Pages

Showing posts with label ফার্ম ব্যবস্থাপনা. Show all posts
Showing posts with label ফার্ম ব্যবস্থাপনা. Show all posts

Friday 4 October 2019

কারেন্ট অ্যাফের্য়াস -মে/১৯

কারেন্ট অ্যাফের্য়াস -মে/১৯
১| বিশ্ব জনসংখ্যা রিপোর্ট-২০১৯ অনুযায়ী বিশ্বের মোট জনসংখ্যা কত?
®___৭৭১.৫০ কোটি
®___বৃদ্ধির হার ১.১%
®___সার্কভুক্ত আফগানিস্তানে বৃদ্ধির হার ২.৮%
®___সার্কে কম বৃদ্ধির হার শ্রীলংকায় ০.৪%
০২| ২০১৯ সালের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে শীর্ষ দেশ কোনটি?
®___নরওয়ে
®___বাংলাদেশ ১৫০তম
®___সর্বনিম্নে তুর্কিমেনিস্তান
০৩| বৈশ্বিক ই-কমার্স বাণিজ্যে শীর্ষ দেশ কোনটি?
®___যুক্তরাষ্ট্র
০৪| ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশ কততম?
®___৯ম।
০৫| "সাগরকন্যা"নামে খ্যাত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য কত?
®___১৮ কিলোমিটার
০৬| "National Thowheed Jamath (NTJ) কোন দেশভিত্তিক জিহাদী গ্রুপ?
®___শ্রীলংকার
®___২০১৪ সালে কাট্টাকুড়ি মুসলিম অধ্যুষিত শহরে কার্যক্রম চালু করে
০৭| দেশের একমাত্র কোস্টগার্ড বাহিনির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত?
®___কুয়াকাটা,পটুয়াখালীতে।
০৮| ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নির্মিত দেশের প্রথম স্বয়ংক্রিয় আন্ডার ওটায়ার রোবটের নাম কী?
®___ডুবুরি
০৯| বিশ্বের প্রথম সশস্ত্র উভচর ড্রোন জাহাজ তৈরি করে কোন দেশ?
®___চীন
®___নাম Marine Lizard.
১০| বিশ্বে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম 5G(5th Generation) চালু করে কোন দেশ?
®___দক্ষিণ কোরিয়া
®___চালু করে ৩ এপ্রিল ২০১৯।
১১| বিশ্বের দীর্ঘতম লবণ গুহার(Salt Cave)নাম কী ও কোথায় অবস্থিত?
®___নাম মালহ্যাম গুহা(Malham Cave)
®___ইসরাইলে অবস্থিত।
১২| বর্তমান ইস্পাত শিল্প প্রক্রিয়ার জনক কে?
®___স্যার হেনরি বেসিমির,ইংল্যান্ড
১৩| বিশ্বের প্রথম "কোরআন পার্ক" কোথায় অবস্থিত?
®___দুবাই,সংযুক্ত আরব আমিরাত
১৪| "International Year of Plant Health" কোন সাল?
®___২০২০ সাল।
১৫| WikiLeaks'র প্রতিষ্ঠাতা "জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে" যুক্তরাজ্যে অবস্থিত কোন দেশের দূতাবাস থেকে গ্রেফতার করা হয়?
®___ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে।
১৬| "ক্যাডমিয়াম" কী?
®___আর্সেনিকের মতই এক ধরনের টক্সিন।
১৭| কোন ৩টি ইকোনমিক জোন নিয়ে "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর"গঠিত?
®___মিসরাই
®___সীতাকুণ্ড ও
®___ফেনী জোন নিয়ে।
১৮| পাঙাশ মাছের পাউডার উদ্ভাবন করে কোন বিশ্ববিদ্যাল?
®___বাকৃবি(বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ)
১৯| ২৫ এপ্রিল ২০১৯ "ঢাকা-রাজশাহী" রুটে চালু বিরতিহহীন ট্রেনের নাম কী?
®___বনলতা এক্সপ্রেস
২০|"আমি তো ভালা না, ভালা লইয়াই থাইকো"জনপ্রিয় গানের গীতিকার ও সুরকার কে?
®___টিটু পাগল।
®___নোট প্রণয়নে রমজান
২১| "২০১৭-১৮" অর্থবছরে দেশে উৎপাদিত শীর্ষ ফল কোনটি?
®___তরমুজ
২২| প্রস্তাবিত ৬ষ্ঠ সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কোনটি?
®___হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
২৩| বর্তমানে দেশে মাথাপিছু আয় কত?(সাময়িক)
®___১৯০৯
®___মাথাপিছু জিডিপি ১৮২৭ মা.ড.
®___প্রবৃদ্ধির হার ৮.১৩%
®___কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ৩.৫১%
®___শিল্পে ১৩.০২%(অবদান ৩৫.১৪%)
®___সেবা ৬.৫০%(অবদান ৫১.২৬%)
২৪| জাপানের বর্তমান সম্রাটের নাম কী?
®___নারুহিতো
®___নতুন রাজকীয় যুগের নাম দেয় Reiwa.
২৫| নেপালের প্রথম স্যাটেলাইটের নাম?
®___Nepali Sat-1
®___উৎক্ষেপণ ১৭ এপ্রিল ২০১৯
২৬| ইউক্রেনের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের নাম কী?
®___বলোদিমার জেলেনস্কি
®___স্লোভাকিয়ার ১ম নারী প্রেসি. জুজানা কাপুতোভা
২৭| প্রবাসী আয় ও রেমিটেন্স অর্জনে শীর্ষ কোনটি?
®___ভারত
®___বাংলাদেশ ৯ম
২৮| প্রবাসী আয় ও রেমিটেন্স অর্জনে বাংলাদেশে GDP তে অবদান?
®___৫.৪%
®___সর্বাধিক অবদান রাখা দেশ টোঙ্গা
২৯| "জাতিসংঘ শিল্প উন্নয়ন সংস্থা (UNIDO) এর বর্তমান সদস্য কত?
®___১৭০টি
®___১৭০তম দেশ অ্যান্টিগুয়া & বারমুডা
৩০| ১১তম BRICKS সম্মেলন কোথায় অনুষ্ঠিত হবে?
®___ব্রাসিলিয়া, ব্রাজিল
®___তারিখ ১৩-১৪ নভেম্বর ২০১৯ এ
৩১| বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা কত?
®___১৬.৮১ কোটি
®___বিশ্বে ৮ম
®___বৃদ্ধির হার ১.১%
৩২| জনসংখ্যা বৃদ্ধির সর্বাধিক হার কোন দেশের?
®___ওমানের
®___কম সিরিয়ার
®___জনসংখ্যায় শীর্ষ দেশ চীন

Tuesday 10 October 2017

খরগোশ পালন

ভুমিকা:
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা বিধানের জন্য বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন। আর এ জন্য দরকার নতুন নতুন খাদ্য উৎপাদন ও এর সংযোজন। Micro-livestock হিসাবে আখ্যায়িত খরগোশ এমনি একটি বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের উৎস। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভার ঢাকা দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ খরগোশের লালন পালন, খাদ্য, বাসস্থান, বিভিন্ন রোগ-বালাই, মাংসের গুণাগুণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে আসছে। দীর্ঘ দিনের গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছেঃ
১. অল্প জায়গায় স্বল্প খাদ্য এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে খরগোশ পালন করা যায়।
২. খরগোশের মাংসের প্রোটিন, এনার্জি, খনিজ এবং ভিটামিনের পরিমাণ অন্যান্য সকল প্রজাতির জীবজন্তুর মাংসের চেয়ে বেশি এবং কোলেস্টেরল ফ্যাট ও সোডিয়াম কম থাকে। এছাড়া এদের মাংস সুস্বাদু ও সহজে হজম হয় এবং সকল ধর্মের মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য।
৩. খরগোশ দ্রুতবর্ধনশীল এবং একটি স্ত্রী খরগোশ প্রতিবারে ২-৮টি বাচ্চা দেয়। এরা নিম্ন মানের খাবার খেয়ে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন মাংস উৎপাদন করে।
৪. খরগোশ পালন বেকার যুবক, মহিলা ও ভূমিহীন কৃষকের দারিদ্র বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি পেশা হতে পারে। এসব কারণে দেশে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে সংশিষ্ট সকলের খরগোশ পালনের জন্য এগিয়ে আসা উচিত।
আমরা খরগোশকে সাধারণত সৌখিন প্রাণী হিসেবে পালন করি। তবে, বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন করে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। খরগোশের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
দেশে বাৎসরিক গোশতের চাহিদা প্রায় ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং উৎপাদিত হয় মাত্র ১ মিলিয়ন মেট্রিকটন। দেশের চাহিদার তুলনায় মোট আমিষের শতকরা ১৫-২০ ভাগ আসে পশুসম্পদ থেকে যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করা প্রয়োজন অথচ সেখানে আমরা প্রতিদিন মাত্র ২০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করে থাকি। এজন্য প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নতুন সংযোজন হিসাবে আমরা খরগোশ প্রতিপালনের বিষয়টি অধিক সম্ভাবনাময় দিক হিসাবে বিবেচনা করতে পারি।
