা
ভিটামিন বি১ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান (চাউলের কুড়া, গমের গুঁড়া, শাক সবজি)
ভিটামিন বি২
ছানার পা পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়। পরে নখ বা আঙ্গুল বাঁকা হয়ে যায়। ছানার দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
০.১২ মিগ্র
ভিটামিন বি২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (সবুজ শাক সবজি, ছোলা, খৈল, আলফা-আলফা, ঈষ্ট)
ভিটামিন বি৬
ক্ষুধামান্দ্য দেখা দেয়। ছানার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। প্যারালাইসিস ও পেরোসিস হতে পারে।
০.১২ মিগ্রা
ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল (শস্য, মাছের গুঁড়া, আলফা-আলফা, ঈষ্ট ইত্যাদি)
ভিটামিন বি১২
বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও রক্তশূন্যতা দেখা দেয় ডিমের উর্বরতা হ্রাস পায়।
০.২৪ মিগ্রা
ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও মিনারেল প্রদান। ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, মাংস ফিসমিল ইত্যাদি)
ফলিক এসিড
রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও পালক কম গজায়।
০.০১৪ মিগ্রা
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও সাথে ম্যানগানিজ (সহ) প্রদান করতে হবে। ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য প্রদান (যকৃত, ঈষ্ট)
ম্যানটোথেনিক এসিড
বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও চর্ম রোগ হয়। পা ও চোখের চারিপাশে নেক্রোসিস হয়। ডিমের উর্বরতা হ্রাস।
০.৩৬ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক এসিড সমৃদ্ধ ভিটামিন প্রদান (চীনাবাদাম, আখের গুড়, ঈষ্ট, চাউলের কুড়া, গমের ভূষি ইত্যাদি)
বায়োটিন
পেরোসিস, ডিমের উর্বরতা হ্রাস ও চর্ম প্রদাহ দেখা দেয়।
০.০০২ মিগ্রা
বায়োটিন সমৃদ্ধ ভিটামিন ও খাদ্য প্রদান।
খনিজ পদার্থ (সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়োডিন, ম্যানগানিজ, কপার এন্ড কোবাল্ট, আয়রন
হাড় গঠন ও বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ডিমের খোসা নরম হয়। রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। পেরোসিস ও প্যারালাইসিস হয়।


-----
পাখিকে নিয়মিত ভিটামিন, খনিজ সমৃদ্ধ প্রিমিক্স ও খাদ্য প্রদান করতে হবে।

এমাইনো এসিড
আমিষ বিভিন্ন প্রকার এমাইনো এসিড সরবরাহ করে যা দেহ গঠনের জন্য অত্যাবশ্যক। যে সব এমাইনো এসিড পাখির দেহে সংশ্লেষণ হয় না তাকে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিড বলে। সুতরাং পাখিকে এমাইনো এসিড সমৃদ্ধ খাদ্য (শুটকি মাছের গুড়া, সরিষা, তিল ও চীনাবাদামের খৈল) সরবরাহ করতে হবে।
অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডের নাম
মথিওনিন
লাইসিন
ভ্যালিন
লউসি
আইসো-লিউসিন
ফিনাইল অ্যালানিন
ট্রিপটোফেন
আরজিন
হিসটিডিন
ফ্রিওনিন
প্রতিদিনের প্রয়োজন
০.০৯ গ্রাম
০.১৮ গ্রাম
০.০৬ গ্রাম
০.০৯ গ্রাম
০.০৫৫ গ্রাম
০.০৯ গ্রাম
০.০২ গ্রাম
কবুতর পালনে প্রশিক্ষণ
কবুতর পালনের ক্ষেত্রে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ কারো কাছ থেকে কবুতর পালনের বিস্তারিত জেনে নিতে হবে। কবুতর পালন সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে পশু কর্মকর্তা অথবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে পশু পালন বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
 প্রশিক্ষন প্রদানকারী সংস্থা:
ব্রাকঃ http://www.brac.net/
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরঃ www.dyd.gov.bd
বিসিকঃ http://www.bscic.gov.bd/
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরঃ http://www.dwa.gov.bd/
কবুতরের মাংস বেশ জনপ্রিয়। কবুতর পালনে ঝামেলা কম এবং টাকাও কম খরচ হয়। বাড়িতে বসে অন্য কাজের পাশাপাশি কবুতর পালন করে তাই বাড়তি অর্থ উপার্জন করা যায়।
কিছু উল্লেখযোগ্য কেস স্টাডি
সখের বশে কবুতর পালন,দূর হচ্ছে বেকারত্ব
শহরের অনেক ফ্ল্যাট বাড়িতে এখন চলছে কবুতর পালন। অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন শুরু করলেও এখন তা খুলে দিচ্ছে আর্থিক সমৃদ্ধির পথ। অতিপরিচিত এই পাখি পালন আর্থিকভাবে সাবলম্বী করেছে অনেককেই।
আগের দিনে বার্তা পাঠানোর জন্য ব্যবহার করা হতো কবুতর। আধুনিক সময়ে তা ইতিহাস হলেও এখনো মানুষের কাছে প্রিয় পাখির কদর হারায়নি পোষ মানা সেই কবুতর। শহুরে নাগরিক জীবনের অনকে ব্যস্ততার মধ্যেও অনেকে এখন পালন করছেন মনোহর পাখিটি। কেউ বারান্দায় কেউবা বাড়ির ছাদে শুরু করছেন কবুতর পালন।
নিছক শখের বশে কবুতর পালন শুরু হলেও অনেকের জন্য তা খুলে দিয়েছে সম্ভাবনাময় ব্যবসার দ্বার। বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর কেনা-বেচার মাধ্যমে তৈরী হচ্ছে কর্মসংস্থান। কেউ কেউ আবার নেমে পড়ছেন কবুতর ওড়ানোর প্রতিযোগিতায়। কবুতরকেন্দ্রীক ব্যতিক্রমী এই ব্যবসার মাধ্যমে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন এর সঙ্গে জড়িতরা। তবে এর জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