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় খরগোশ পালন বরং সহজ। এদের খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনা সহজ বিধায় বাড়ীর মহিলা ও ছেলে-মেয়েরা কাজের ফাঁকে সহজেই এদের পরিচর্যা করতে পারে।
খরগোশের প্রজাতি:
বাংলাদেশে বিভিনড়ব প্রজাতির খরগোশ পাওয়া যায়। তম্মধ্যে রয়েছে ডার্ক গ্রে (দেশী), ফক্স, ডাচ, নিউজিল্যান্ড লাল, নিউজিল্যান্ড সাদা, নিউজিল্যান্ড কালো, বেলজিয়াম সাদা এবং ছিনছিলা উল্লেখযোগ্য।
বিভিনড়ব গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, অল্প বয়স্ক খরগোশের মাংস বেশি বয়স্ক খরগোশের মাংসের তুলনায় উন্নতমানের হয়। আবার স্ত্রী খরগোশের মাংসের তুলনায় পুরুষ খরগোশের মাংস তুলনামূলক উন্নত মানের হয়ে থাকে। বয়স হলে মাংসে কোলেস্টেরল এবং লিপিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়। অন্য দিকে স্ত্রী খরগোশের মাংসে লিপিড, ফ্যাট এবং কোলস্টেরল এর পরিমাণ বেশি থাকে।
খরগোশ পালনের সুবিধা:
১. খরগোশ দ্রুত বর্ধনশীল প্রাণী। এদের খাদ্য দক্ষতা অপেক্ষাকৃত ভাল।
২. এক মাস পরপর এক সাথে ২-৮ টি বাচ্চা প্রসব করে।
৩. অল্প জায়গায় ও স্বল্প খাদ্যে পারিবারিকভাবে পালন করা যায়। অল্প খরচে অধিক উৎপাদন সম্ভব।
৪. খরগোশের মাংস অধিক পুষ্টি গুণসম্পনড়ব। সব ধর্মের মানুষই এর মাংস খেতে পারে।
৫. মাংস উৎপাদনে পোল্ট্রির পরেই খরগোশের স্থান।
৬. রান্না ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ, বাড়ীর পাশের ঘাস ও লতা-পাতা খেয়ে এদের পালন করা সম্ভব।
৭. পারিবারিক শ্রমের সফল প্রয়োগ করা সম্ভব।
খরগোশ প্রতিপালনের পদ্ধতি:
বাড়ীর আঙ্গিনা বা বারান্দায় অল্প জায়গায় অথবা বাড়ীর ছাদে অল্প বিনিয়োগ করে ছোট আকারের শেড তৈরি করে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়।
দুইটি পদ্ধতিতে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়ঃ
গভীর লিটার পদ্ধতি: এই পদ্ধতিটি কম সংখ্যক খরগোশ পালনের জন্য উপযোগী। মেঝেতে মাটি খুঁড়ে গর্ত বানানো বন্ধ করার জন্য মেঝে কংক্রিটের হওয়া উচিত। মেঝের উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে তুষ, ধানের খড় অথবা কাঠের ছিলকা ইত্যাদি ছড়িয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে এক সাথে ৩০টার বেশি খরগোশ প্রতিপালন করা ঠিক নয়। পুরুষ খরগোশ আলাদা ঘরে রাখা উচিত। অবশ্য এভাবে প্রতিপালন করলে খরগোশ সহজে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া খরগোশকে সামলানোও খুব অসুবিধা হয়।
আমাদের দেশে সাধারণত পরিবহনযোগ্য নেটের খাঁচা বা কাঠের বাক্স খরগোশ প্রতিপালনের জন্য ব্যবহার করা হয় যা খামারীরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে এবং রাতে ঘরের ভিতরে আনতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কোনা এলাকাতে পুরুষ এবং স্ত্রী খরগোশ একত্রে রাখা হয় কিন্তু বাচ্চা দেবার পর বাচ্চাসহ স্ত্রী খরগোশকে আলাদা করে ফেলা হয়। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্ত্রী এবং পুরুষ খরগোশকে সবসময় আলাদা রাখা হয়। কেবলমাত্র প্রজননের সময় পুরুষ খরগোশকে স্ত্রী খরগোশের নিকট দেয়া হয়।
২) খাঁচা পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালনের জন্য লোহার পাত দিয়ে তৈরি ৩-৪ তাকবিশিষ্ট খাঁচা অধিক উপযোগী। প্রতিটি তাকে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রেখে খোপ তৈরি করতে হবে।
খাঁচাতে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা
ক) পূর্ণবয়স্ক পুরুষ খরগোশের জন্য ৪ বর্গফুট
খ) পূর্ণবয়স্ক মা খরগোশের জন্য ৬ বর্গফুট (প্রসূতি ঘর সহ)
গ) বাচ্চা খরগোশের জন্য ১.৫ বর্গফুট
পূর্ণবয়স্ক খরগোশের খাঁচা ১.৫ ফুট লম্বা, ১.৫ ফুট চওড়া এবং ১.৫ উঁচু হওয়া উচিত। এতে বাড়ন্ত দুইটি খরগোশ প্রতিপালন করা যাবে।
বড় আকারের খরগোশের জন্য ৩ ফুট লম্বা, ১.৫ ফুট চওড়া এবং ১.৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট খাঁচা উপযোগী। ২০ ফুট লম্বা, ১৩ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাঁশের বা পাকা ঘরে প্রায় ১৫০-২০০টি খরগোশ খাঁচায় লালন পালন করা যায়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
বয়স ও প্রজাতি ভেদে খরগোশের খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। একটি বয়স্ক খরগোশের খাদ্যে পুষ্টির জন্য ক্রুড প্রোটিন ১৭-১৮%, আঁশ ১৪%, খনিজ পদার্থ ৭% ও বিপাকীয় শক্তি ২৭০০ কিলো ক্যালরী/ কেজি হওয়া প্রয়োজন।
খাদ্যে পরিমাণ বয়স্ক খরগোশের জন্য প্রতিদিন ১৩০-১৪৫ গ্রাম, দুগ্ধবতী খরগোশের জন্য প্রতিদিন ২৫০-৩০০ গ্রাম ও বাড়ন্ত খরগোশের জন্য প্রতিদিন ৯০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
খাদ্যের ধরণ
সবুজ শাক-সবজিঃ ঋতু ভিত্তিক সবজি, পালং শাক, গাজর, মুলা, শশা, শাকের উচ্ছিষ্টাংশ, সবুজ ঘাস ইত্যাদি।
দানাদার খাদ্যঃ চাল, গম, ভুট্টা, তৈলবীজ ইত্যাদি। তবে, বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালনের জন্য ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রস্তুতকৃত খাদ্য খরগোশের রেশন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিচের চিত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক খরগোশের খাদ্য তালিকা দেয়া হল:
অসুস্থ খরগোশের চোখ ফ্যাকাসে, কান খাড়া থাকে না, লোম শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়, খাদ্য ও পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে, দৌড়াদৌড়ি কম করে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
খরগোশের রোগ  প্রতিকার
মিক্সোমাটোসিস (Myxomatosis)
এটি খরগোশের একটি প্রাণনাশক রোগ৷ আঙ্গোরা, ফ্লেমিস রাবিট, জ্যাক রাবিট ইত্যাদি প্রজাতির খরগোশের এই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বেশী৷ এই ভাইরাস পক্স ভাইরাস শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত৷ রোগগ্রস্ত অবস্থায় খরগোশের প্রজনন ঘটালে মুখ, নাক, ঠোঁট, কান, চোখের পাতা ইত্যাদি অঙ্গে ইডেমা হয়৷ কান দেহ থেকে ঝুলে পড়তে পারে৷ কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট হয়৷
চিকিৎসা এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই৷ রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়৷ সেফালেক্সিন বা এনরোফ্লক্সাসিন জলের সাথে মিশিয়ে খরগোশকে খাওয়ানো যেতে পারে৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা- অসুস্থ খরগোশকে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে৷
ফর্মালিন বা ৩ শতাংশ সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড দিয়ে খরগোশের খামার জীবাণুমুক্ত করতে হবে৷
প্রতিষেধক টীকা পাওয়া গেলে খরগোশকে টীকা দিতে হবে৷
সালমোনেল্লেসিস (Salmonellosis)
সালমোনেল্লা টাইফিমুরিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগের কারণ৷ এই রোগে খরগোশের দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও পাতলা পায়খানা হয়৷ গর্ভবতী খরগোশের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এই রোগে খরগোশের মৃত্যুহার অনেক বেশী৷
চিকিত্সা-এনরোফ্লক্সাসিন বা সেফালোক্সিন বা সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামক আন্টিবায়োটিক খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা- খরগোশের খামার পরিষ্কার রাখতে হবে৷
দুষিত জল বা খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে৷
মৃত খরগোশেকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে৷
খরগোশের খামারটিকে ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে৷
পরজীবী ঘটিত রোগ (Parasitic diseases)
হেপাটিক কক্সিডিওসিস (Hepatic Coccidiosis)
আইমেরিয়া স্টাইডি নামক পরজীবী এই রোগের কারণ৷ সাধারণত কম বয়স্ক খরগোশের এই রোগ হয়৷
চিকিত্সাসালফাকুইনক্সালিন ডেরিভেটিভ এই রোগের খুব ভাল ঔষধ৷ খাদ্যে শতকরা ০.০২৫ ভাগ হিসাবে ও পানীয় জলের শতকরা ০.০৪ ভাগ হিসাবে এই ঔষধ খরগোশটিকে খাওয়ালে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়৷
ইন্টেসটিনাল কক্সিডিওসিস (Intestinal Coccidiosis)
আইমেরিয়া সিকিওলা, আইমেরিয়া ফ্লাভেসেনস, আইমেরিয়া ইন্টেসটিনালিস, আইমেরিয়া ইরেসিডুয়া, আইমেরিয়া ম্যাগনা, আইমেরিয়া মোডিয়া, আইমেরিয়া পারফোরানস, আইমেরিয় পিরিফর্মিস- এই আটটি প্রজাতির আইমেরিয়া ইন্টেসটিনাল কক্সিডিওসিসের কারণ৷
লক্ষণএই রোগের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ হল পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসবে, ক্ষুধামন্দাভাব, পেট ফুলে থাকবে এবং চকলেট রঙের মলত্যাগ করবে৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা- খরগোশের খামার মিয়মিতভাবে জীবানুমুক্ত করতে হবে৷
খাবার ও জলের পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৷
খাদ্যে কক্সিডিওসিস রোধকারী ঔষধ মেশাতে হবে৷
খরগোশ পালনে আর্থিক লাভ
কিছু দানাদার খাবার এবং বাড়ীর আশেপাশের ঘাস, লতা-পাতা এবং রান্না ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ প্রদান করে পারিবারিকভিত্তিতে ২০টি খরগোশ প্রতিপালন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের সাথে সাথে মাসিক ৬০০০.০০ টাকা আয় করা সম্ভব যা অন্য কোনো ভাবে সম্ভব নয়।
এক কাঠা জায়গায় কমপক্ষে ১৩০টি খরগোশ পালন সম্ভব। সবুজ ঘাস, লতাপাতা, শাক-সবজি, ভাত খেতে এরা খুব পছন্দ করে। খুব সহজেই যে কেউ খরগোশ পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। ছয় মাস বয়সী ১০০টি স্ত্রী খরগোশের সঙ্গে ছয় মাস বয়সী ২৫-৩০টি পুরুষ খরগোশের মিলনের ফলে আড়াই কি তিন মাসে ৫০০-৬০০টি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। একটি খরগোশ বছরে ৫ থেকে ৬টি বাচ্চা দেয়। ছয় মাস বয়সী প্রতিটি খরগোশের মূল্য ৩০০-৫০০ টাকা (ঢাকার বাজার দরে)। খরগোশ বাচ্চা প্রদানের পর মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রসবকৃত বাচ্চাগুলো চলাফেরা করতে পারে। বাচ্চা প্রসবের সময় এরা অবশ্য নিরাপদ আশয় খোঁজে। কারণ বেজি, নেড়ি কুকুড়, বিড়াল, সাপ এদের জাতশত্রু। এসব প্রাণী যাতে এদের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিটি বাচ্চা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। তখন এদের প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা (ঢাকার বাজার দরে)। ঢাকাসহ দেশের প্রসিদ্ধ শহরগুলোতে খরগোশ কেনাবেচা হয়।
কেস স্টাডি:
খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী সিরাজগঞ্জের অনেক নারী
খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার অনেক নারী। তাদের মধ্যে অন্যতম দুর্গা রানী ও আখলিমা খাতুন। খরগোশ বিক্রির টাকায় চলছে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ। সংসারের খরচের অংশ মেটান তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, খরগোশের মাংস খাওয়া যায় এবং এটি রোগ প্রতিরোধক। পাশাপাশি খরগোশ পালন এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কেও আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। নারীদের খরগোশ পালন ও অর্থ আয় আমাদের চমক লাগিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের নায়েব আলীর স্ত্রী আখলিমা বেগম (৪০) জানান, প্রায়ই বাড়িতে খরগোশ জবাই করি এবং এর মাংস খেয়ে থাকি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে। এক সময় মানুষ বাড়িতে খরগোশ পালন করত শখের বশে।
কিন্তু এখন পালন করে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে। আমি খরগোশ পালনের কাজকে আমার পেশা হিসেবে নিয়েছি। এটি আমার ভাগ্যকে পরিবর্তন করেছে এবং আমাকে আশার আলো দেখিয়েছে। বর্তমানে আমি খরগোশ পালন ও বাজারজাত করে বেশ লাভবান হচ্ছি। আমি আমার ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে চাই, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় আমি ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে পারছি না। সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে পারতাম।
একই উপজেলার সোলাপাড়া গ্রামের নীপেন চন্দ্র প্রামাণিকের স্ত্রী দুর্গা রানী (৩৮) বলেন, খরগোশ পালনের ব্যবসা তার ভাগ্যের দাঁড় উন্মুক্ত করেছে। তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার ছেলে কলেজে পড়ে। এরই মধ্যে তিনি খরগোশ পালনের আয় থেকে একটি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তাদের বসবাসের জন্য। তিনি তার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন এ ব্যবসা থেকেই। এছাড়া তিনি এখন থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো সঞ্চয় গড়ে তুলছেন।
দুর্গা রানী আরও বলেন, এক সময় তিনি ছিলেন ভীষণ দরিদ্র এবং অসুখী। তিনি তার স্বামী-সংসার নিয়ে চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করতেন, কারণ তার স্বামী ছিল কর্মহীন-বেকার। গত দুই বছর আগে এক প্রতিবেশীর কাছে খরগোশ পালনের বিষয়টি জানতে পারেন এবং বাড়িতে খরগোশ পালনে আগ্রহী হন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে একপর্যায়ে তিনি প্রাক্টিক্যাল অ্যাকশন নামক একটি এনজিওর আর্থিক সহযোগিতায় মানবমুক্তি নামক অপর একটি এনজিও কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত ভিটুআর প্রকল্পের সদস্য হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর তিনি সেই প্রকল্পের আওতায় সাতদিনের প্রশিক্ষণ নেন এবং বাড়িতে মাত্র তিনটি খরগোশ দিয়ে একটি ফার্ম স্থাপন করেন। এটা ছিল ২০১০ সালের কথা। বর্তমানে তার ফার্মটি ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে। তিনটি খরগোশ বহু খরগোশে পরিণত হয়েছে। ফলে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হচ্ছে না।
শুধু আখলিমা ও দুর্গা রানী নয়, তাদের মতো বোয়ালিয়া ও সোলাপাড়া গ্রামের আরও অনেকেই এখন খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী। তারা খুঁজে পেয়েছেন তাদের জীবিকার পথ।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা খরগোশ পালনকারীদের বাড়িতে ভিড় করছেন। তারা প্রতিটি খরগোশ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা এবং প্রতি জোড়া খরগোশ ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় ক্রয় করছেন। খরগোশ পালনকারীরা জানান, খরগোশ বিক্রির জন্য তাদের খুব কমই বাজারে যেতে হয়। বরং ক্রেতারাই তাদের বাড়ি এসে এসব কিনে নিয়ে যান। তবে মাঝেমাঝে তারাও স্থানীয় হাট-বাজারে খরগোশ বিক্রি করে থাকেন।