সংগৃহীত ও সংকলিত
 
তথ্য: 
তথ্য আপা প্রকল্প

Sunday 6 August 2017

নতুন খামার শুরু করার আগে অবশ্য করণীয়/খামার করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে

নতুন খামার শুরু করার আগে অবশ্য করণীয় :
খামার করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে :
Image may contain: outdoor
১) মন থেকে উত্তর বের করুন গরুর প্রতি অথবা জীবিত প্রাণীর প্রতি আপনার ভালোবাসা আছে কিনা। মাটি ও মানুষের প্রতি আপনি ভিতর থেকে আকর্ষণ অনুভব করেন কিনা। শুধুমাত্র লাভের আশায় কখনো খামার করবেন না। জীবিত প্রাণীর প্রতি মমতা না থাকলে থাকলে আপনি কোনোদিনই খামারী হতে পারবেন না।
২) খামার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একবার ভালো করে ভাবুন, আবার ভাবুন, এরপর আবার। এরপর একটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনি যেটা শুরু করতে চাইছেন সেটার ফলাফল কেমন হতে পারে ভালো করে চিন্তা করুন। অন্যের কথায় কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না। নিজের বিবেকবুদ্ধি ও মেধা ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন শুধুমাত্র ফেইসবুক এর উপর নির্ভর করে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। গরু পালন মোবাইল বা কম্পিউটারে যত সহজ, বাস্তবে এতো সহজ না।
৩) চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে খামারে অভিজ্ঞ কিছু সৎ মানুষ এর সাথে কথা বলুন। আপনার পরিকল্পনা তাদের সামনে উপস্থাপন করুন এবং তাদের মতামত নিন। সবার মতামত নোট করুন এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে আপনার পরিকল্পনা পরিবর্তন করুন। তাদের কাছ থেকে খামার করার সুবিধা অসুবিধা গুলো ভালো করে জেনে নিন। কোনো প্রকার তাড়াহুড়া করবেন না।
৪) আমাদের "পল্লী ডেইরি ফারমার্স" ফোরাম এর নতুন পুরাতন সকল পোস্ট ও কমেন্ট মন দিয়ে পড়েন এবং সেভ করে রাখেন। এখানে অনেক অভিজ্ঞ ভাইদের জ্ঞান ভিত্তিক ও বিষয় ভিত্তিক লেখা এবং ব্যবহারিক মতামত রয়েছে, যা উনারা নিজেদের শ্রম আর মেধা দিয়ে অর্জন করেছেন। কিছু বুঝতে সমস্যা হলে এডমিন সহ অভিজ্ঞ খামারি ভাইদের সাথে কথা বলুন। আপনার সমস্যা সুন্দর করে লিখে পোস্ট করেন। অভিজ্ঞ ও সিনিয়র খামারিদের সন্মান প্রদান করুন এবং তাদের মতামতের এবং সাহায্যের জন্য তাদের সাথে বিনয়ী ব্যবহার করুন। আপনি তাদের সন্মান করলে, আপনিও সমান সন্মান তাদের কাছ থেকে পাবেন। আমাদের ফোরাম এর একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদেশ্য রয়েছে। "পল্লী ডেইরি ফারমার্স" সকল সদস্যকে এবং তাদের মতামতকে সমান গুরুত্ব দেয় ; তবে নতুন, ক্ষুদ্র এবং সুবিধাবঞ্চিত খামারিদের সুবিধাপ্রদান এবং 'নিরাপদ খাদ্য' স্লোগান সামনে রেখে কাজ করে। ফোরাম এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে অথবা ফোরাম এর সামগ্রিক স্বার্থবিরোধী যেকোনো কর্মকান্ড থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৫) চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নেয়ার