সরেজমিন দেখা যায়, খরগোশ পালনকারী মহিলারা বাড়িতে স্বল্প পরিসরে খাঁচা-পদ্ধতিতে খরগোশ পালন করছেন। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তারা খরগোশের ভরণ-পোষণ বা দেখা-শোনার কাজ করেন। এতে বাড়তি খরচ বা সময় নষ্ট হয় না।
এ প্রসঙ্গে প্রাক্টিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ অফিসের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বহু মানুষ এখন খরগোশ পালন ও সেবনে আগ্রহ প্রকাশ করছে। কারণ এটি খুব সহজে, স্বল্পখরচে ও স্বল্প পরিসরে করা যায়। এছাড়া প্রতিটি খরগোশ মাত্র দুই মাসের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী ও পশুসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, খরগোশের মাংস সুস্বাদু, রোগ প্রতিরোধক এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন। যে কেউ ইচ্ছা করলে বাড়িতে খরগোশ পালন করতে পারেন এবং এ থেকে সংসারে বাড়তি আয় করতে পাররেন। এতে বিপুল পরিমাণ মূলধনের প্রয়োজন নেই। তাই এখন অনেকেই এটিকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন এবং স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
নেত্রকোনায় খোরগোশ পালন করে আদিবাসীদের দিন বদলের চেষ্টা
নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নে আদিবাসী অধ্যুষিত নয়াপাড়া গুচ্ছগ্রামে খোরগোশ পালন করে বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার নিজেদের দিন বদলের চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালে সুসং দূর্গাপুরের আদিবাসী যুবক নিহার রঞ্জন প্রথমে এক জোড়া খরগোশ এনে পালন শুরু করেন। তার দেখা দেখি আদিবাসী অনেকেই খরগোশ পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে ২০০৮ সালে নেত্রকোনার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির ইনকাম এন্ড ফুড সিকিউরিটি ফর আলট্রাপোর-ইফসাস প্রকল্প নামে গুচ্ছগ্রামে খরগোশ পালনের পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। গুচ্ছ গ্রামের আদিবাসী পরিবারগুলো তিনটি সমিতির মাধ্যমে প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হয়। সমিতিগুলো হচ্ছে, সিলভিয়া, পাহাড়ীকা ও নিথুরিয়া। সমিতি থেকে খরগোশ পালনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে সুদবিহীন ১১ হাজার ৯৮০ টাকা ঋণ দেয়া হয়। ঋণ পেয়ে গুচ্ছ গ্রামের সুরনা হাজং, পুস্পবালা হাজং, গীতা হাজং, চপলা রিছিল, কনকিনা চাম্বু গং, মায়া রানী হাজং, রিজিলা হাজংসহ বেশ কিছু আদিবাসী পরিবার দুই পদ্ধতিতে খরগোশ পালন শুরু করে। ৪ ফুট উচ্চতা এবং ৭ ফুট চওড়া কাঠের ঘর বানিয়ে চারদিকে নেট দিয়ে সেখানে খরগোশ পালা হয়। জন্মের দিন থেকে খরগোশ প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ৬ মাস সময় লাগে। এরপর প্রতি মাসে মাদি (মহিলা) খরগোশ ৫-৬টি করে বাচ্চা প্রসব করে। কোন কোন খরগোশ সর্বোচ্চ ৯টি বাচ্চাও প্রসব করে।
গীতা হাজং বলেন, নিথুরিয়া সমিতির মাধ্যমে ঋণ পেয়ে তিনি সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার মনচাপড়া গ্রামের সন্তোষ হাজংয়ের কাছ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে দুটি মাদি ও দুটি পুরুষ খরগোশ কেনেন। ছয় মাস পর থেকেই খরগোশগুলো বাচ্চা দেয়া শুরু করে। তিনি জানান, খরগোশ পালনে খাবারের ঝামেলা নেই। খরগোশের প্রধান খাবার হচ্ছে সবুজ ঘাস ও তরু লতা। এ ছাড়াও কপি, মূলা, শিমপাতা, মুড়ি, রুটি, ভাতসহ সবকিছুই খায় খরগোশ। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সামান্য সময় ব্যয় করলেই বাড়ীতে খরগোশ পালন করা যায়। খরগোশের মাংশ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এ অঞ্চলের আদিবাসীদের কাছে ক্রমেই খরগোশের মাংশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সিলভিয়া সমিতির সদস্য কনকিনা চাম্বু গং বলেন, আগে আমাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট  হতো। খরগোশ পালন ও তা বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
সুসং দূর্গাপুরের প্রথম খরগোশ পালক হাজং নিহার রঞ্জন বলেন, স্বল্প পূঁজিতে আমাদের এলাকায় খরগোশ পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এই প্রকল্পে পৃষ্টপোষকতা করলে আদিবাসীদের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।

সংগৃহীত ও সংকলিত
তথ্য: 
তথ্য আপা প্রকল্প

হাঁস পালন

হাঁস পালনের পরিকল্পনা ও খরচের তথ্যাদি
আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী। সমস্যা হচ্ছে হাঁসের মাংস ও ডিম মুরগির মাংসের চেয়ে জনপ্রিয় কম। তবে বর্তমানে এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এখন হাঁস চাষ লাভজনক একটি প্রযুক্তি। অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে হাঁস চাষে এগিয়ে আসছেন এবং প্রধান পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন হাঁস চাষ। মৎস্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতে, পুকুরে হাঁস ও মাছের সমন্বিত চাষ পদ্ধতি অবলম্বন করলে খুব সহজে বেশি লাভবান হওয়া সম্ভব। হাঁস চাষে অনেক সুবিধা রয়েছে যেমন- মাছের জন্য পুকুরে তেমন বাড়তি সার ও খাদ্য দিতে হয় না । হাঁস থাকলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
হাঁস পালনে সুবিধা : হাঁসের রোগবালাই তুলনামুলক খুবই কম। তাছাড়া খাবারের তেমন অভাব হয় না। দেশি মুরগি যেখানে গড়ে বছরে ৫৫টি ডিম দেয়, দেশি হাঁস সেখানে ৯০টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। আর উন্নত জাত হলে বছরে ২৫০-৩০০টি ডিম দিয়ে থাকে।
যেভাবে শুরু করতে পারেন : এ প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে চাইলে আপনার ৪০-৫০ শতাংশ আয়তনের একটি পুকুর লাগবে। ১০০-২০০টি হাঁস এবং হাঁসের ঘর তৈরি করে নিতে হবে। এসব পরিকল্পিতভাবে করলে ভালো হবে। পাহারাদারের ঘরটি হাঁসের ঘরের দক্ষিণ পাশে হলে ভালো হয়।
উন্নত হাঁসের জাত : হাঁসের জাত নির্বাচন করার ক্ষেত্রে যে জাতের হাঁস বেশি ডিম দেয় সে জাতের হাঁস নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে খাকি ক্যাম্পেবেল,  ইন্ডিয়ান রানার, সিলেট মিটি ও নাগেশ্বরী জাত নির্বাচন করা যেতে পারে। এ জাতের হাঁস ৫ মাস বয়স থেকে ২ বছর পর্যন্ত ডিম দেয়।
যেভাবে হাঁস পালন করবেন : হাঁস বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ২৫-১০০টি হাঁস মুক্ত পুকুরে, লেকে অথবা ধান কাটার পর পরিত্যক্ত জমিতে পালন করা যায়। অপরটি হচ্ছে ইনটেনসিভ হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ১-১০ লাখ হাঁস পালন করা সম্ভব। দিনের বেলায় হাঁস পানিতে থাকতে পছন্দ করে। শুধু রাতযাপনের জন্য ঘরের প্রয়োজন।
হাঁসের ঘর তৈরি : পুকুরপাড়ে কিংবা পুকুরের ওপর ঘরটি তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট হলে ভালো হয়। ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইট দিয়ে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হবে। ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শহরে বিভিন্ন মাপের চৌবাচ্চায় হাঁস পালন করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে প্রশস্ত ছাদ থাকলে সুবিধা বেশি। ছাদের একপাশে ঘর অপর পাশে চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হবে। প্রজননের জন্য আটটি হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখা দরকার। এরপর দেশি মুরগির সাহায্যে অথবা ইনকিউবেটরে হাঁসের ডিম ফোটানো যায়। 
কোথায় পাবেন হাঁসের বাচ্চা : দৌলতপুর হাঁস খামার, নারায়ণগঞ্জ হাস প্রজনন কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত হাঁস-মুরগির খামার ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে হাঁস বা হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করতে পারেন।
হাঁসের খাদ্য : হাঁস চাষে সুবিধা হলো হাঁস খাল-বিল-পুকুর থেকে তার কিছু  খাবার সংগ্রহ করে নেয়। তাছাড়া বাজারে হাঁসের তৈরি খাবার কিনতে পাওয়া যায়। শুকনো খাদ্য না দিয়ে হাঁসকে সবসময় ভেজা খাদ্য দেয়া উচিত। খাদ্যে আমিষের পরিমাণ ডিম দেয়া হাঁসের ক্ষেত্রে ১৭-১৮ শতাংশ ও বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২১ শতাংশ রাখা উচিত। হাঁস দানা, খইল, ভূষি, ঝিনুকের গুঁড়ো, ডিমের খোসা, কেঁচোসহ অন্যান্য খাবার বেশি পছন্দ করে।  
মাছের পুকুরেও হাঁস পালন
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মাছের পুকুরে হাঁস পালন করলে কৃষকরা বেশি লাভবান হন। এ চাষে হাঁস বেশি প্রোটিন পায়। মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
সম্ভাব্য আয়-ব্যয়
২০-৪০ শতাংশের একটি পুকুরে ১০০-২০০টি হাঁসের জন্য এ প্রকল্প শুরু করলে সব মিলে খরচ হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা। সঠিক পরিচর্যা আর যত্ন নিতে পারলে প্রথম বছরে যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে ২০-৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
রোগমুক্ত, উন্নত জাতের হাঁস আধুনিক পদ্ধতি ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী চাষ করুন। যে কোনো পরামর্শের জন্য আপনার উপজেলা বা জেলা মৎস্য ও পশুসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন।
রাজহাঁস পালন ও তার পরিচর্যা
কিছু গৃহপালিত পাখি আছে যাদের নিয়ে সরকারি, বেসরকারিভাবে বেশ ঢাক-ঢোল পেটানো হয় তার সুখ্যাতির ও গুণাগুণের জন্য।'মানুষ ও কাকে নিয়ে গেল কান' শুনেই নিজের কানে হাত না দিয়ে কাকের পেছনে ছুটলো। ফলে কান যেখান থাকবার সেখানেই রইলো। শুধু কাকই যা পালিয়ে গেলো।
আবার কিছু কিছু পশুপাখি আছে যাদের সম্পর্কে সরকার সব সময় মুখ ঘুরিয়ে থাকে। পিঠে নিয়েছি কুলো। যা করবার করো!" ভাব নিয়ে মুখ গোমড়া করে থাকে। কিন্তু ঐ সব উপকারী গৃহপালিত পশুপাখি কারোর তোয়াক্কা না করে ঠিক নিজের কাজ করে যায়। রাজ হাঁস এই ধরনের একটি পাখি।
রাজহাঁসের সেবামূলক কাজ
কবি বলেছেন- ''কোথায় জলে মরাল চলে। মরালী তার পাছে রে-" রাজহাঁস শুধু শোভাবর্ধন করে না। বাড়ি-ঘর পাহারা দেয়, চোর তাড়ায়। ঘাস কাটার মেশিনের বদলে রাজহাঁস পুষুন, ঘাস সমান করে খেয়ে নেবে।
পোকা-মাকড় খেয়ে জায়গা-জমি ঝকঝকে, তকতকে করে রেখে দেবে।রাজহাঁসের মাংস খাওয়া হয়। ওর পলক দিয়ে লেপ-তোষক, বালিশ তৈরি হয়।ডিম? বছরে খুব কম ডিম দেয়। এই কারণে রাজহাঁস পালনকারী তার ডিম না খেয়ে সেটা থেকে বাচ্চা পয়দা করতেই বেশি উৎসাহী হয়ে থাকেন।
রাজহাঁসের প্রজাতি
রাজহাঁসের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে নিম্ন লিখিত প্রজাতিগুলো সাধারণত দেখা যায়।
(১) টুলুজ- ভারি প্রজাতির পাখি। ফরাসী দেশের পাখি। ভারি পাখিদের মধ্যে এরাই বেশি ডিম দেয়।তবে সব টুলুজ পাখি ডিমে তা দেয় না। ঠোঁট , পা কমলা রঙের। গলা, পেট এবং লেজ সাদা। পুরুষের ওজন- ১৪ কেজি, স্ত্রী- ৯ কেজি।
(২) এমডেনঃ জামর্নির হ্যানোভারে এই পাখি বেশি দেখতে পাওয়া যায়। ভারি জাতের পাখি। ডিমের সংখ্যা ভালো। অন্য প্রজাতির রাজহাঁস থেকে বেশ ঠান্ডা। ঠোঁট জ্বলজ্বলে কমলা রঙের। পায়ে ধবধবে সাদা পালকে ভরা। পুরুষের ওজন ১৪ কেজি, স্ত্রী ৯ কেজি।
(৩) চিনাঃ চিনদেশের রাজহাঁস। টুলুজ এবং এমডেন ছাড়া আকারে ছোট। সংখ্যায় বেশি ডিম দেয়। বছরে ৬০ টির মত। ডিমে তা দিতে অভ্যস্ত। দুটি রংয়ের চিনা রাজহাঁস দেখা যায়। খয়েরি এবং সাদা।খয়েরি রঙা চিনা রাজহাঁসের পা কমলা। ঠোঁট, পালকের রঙও খয়েরি। সাদা রঙের রাজহাঁসের ঠোঁট এবং পা উজ্জ্বল কমলা রঙের। গায়ের পালক ধবধবে সাদা।
ওপরের ঠোঁটের গোড়ার চামড়া ফুলের মতো গোল হয়ে থাকে। পুরুষের ওজন ৯ কেজি, নারীর ওজন ৮ কেজি। পাহারাদার হিসেবে চিনা রাজহাঁসের সুখ্যাতি আছে।
এছাড়া আরো কিছু প্রজাতির রাজহাঁস আছে। যেমন আফ্রিকান। অনুমান করা হয় এরা আদিতে ভারতীয়। কেউ বা বলেন চিনা এবং টুলুজের মধ্যে প্রজননের ফলে এদের সৃষ্টি হয়েছিল।
রাজহাঁসের বাসস্থান
রাজহাসের ঘর খোলা-মেলা, বায়ু চলাচলযুক্ত কিন্তু রোদ - বৃষ্টিতে ওদের কষ্ট দেবে না। মেঝে নানা ধরনের হতে পারে- পাকা, শক্ত অথচ কাঁচা ; মোটা তারের জালের এবং বিছানাযুক্ত (লিটার)। পুরুস্তরের বিছানা (ডিপ লিটার) হলে গভীরতা হবে ১৫ সে. মি. বা ৬ ইঞ্চি। বিছানা সবসময় শুকণো থাকা চাই।
ঘরের রক্ষণব্যবস্থা ভালো হওয়া চাই। অর্থাৎ যাতে চোর না ঢোকে। শেয়াল বা অন্য কোন বন্যপ্রানী এদের ক্ষতি না করে।
ঘরের সামনে বা পিছনে কিছুটা জায়গা তারের জাল দিয়ে ঘিরে দিলে ভাল হয়। এই জায়গাটা ওদের বিচরনের (জঁহ)কাজে আসবে। এই ধরনের জায়গা হাঁস পিছু ৪ বর্গ মিটার দিতে হবে।
রাজহাঁসের ঘরের মধ্যে এবং বাইরে তিনটি হাঁস পিছু একটি করে ডিম পাড়ার বাক্স দিতে হবে। বাক্সে মাপ হবে ৫০ বর্গ সেঃ মিঃ। পানি ও খাবার জন্য আলাদা পাত্র দিতে হবে।
রাজহাঁসের প্রজনন করাতে চাইলে পদ্ধতিগতভাবে এগুতে হবে। যেমন- ভারি জাতের ৩/৪ টি মাদি হাঁস পিছু একটি মর্দা হাঁস রাখতে হবে। চিনে হাঁসের ৪/৫টি মাদির পিছু একটি মর্দ হাঁস রাখতে হবে।
রাজহাঁসদের এক বছর বয়স না হলে প্রজনন কাজে ব্যবহার না করাই ভাল।সবচেয়ে ভাল হয় যদি ওদের দু'বছর বয়সে প্রজনন কাজে লাগানো যায়।
মার্দি হাঁস ১৫ বছর পর্যন্ত প্রজননক্ষম থাকে কিন্তু মর্দা সাত বছরে প্রজননে কিছুটা বা অক্ষম হয়ে পড়ে।
ডিম ও ডিম ফোটানো
সাধারনত এরা বসন্ত কালে ডিম দিতে শুরু করে। চিনে রাজহাঁস শুরু করে শীতকালে। এরা সকালের দিকেই ডিম দেয়। প্রথম বছরের তুলনায় এরা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বছরে বেশি ডিম দিয়ে থাকে ২য় এবং তয় বছরের ডিম আকারে ও বেশ বড় হয়ে থাকে।শঙ্কর জাতীয় রাজহাঁস অর্থাৎ অক্সিকান রাজহাঁস বা চিনে এবং টুলুজ বা এমডেনের যৌন সঙ্গমে তৈরি সঙ্কর রাজহাঁস এমডেন বা টুলুজ চিনে রাজহাঁসদের চেয়ে বেশি ডিম দেবে।
ডিমে তা দেওয়া
রাজহাঁস নিজের ডিম ফুটিয়ে থাকে। এবং যখন ডিমে তা দেয় তখন ডিম পাড়া বন্ধ রাখে। সুবিধা থাকলে আপনি টার্কি মুরগি, বা মস্কোডি হাঁস দিয়ে রাজহাঁসের ডিম ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে পারেন।
টাটকা ডিম ( খুব জোর সাত দিনের পুরানো), পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, কোন ফাটাফুটো নেই এবং প্রতিটি ডিমের ১৪০ - ২০০ গ্রাম ওজন হলে সেটা তা দেবার উপযুক্ত বলে ধরা যেতে পারে।
অনেক জায়গায় মুরগি দিয়েও রাজহাঁসের ডিম ফোটানো হয়ে থাকে। যদি মুরগি দিয়ে রাজহাঁসের ডিম ফোটাতে হয় তবে মুরগি প্রতি ৪/৬ টি ডিম এবং রাজহাঁস দিয়ে বসালে রাজহাঁস পিছু ১০-১৫ টি ডিম বসাতে হবে। মুরগির নিচে যদি রাজহাঁসের ডিম বসানো হয় তবে ডিম ঘোরানোর ব্যবস্থা খামারকারীকে নিজেই করতে হবে। কারন ডিম বড় আকারের বলে মুরগি রাজহাঁসের ডিম ঘোরাতে পারে না।