আগে আপনার এলাকার দুধের মূল্য কত, গো-খাদ্যের মূল্য কত, কোথায় ঘাস লাগাবেন, কোথায় দুধ বিক্রি করবেন,কোথা থেকে গরু ক্রয় করবেন, কোথায় গরু বিক্রি করবেন, এরকম সব গুলো প্রশ্নের উত্তর মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে খুঁজে বের করুন। আয় ব্যয়ের একটা সম্ভাব্য হিসাব বের করুন। শুধু মাত্র খোলা বাজারের উপর নির্ভর করে বড় বা বেশি গরুর ডেইরি খামার না করাই ভালো। ২/১ দিন দুধ খোলা বাজারে বিক্রি না হলে বা কোম্পানী সংগ্রহ না করলে দুধ নিয়ে বিকল্প কি করবেন চিন্তা করুন।
৬) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে কমপক্ষে ৩ জন সফল খামারি এবং ৩ জন ব্যর্থ খামারির সাথে কথা বলুন। যে সফল হয়েছে সে কেন সফল হয়েছে এবং যে ব্যর্থ হয়েছে সে কেন ব্যর্থ হয়েছে, আপনি নিজের মেধা দিয়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন। তাদের প্রত্যেকের খামার পরিচালনা মন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। সফল মানুষ কেন সফল হয়েছে এবং ব্যর্থ খামারি কেন ব্যর্থ হয়েছে তাদের খামার পরিচালনা থেকে উত্তর খুঁজে বের করুন। যে সফল হয়েছে, সে তার সফলতার জন্য যা যা করেছে আপনি সেই কাজ গুলো করতে অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত কিনা চিন্তা করে দেখুন।
খামার করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পরে :
৭) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার পর খামার করার পূর্বে অবশ্যই খামারের উপর সরকারি ট্রেনিং নিয়ে শুরু করবেন। ট্রেনিং মনোযোগ দিয়ে করুন এবং সমস্ত ট্রেনিং মেটেরিয়াল মনোযোগ দিয়ে পড়ুন এবং সংরক্ষণ করুন।
৮) নিকটস্থ খামার ভিজিট করেন। যতটা সম্ভব বেশি বেশি খামার ভিসিট করুন। অনুমতি নিয়ে সেচ্ছাসেবক হিসাবে নিজের হাতে অন্যের খামারে কিছু দিন কাজ করুন। মনোযোগ দিয়ে দেখেন তারা কি ভাবে খামার পরিচালনা করে। কি ভাবে গরুর পরিচর্যা করে।
৯) শেড এর ডিসাইন ঠিক করার আগে একাধিক অভিজ্ঞ খামারীকে আপনার শেড দেখিয়ে নিন এবং কোনো ভুল ত্রুটি থাকলে সংশোধন করে নিন। গরুর জন্য যতটা বেশি সম্ভব আরামদায়ক ঘর তৈরী করুন। সম্ভব হলে গরুর বিচরনের জন্য কিছু খোলা জায়গা রাখুন।
১০) ঘাস লাগানোর জায়গা ঠিক করুন এবং আপনার নির্ধারিত জায়গাতে কোন ঘাস ভালো হবে সেটা ঠিক করে ঘাস লাগানোর ব্যবস্থা করেন এবং খড় কিভাবে জোগাড় করবেন সেটাও ঠিক করেন। ধান লাগানোর সময় আপনি অ্যাডভান্স খড়ের টাকা দিয়ে রাখলে কম মূল্যে খড় এর ব্যবস্থা করতে পারবেন।
১১) নিকটস্থ থানা প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করুন এবং কি কি সুবিধা সেখান থেকে পাবেন তার একটা তালিকা তৈরী করেন। যে সুবিধা গুলো সেখান থেকে পাওয়া যাবেনা সেগুলো কিভাবে ব্যবস্থা করবেন চিন্তা করে বের করুন। যাদের উপর আপনি নির্ভর করবেন তাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখুন এবং ভালো সম্পর্ক তৈরী করুন।