মুরগি যখন খাবার তাগিদে ঘর থেকে বের হয়ে যাবে তখনই ডিম ঘুরিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিনই নিজে থেকে এই কাজ করতে হবে। ১৫ দিনের ডিম ঘোরানোর সময় কিছুটা গরম পানি ডিমের গায়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। অবশ্য রাজহাঁসের পানিতে বিচরণ করার সুবিধা থাকলে গরম পানি না ছিটিয়ে দিলে ও চলবে।
কৃত্রিম ডিম ফোটানো
ডিম ফোটানো মেশিনে (ইনকিউবেটার) ডিম ফোটানোর হার বেশ কম। মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ। মেশিনে ডিম বসালে তাপমাত্রা সবসময় ৩৭.৪০ সেঃ (৯৯.৫০ ফাঃ) রাখবেন। ভেজা থার্মোমিটারে তাপ রাখতে হবে ৩২.২০ সেঃ ২৯ দিন পর্যন্ত। তারপর একে বাড়িয়ে করতে হবে ৩৪০ সেঃ। ডিমগুলি দিনে বার বার ঘুরিয়ে দিতে হবে। আর সব পাখির বেলায় যেটা চলে, এখানে ও তাই ডিমের মোটা দিকটা ওপরে রেখে দিতে হবে।
দশ দিনের পরের থেকে ডিমগুলিকে গরম পানি সপ্রে করে দিতে হবে। সপ্তাহে দুই দিন করে। ২৬ দিনের ডিমগুলিকে নার্সারি ট্রে বা পালক ট্রেতে নিয়ে যেতে হবে। ২৮ দিন হাল্কা জাতের রাজহাঁসের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে যায়। আবার এটাও দেখা গেছে ভারি জাতের রাজহাঁসের ডিম ফুটতে ৩৫ দিন সময় লাগছে। ডিম বসানোর দশ দিনের দিন আলোর সামনে ডিম ঘুরিয়ে ঝুঝে নেওয়া যায় ভ্রূণ হয়েছে রাজহাঁসের একদিনের বাচ্চার লিঙ্গ নির্ণয়ঃ মুরগির বাচ্চার মতো রাজহাঁসের বাচ্চার ও একদিনে বলে দেওয়া যায় কোনটা মাদি আর কোনটা মদ্দা।
রাজহাঁসের বাচ্চা প্রতিপালন
যদি মুরগি বা রাজহাঁস ডিমে তা দিয়ে ডিম ফুটিয়ে থাকে তবে সেই পালিকা মুরগি বা রাজহাঁস ডিম ফোটা বাচ্চাদের যত্ন করবে। সেখানে কৃত্রিম তাপের কোনো দরকার পড়বে না। তবে পালিকা মা বাচ্চা নিয়ে যে জায়গায় ঘুরে বেড়াবে সে জায়গাটা অবশ্যই শুকনো খটখটে হওয়া চাই।
তবে দশদিন বয়স পর্যন্ত বাচ্চাসহ পালিকা মাকে নরম ঘাসে ছাওয়া উঠোন জাতীয় জায়গায় রাখা উচিত। লনের মাপ হবে ১০ টি বাচ্চার জন্য পালিকা মা সহ ৪ বর্গমিটার । ১৫ দিন বয়স না হলে বাচ্চাদের পানিতে নামনো মুক্তিযুক্তি নয়।
যদি ইনকিউবেটর মেশিনে ডিম ফোটানো হয় তবে রু্রডারের নিচে রেখে অবশ্যই বাচ্চাদের কৃত্রিমভবে তাপ দিতে হবে।
প্রথম সপ্তাহে ব্রুডারের নিচে ৩০ ডি. সেঃ তাপ থাকা উচিত। সপ্তাহ পিছু ৫ ডি. সেঃ তাপ কমিয়ে ঘরের তাপে অর্থাৎ পরিবেশের তাপমাত্রায় নিয়ে আসতে।
প্রথম তিনদিন বাচ্চাদের ধরে খাওয়াতে হবে। তারপর থেকে এরা নিজেরাই খেতে পারবে। বাচ্চারা সহজে ঘাসে চড়ে খেতে পারে। ফলে তৈরি খাবার কম লাগে। একসঙ্গে একটি দলে ১০০ টির বেশি বাচ্চা পালন না করাই উচিত।
রাজহাঁসের বাচ্চাদের খাবার
রাজহাঁসের খাবার মোটামুটি হাঁসের খাবারের মতো। তবে প্রথমে চার সপ্তাহ রাজহাঁসের বাচ্চারা খুব তাড়াতাড়ি বাড়ে বলে বাচ্চা হাঁসের তুলনায় ওদের খাবারে আমিষের ভাগ বেশি হওয়া দরকার। ভারি জাতের রাজহাঁসের একদিনের বাচ্চার ওজন প্রায় ৮৫ গ্রাম। এবং ৪ সপ্তাহে এর ওজন ১ কেজি ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত।
তাই রাজহাঁসের বাচ্চার প্রথম চার সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শতকরা ২০ ভাগ আমিষ আছে এমন খাবার এবং অতিরিক্ত নরম কিছু সব্জি বা চরবার ঘাসে ছাওয়া উঠোন দরকার। ৪ সপ্তাহ পরে ১৬% আমিষ যুক্ত খাবার দিলে চলবে।
ঘাসের চারণভুমিতে রাজহাঁসের বাচ্চা ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ৯ কেজি। খাবার খেয়ে থাকে। ঐ বয়সে খাবারকে মাংসে পরিণত করার হার ২.২ কেজি। খাবার পিছু ১ কেজি মাংস। ১৬ সপ্তাহে ওটা দাঁড়ায় ৩ কেজি। খাবার পিছু ২.১ কেজি মাংস।
প্রজননক্ষম রাজহাঁসের যত্নঃ প্রাপ্তবয়স্ক রাজহাঁসদের প্রজনন ঋতুর আগে ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো ভাবে ঘাসে চরতে দিতে হবে। ওদের এই সময় প্রতিদিন ১৬৫ গ্রাম সুষম খাদ্য খেতে দিতে হবে যাতে আমিষের ভাগ থাকবে শতকরা ১৬ ভাগ।
রাজহাঁসের রোগঃ রাজহাঁসের পালন তথা ব্যবসায় এটা একটা মস্ত সুবিধা যে এদের তেমন রোগ-ব্যধি হয় না। রোগের মড়ক নেই বললেই চলে। বাজারে বিক্রি করার বয়স পর্যন্ত মৃতু্যর হার শতকরা ২ ভাগ নয়।
তবে রাজহাঁস পালনে এ সমস্ত রোগের সম্বন্ধে সচেতন হওয়া উচিত _ ককসিডিও _ সিস, কলেরা, কোরাইজ, স্পাইরোকিটোসিস, অপুষ্টিজনিত রোগ।
মানুষের সেবায় রাজহাঁস- পাহারাদিরঃ রাজহাঁস তার পারিপার্শ্বিক প্রতিটি জিনিসের সঙ্গে খুব সহজেই ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে এবং সেই সুবাদে যে কোন অপরিচিতি শব্দ, লোকজন, জন্তু, জানোয়ার দেখামাত্র হয়ে পড়ে এবং প্যাঁক-প্যাঁক শব্দ করে আশ পাশের সকলকে তটস্থ করে তোলে। এমনকি প্রবল উত্তেজনায় অনেক সময় আক্রমন পর্যন্ত করে বসে। আগেই বলা হয়েছে সব রাজহাঁসের মধ্যে পাহারাদারি কাজে চীনা রাজহাঁস দক্ষতম।
রাজহাঁসের ডিম এবং মাংস
অনেক দেশে এমন কি আমাদের দেশে ও কিছু কিছু জায়গায় রাজহাঁসের মাংস ও ডিম উপাদেয় খাবার হিসাবে আদর পেয়ে থাকে। ১০ সপ্তাহ বয়সে রাজহাঁস মাংস হিসেবে খাওয়া চলে।এবং সেই সময় ঐ মাংসের ব্যবসা ও ভালো চলে। দশ সপ্তাহ বয়সে রাজহাঁসের ওজন ৪.৫ কেজি হয়।মাংস হিসেবে কাটার আগে রাজহাঁসের পানি ছাড়া সবরকম খাবার খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে ১২ থেকে ১৮ ঘন্টা আগে। মুরগি কাটার কায়দায় এবং সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রাজহাঁসের জুগুলোর শিরা কেটে দেওয়া হয়। সম্পূর্ন রক্ত বের হয়ে যাবার পর ওর পেট চিরে নাড়িভূড়ি বের করে নেওয়া হয়। পা, মাথা, ঠোঁট, কেটে বাদ দেওয়া হয়। মোটামুটি রাজহাঁস পিছু পালক,মাথা, নাড়ি ভুঁড়ি বাদ দিলে তার দেহের ওনের শতকরা ৭০ ভাগ মাংস পাওয়া যায়।
রাজহাঁসের পালক বিক্রয়
রাজহাঁসের পালক দিয়ে গদি, লেপ, তোষক, তাকিয়া, কুশন এককথায় বসবার এবং হেলান দেবার সব জিনিস তৈরি করা যায়। এই গদিফাদি তৈরির জন্য রাজহাঁসের বুক পিঠ এবং পেটের নরম পালকের খুব চাহিদা।
রাজহাঁসের পালক চাইলে পালক তুলতে হবে রাজহাঁস যখন প্রথম ডিম পাড়া বন্ধ করবে। বছরে তিন থেকে চারবার এই পালক তোলা হয়। শীত কালে পালক তোলা যুক্তিযুক্ত নয়। ৫০ টি পূর্নবয়স্ক রাজহাঁস সাড়ে চার কেজি পালক দিতে পারে।
পালক তোলার পর পালক থরিতে পুরে (কাপড়ের) আলো-বাতাসে এবং রোদে শুকোতে হবে। থলিতে ভরার আগে ফর্মালিন দিতে হবে। পালক খুব বেশি দিনের জন্য শকোতে হলে পালকে খুব ভালো করে গ্যামাক্মিন ( ২৫%) দিয়ে ঝেড়ে রেখে দিতে হবে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পালন
হাঁস চাষে বা পালনে নিঃশব্দ বিপ্লব নিয়ে এসেছে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস। কেউ আগে কল্পনা ও করেনি হাঁস মুরগির চেয়ে বেশি ডিম দেয় বা দিতে পারে। হাঁস থেকে রীতীমত ব্যবসা করা যায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস এই বিপ্লব নিয়ে এসেছে। গ্রামের মানুষরা যদি সুযোগ পায় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুষবার- তাহলে আমাদের গ্রামীন অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নতি ঘটতো। ঘরে ঘরে এতো অভাব আর থাকতো না।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ডিমের একটা পচন্ড সুবিধা হল- এই ডিম খাওয়ার ব্যাপারে ভোক্তার কোন বায়নাক্কা নেই- এ ডিম খাব না, দেশী হাঁসের ডিম খাব। যে অসুবিধা মুরগি ডিমের বেলায় আছে। অনেক মানুষকে হাটে বাজারে ডিম বিক্রেতাকে বলতে শুনা যায়, ''না বাপু আমাকে পোল্ট্রির ডিম দিও না। দেশী মুরগির ডিম দাও!"
'পোল্ট্রির ডিম' মানে উন্নতজাতের ফার্মে পোষা মুরগির ডিম। অথচ হাঁসের ডিমের বেলায় এই কথা কখনও শোনা যায় নি। বরং যে কোন প্রকার হাঁসের ডিমই সকলেই জন্যে সমানভাবে প্রিয়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের ব্যবসা তথা পালনে সুবিধার জন্যে আমাদের বর্তমানে সরাকার ও বেশ আগ্রহী। এই কারণে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে যে কেউ ঘরোয়া বা বৃহৎ আকারে হাঁস-মুরগি পালনের জন্য সরকার থেকে অর্থ ঋণ নিয়ে খামারকে আরও বৃহৎ আকারে সাজতে পারে। এতে তেমনই দেশের প্রোটিন যুক্ত খাবারের অভাব ও মিটবে।
শুধু সরকারই নয়। বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক দারিদ্র্য সীমার নিচের মানুষদের ওপরে তোলার জন্য খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস চাষের জন্য অনুদান এবং ঋণ প্রদান করছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বনাম অন্য পাঁচটা মুরগি
আগেই বলেছি, মুরগির থেকে হাঁস পালনে সুবিধা অনেক বেশি। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস বছরে ২৮০-৩০০ ডিম দেয়। মুরগি দেয় এর কিছু কম। হাঁস ব্যবসায়ের উপযোগী একনাগাড়ে ২/৩ বছর ডিম দিয়ে যাবে কিন্তু উন্নত জাতের দো-আঁশলা মুরগি লাভের খাতিরে ডিম দেবে মোটে দেড় বছর। খাঁকি ক্যাম্পবের বাচ্চা মাদি ১৭ থেকে ১৮ সপ্তাহে ডিম দেয়। কিন্তু উন্নত জাতের মুরগি ২১ সপ্তাহের আগে লাভজনক ভাবে ডিম দেয় না। আরো সুবিধা হলো- মুরগি সারাদিনে যে কোন সময় ডিম দিতে পারে। হাঁস সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল নয়টার মধ্যে যা ডিম দেবার দিয়ে দেবে। এই কারণে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পোষায় পরিশ্রম কম।
খাঁকি ক্যাম্পবেল বাচ্চার প্রতিপালন
বাচ্চা তোলার আগে আপনার প্রথম কাজ হবে বাচ্চা যেখানে থাকবে সেটা ঠিক-ঠাক করা। বাচ্চা হাঁস রাখতে হবে তারের জালের ওপর। এতে বাচ্চারা কম রোগ-ব্যাধিতে ভোগে। তারের জাল মেঝে থেকে দেড়ফুট মতো উঁচুতে থাকবে। ফলে মল মুত্র সহজে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়া যাবে।
বাচ্চার জন্য প্রয়োজনীয় উত্তাপ
প্রথম অবস্থার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁস বাচ্চার জন্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়। জীবনের প্রথম কয়েক দিন ওদের তাপ দিতে হবে ৩০০ সেঃ (৮৫০ ফাঃ) থেকে ৩২০ সেঃ (৯০০ ফাঃ) তারপর প্রতিদিন ২.৮০ সেঃ। (৫০ ফাঃ) করে তাপ কমিয়ে আনতে হবে যতদিন না ২৪০ সেঃ (৭৫০ ফাঃ) তাপমাত্রা হাচ্ছে। ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে হাঁসকে মেঝেতে ছাড়া যেতে পারে। মেঝেতে ছাড়ার আগে হাঁসের জন্য পুরু স্তরের বিছানা পেতে দিতে হবে (Deep litter) বিছানা তৈরি করা যাবে ৫" গভীর তুষ আর কাঠের গুঁড়ো ছড়িয়ে।
ঘেরার মধ্যে হাঁস পালতে হলে খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পিছু তিন বর্গফুট জায়গা দিতে হবে। যদি ওদের চরে বেড়াবার জন্য ফাঁকা জায়গায় ব্যবস্থা থাকে তবে হাঁস পিছু রাতের আস্তানা হবে দুই বঃ ফুঃ। চরে বেড়াবার জন্যে ফাঁকা জায়গাটির আয়তন হবে হাঁস পিছু ১০ বর্গফুট। হাঁস পিছু জায়গা নিচের মতো হবে।
বয়স (সপ্তাহ) মেঝেতে জায়গার পরিমাণ
০-১ ৪ ভাগের ১ বর্গফুট
১-২ ৩ ভাগের ১ বর্গফুট
২-৩ ২ ভাগের ১ বর্গফুট
৩-৭ দেড় বর্গফুট
হাঁস পালতে পানির প্রয়োজনীয়তা
হাঁস মূলত জলচর জীব। এই কারণে অনেকে মনে করেন পানি ছাড়া হাঁস পোষা সম্ভব নয়। তবে আমি এই বইতে পানি ছাড়া হাঁস পালনের কয়েকটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছি। এতে করে হাঁস পালতে পানির প্রয়োজনীয়তা শুধূ খাবার সময়েই হবে। কারণ, এই ব্যবস্থায় ধরে বেঁধে হাঁস পুষলেও পানির প্রয়োজনীয়তা কথা ভুললে চলবে না।
বিশেষ করে খাবার দেবার সময় পানির ভোলা যাবে না। যখনই খাবার দেয়া হবে। তখনই যেন তার সথে থাকে। মনে রাখতে হবে হাঁস খাবার মুখে দিয়েই পানি মুখে নেয়। পানির আরো দরকার হাঁসের ঠোঁট এবং চোখ পরিষ্কার জন্য। গ্রামীন পরিবেশে বড় মাটির গামলা পানির বিকল্প জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের পানিতে সাঁতার দেবার কোন দরকার হয় না। বরঞ্চ সাঁতার কাটলে ডিমের পরিমাণ কমে যেতে পারে। তবু যারা পানির জন্য নালা করতে চান তারা নালা করবেন এইভাবে- ঘরের সমান লম্বা, ১৫" চওড়া এবং ৯" গভীর নালা। ৩/৪ সপ্তাহ পরে হাঁকে পানিতে ছাড়া যেতে পারে। তবে সেটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করবে।
উক্ত নালায় পানি সরবরাহ করার সময় মনে রাখতে হবে- সেই যেন প্রতিদিন একবার অন্তত বদলানো যায়।
অনেক সময় এই কাজটি করা বেশ কষ্টকর বলে মনে হয়। কারন বদ্ধ খামারের নালা থেকে পানি পরিষ্কার করে নতুন পানি সরবরাহ করা শুধু কষ্টকর নয় বরং বেশ পরিশ্রমের কাজ।
কিন্তু এই কাজটি না করা হলে হাঁস রোগাক্রান্ত হলে পড়তে পারে। মনে রাখতে হবে, খাঁকি ক্যাম্পবেল অতি উন্নত ধরনের হাঁস। নোংরা পানিতে কেলি করলে ব্যাধি হতে পারে। তার চেয়ে পানি না দেওয়া ভালো।
এই কারনে খামারের মধ্যে একান্ত যদি নালা রাখা প্রয়োজন হয় তবে নালার পানি দিনে অন্তত একবার পাল্টে দিতেই হবে।
পুকুর বা জলাশয়ে খোলা জায়গায় হাঁস পুষলে এই সমস্যা যদি ও থাকে না। কারণ সেখানে প্রতিনিয়ত পানি পাল্টে দেবার সমস্যা নেই। তবু ও নিরাপত্তার খাতিরে এমন খোলাভাবে হাঁস চাষে অনেকেরই আপত্তি।
তবে আমি আগেই বলেছি, পানি হাঁসের জন্যে প্রয়োজনীয় তখনই যখন হাঁসের ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর দরকার হয়ে পড়ে।
কারণ, পানি ছাড়া হাঁস পুষলে সেই হাঁসের ডিম কখনও নিষিক্তি হয় না। আর অনিষিক্ত ডিম থেকে কখনই বাচ্চা ফোটানো যায় না।
হাঁসের প্রজনন কাজে পানি প্রয়োজন হয় জলকেলির জন্য। জলকেলির ছাড়া মাদি- মদ্দা প্রজননে উৎসাহ পায় না। সুতরাং ডিম নিষিক্ত করার জন্যে খামারী তার খামারে পানির ব্যবস্থা করতে পারেন।
তবে আগেই বলেছি, বদ্ধ জায়গায় পানির ব্যবস্থা করলে প্রতিদিন পানি পাল্টে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে। একটু পরিশ্রম হবে তাতে। কিন্তু পরিশ্রম না করলে সত্যিকারের ফললাভই বা কবে হয়?