১২) প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে শুরু করেন। এতে ঝুঁকি কম। শুরুটা ফ্যাটেনিং দিয়ে করতে পারেন। তাহলে অল্পদিনে লাভ সহ মূলধন রিটার্ন পাবেন। ফ্যাটেনিং এর সাথে ২টি গাভিও রাখতে পারেন যাতে খামারের খরচ বাহির থেকে না আনতে হয় এবং একই সাথে অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করতে পারেন।
১৩) গরু কেনার আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গরুর হাটে যাতায়ত করুন এবং গরুর দাম পর্যবেক্ষণ করেন। নিজে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু কেনার চেষ্টা করুন। ফেসবুকে উচ্চমূল্য দেখে গরু কিনবেন না। বাজার দেখে বুঝে, যাচাই বাছাই করে গরু কিনবেন। প্রথমেই খুব বেশি উন্নত জাতের গরু কিনবেন না।যে গরু যত বেশি দুধ দেবে সেটা পালন করাও তত কঠিন হবে। মনে রাখবেন ক্রয়মূল্যের উপর নির্ভর করবে আপনার লাভ।
১৪) প্রতিদিনের একটা কার্যতালিকা তৈরী করুন। প্রতিদিন যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন সেগুলো নোট রাখুন। এই নোট আপনাকে ভবিষ্যতে একই ধরণের সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। রোগ বালাই এর জন্য যে ওষুধ গুলো ডাক্তার দেবে সেই ওষুধ এর নির্দেশিকা মন দিয়ে পড়ুন এবং সংগ্রহ করুন। কিছু জরুরি ওষুধ সব সময় আপনার হাতের কাছে রাখুন।কিছু ভেষজ ঔষুধি গাছ আপনার খামারে চাষ করুন যেগুলো আপনাকে অল্প খরচে গরুর চিকিৎসায় সাহায্য করবে। তবে অবশ্যই ব্যবহার প্রণালী জেনে প্রয়োগ করবেন।
১৫)একটা খাদ্য তালিকা সংগ্রহ করুন অভিজ্ঞ খামারিদের কাছ থেকে। সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন খামারের খরচ কি ভাবে কমাতে পারেন। আপনার খরচ যত কম হবে আপনার লাভ তত বেশি হবে হবে। বাজারের প্রচলিত ফিডের উপর নির্ভরশীলতা কমান। নিজে ভাল রেশন তৈরি করেন। এতে খরচ অনেক কম হবে এবং খাবারের ম্যান ও উন্নত হবে।
১৬) গরুকে মায়ামমতা দিয়ে লালনপালন করুণ। মনে রাখবেন আপনি একজন খামারি, আপনি জীবিত প্রাণীর দেখাশুনা করার দায়িত্ব নিয়েছেন, কখনো শুধুমাত্র ব্যবসায়ী হবেন না। তবে উদ্দেশ্য হবে যেন খামার থেকে আপনি সর্বোচ্চ লাভ বের করতে পারেন। গরুর প্রতি আপনার ভালোবাসা না থাকলে আপনার খামার কোনোদিন ই লাভজনক হবেনা।
১৭) অন্য খামারিদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখুন এবং তাদের নিয়ে সপ্তাহে একদিন হলেও বসুন এবং সমস্যা এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন। খামার এর লাভ থেকে একটা অংশ প্রতিবেশী গরিব মানুষদেরকে দান করুন। মনে রাখবেন কারো দোআ আপনার খামার এর জন্য না থাকলে আপনি সামনে এগোতে পারবেন না। অধিক লাভের আশায় কোনো প্রকার কৃত্তিম ও ক্ষতিকর পন্থা অবল্বন করবেন না। মুসলিম হিসাবে সময় মতো সালাত আদায় করেন। মুক্তি ভাই বলেন "যে খামারি ফজর এর সালাত জামাতে আদায় করে তার খামারে কখনো লস হয় না"।
আল্লাহ সবার খামারে বারাকাহ দান করুক।
সংকলনে - অ্যাডমিন প্যানেল।
"পল্লী ডেইরি ফারমার্স"--খামারিদের কথা বলে।


Image may contain: sky, outdoor and nature