হাঁসের খাবার
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস পুকুর/জলাশয়ে ছেড়ে পুষলে খাবারের অনেক সাশ্রয় হয়। কারণ হাঁস তখন জলজ উদ্ভিদ কীট- পতঙ্গ, মাছের ডিমপোনা, গুগলি, শামুক, গেড়ি খেয়ে বেড়ায়। কিন্তু ঘেরার মাঝে হাঁস পালন করলে তখন তাকে পুরো খাবারই খাওয়াতে হবে। পুরো ৮ সপ্তাহের জন্য হাঁস পিছু লাগবে ৪/৫ কেজি সুষম খাদ্য এবং ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত সেটা দাঁড়বে সাড়ে বরো কেজি।
পুর্ণবয়ষ্ক হাঁস হড়ে দিনে ১৩০ থেকে ১৫০ গ্রাম সুষম খাদ্য খায়। খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসকে সর্বদা সুষম খাদ্য ভিজিয়ে খাওয়াতে হবে। এই ব্যবস্থায় খাবারের অপচয় কম হয় এবং হাঁস চট করে গিলে নেয়।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের দৈনিক খাবার দেওয়ার হার নিচে দেয়া হলো।
০-৪ সপ্তাহ - দৈনিক ৪ বার।
৪-৮ সপ্তাহ - দৈনিক ৩ বার।
৮ সপ্তাহের উপর - দৈনিক ২ বার।
খাবার জায়গার পরিমাণ
০-২ সপ্তাহ আধা ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
২-৪ সপ্তাহ ১ ইঞ্চির ৪ ভাগের ৩ ভাগ বাচ্চা প্রতি।
৪-৭ সপ্তাহ দেড় ইঞ্চি বাচ্চা প্রতি।
হাঁসের সুষম খাবারের তালিকা
ঠিক সময়ে ডিম পাওয়ার জন্য ক্যাম্পবেল হাঁসের সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। খামারকারী নিজেও এই সুষম খাদ্য নিজে তৈরি করে নিতে পারে। এতে দামে যেমন সস্তা হয়, এবং নিজেও প্রচন্ড বল পেতে পারেন যে তিনি তাঁর হাঁসকে ভাল খাবার খাইয়াছেন।
সুষম খাদ্য তৈরির নিয়ম নিচে দেয়া হলো-
প্রতি ১০০ ভাগ খাবারের মধ্যে-
গম - ৩০ ভাগ;
ধান ভাঙ্গা - ৪০ ভাগ;
কালো তিল খোল - ১০ ভাগ;
সয়াবিন খোল - ১০ ভাগ;
শুঁটকি মাছের গুঁড়ো - ৮ ভাগ;
ঝিনুক ভাঙ্গা - ২ ভাগ।
ভিটামিন এ, বি২, ডি৩, ই, কে প্রতি ১০০ কেজি খাবারের ১০ গ্রাম মেশাতে হবে।এবং প্রতি কু্যইন্টাল হিসেবে কোলিন ক্লোরাইড দিতে হবে ৫০ গ্রাম। হাঁস ৬_৮ সপ্তাহ হলে গমের পরিমান কমিয়ে ছত্রাক মুক্ত মেশানো যেতে পারে। কোলিন ক্লোরাইড যেমন দিতে হবে বৃদ্ধির জন্য তেমনি ককসিডিয়া রোড় বন্ধ করার জন্য দিতে হবে ককসিডিওস্ট্যাট।
ককসিডিওস্ট্যাট দিতে হবে হাঁসের ১২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত। মেশাবার হার প্রতি ১০০ কেজি খাবারের জন্য ৫০ গ্রাম। হাঁসকে গুগলি দিলে শুঁটকি মাছের পারিমান কমিয়ে দিতে হবে। এতে খাবারের দাম ও কমে যাবে।
মাংস  ডিম বিপণন
হাঁসের ডিম বিক্রির জন্য খুব একটা কাঠ-খড় পোড়াতে হয় না।কারন, হাঁসের ডিমের বাজার অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে।
তবে মাংস বিক্রির জন্য উদ্যেগ নিতে হবে। ডিম কীভাবে বাজারজাত করা যাবে এই সম্পর্কে ইতি পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁসের রোগ-ব্যাধি ও তার প্রতিকার
এই জাতের হাসের খুব একটা রোগ-ব্যাধি হয় না। তবে একেবারেই যে রোগ-ব্যাধিতে হাঁস আক্রান্ত হয় না। সেটা বলা ভূল। এই রোগ-ব্যাধি নির্ভর করে খামারকারীর পরিচর্যার ওপর।
যদি খামারী স্বাস্থ্যসম্মতভাবে হাঁস পালন করেন এবং উপযোগী খাবার খাওয়ান তাহলে এই রোগ-ব্যাধির পরিমান একেবারেই থাকবেনা।
তবে খামারকারীকে হাঁসের মারাত্নক দুটি রোগ ডাক-প্লেগ ও ডাক-কলেরার ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দুটি টিকার জন্যই খামারকারী খোঁজ নিতে পারেন নিকটস্থ পশু চিকিৎসা কেন্দ্র। তারা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও পেতে পারেন।
কেস স্টাডি:
হাঁস পালনে নিজেকে বদলে দিয়েছেন জাহানারা বেগম
কারও দয়া-দাক্ষিণ্যে নয়, কষ্টার্জিত আয়ের দ্বারা সুখের সংসার পরিচালনা করে যাচ্ছেন সুনামগঞ্জের সফল গৃহবধূ জাহানারা বেগম। স্বামীর অসচ্ছলতা আর সংসারের টানাপোড়েনে জাহানারা তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেন। শপথ নেন নিজে একটা কিছু করার। যোগ দেন এনজিও সংস্থা ভার্ডের সমিতিতে। সমিতির সদস্য হিসেবে নিয়মিত জমা দেন সঞ্চয়ের টাকা। ২০০৫ সালে এনজিও সংস্থা ভার্ড সংগঠনভুক্ত দুস্থ মহিলাদের বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি পরিবারকে ভিটেবাড়ি নির্মাণের জন্য ৪০ হাজার টাকার অনুদান প্রদান করে। জাহানারা অনুদানের অর্থ ও জাতীয় মহিলা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ১০ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ এবং তার পালিত কিছু হাঁস, মোরগ, গরু ও ছাগল বিক্রির টাকা দিয়ে তৈরি করেন বসতবাড়ি। অন্য একটি সমিতিতে নিয়মিত সঞ্চয়ী টাকা জমা দিয়ে পাড়া-মহল্লায় টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিনসহ স্যানিটেশন সুবিধা গ্রহণ করেন। সমিতিতে সঞ্চয়ের পাশাপাশি শুরু করেন হাঁস পালন। হাঁসের ডিম বিক্রি করেই মেয়ে মাফরোজা সিদ্দিকা বুশরা ও ছেলে মাহবুব আল মুবাশ্বিরের লেখাপড়ার যাবতীয় খরচসহ সংসারের খরচ জোগান দেন।
বর্তমানে জাহানারার রয়েছে ৪টি রাজহাঁস, ৩০টি পাতিহাস, একটি গাভী, ছয়টি মোরগ। ন্যূনতম পুঁথিগত বিদ্যা থাকলেও কঠোর পরিশ্রমী এই নারী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নামক সংগঠনের সদস্য হয়ে নিজেকে বদলে দেয়ার দীক্ষা গ্রহণ করেন। আত্মবিশ্বাসই তাকে কাজে প্রেরণা জুগিয়েছে।
কোনো কিছুর জন্য তাকে কারও কাছে হাত পাততে হয় না। জাতীয় মহিলা সংস্থার ক্ষুদ্র খণের যাবতীয় পাওনা টাকা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই তিনি পরিশোধ করেছেন। বর্তমানে তিনি স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল।
নাজিরপুরে হাঁস পালন করে স্বাবলম্বী সাজেদা বেগম
নাজিরপুর (পিরোজপুর) সংবাদদাতা : পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার চৌঠাইমহল গ্রামের সাজেদা বেগম হাঁস পালন করে এখন সচ্ছল। স্বামী আল-আমীন দুই মেয়ে ও শশুর-শ্বাশুরী নিয়ে ছয়জনের সংসার তিনি ভ্যান চালিয়ে জবিকা নির্বাহ করেন। ৬ জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন সাজেদা বেগমের স্বামী আল-আমীন। ২০০৯ সালে সিডর পরবর্তী (আইডিবি)-এর অর্থায়নে ফায়েল খায়ের প্রোগ্রামের মাধ্যমে মুসলিম এইড বাংলাদেশের সুদমুক্ত ঋণ দেয়ার খবর শুনে, সাজেদা বেগম ঋণ নেয়ার জন্য চৌঠাইমহল সমিতির সদস্য হন। প্রথমত ১০,০০০ টাকা ঋণ নিয়ে ১শ' হাঁস কিনে খামার শুরু করেন সাজেদা বেগম। কিছু দিন যেতে না যেতেই হাঁসগুলো দেয়া শুরু করে ডিম। সেই ডিমগুলো সাজেদার স্বামী আল-আমীন বাজারে বিক্রী করে কিছু টাকা জমিয়ে আর ১শ' হাঁস ক্রয় করেন বর্তমানে সাজেদা বেগম মোট ২শ' হাঁস পালন করছেন। সাজেদা বেগম তার হাঁসের খামার প্রসার করার জন্য ক্রমান্বয়ে ২য় কিস্তিতে আরো ১৮০০০ এবং ৩য় কিস্তিতে ২০,০০০ সর্ব মোট-৪৮,০০০ টাকার ঋণ নেয়। বর্তমানে সাজেদার হাঁসের খামার থেকে দৈনিক ডিম বিক্রী করে ১৫০-১৮০ টাকা, তার প্রতি মাসে ডিম বিক্রীতে ৫/৬ হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়ের টাকা তার সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে দিয়েছে এবং সাজেদার মুখে হাসিও ফুটেছে; এখন তিনি সচ্ছল। এ ব্যাপারে সাজেদা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তাকে সচ্ছলতা করতে সুদমুক্ত ঋণ অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে এবং আমি ওই সংগঠনের উপর খুবই খুশি। কারণ, আমার বিপদকালে আমাকে কেউ একটা টাকা ধারও দেয়নি। মুসলিম এইড আমাকে এক এক করে ৩ কিস্তিতে ৪৮০০০ টাকা দিয়েছে।
নাজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সওগাতুল ইসলাম জানান, সুদমুক্ত ঋণ অসহায়দের সচ্ছলতা করতে খুব বেশী সহায়তা করে। মুসলিম এইড-এর নাজিরপুর উপজেলা শাখার ম্যানেজার মোঃ মিজানুর রহমান জানান, সাজেদা বেগম শুধু ঋণ নয় তাকে মুসলিম এইড স্বাস্থ্য সচেতনতা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, যৌতুক প্রথা ও বাল্যবিয়ে রোধ এবং সামাজিক সচেতনতাসহ পরামর্শ ও সহযোগিতা করে  আসছে। মুসলিম এইড বাংলাদেশ নাজিরপুর উপজেলা শাখা থেকে সুদমুক্ত  ঋণ নিয়ে অনেক  দুস্থ পরিবারের সচ্ছলতা  ফিরে এসেছে।
সুত্র: http://www.dailysangram.com/
হাঁসের খামারে রিজিয়ার স্বপ্ন পূরণ
হাঁস পালন করে সচ্ছলতা এসেছে রিজিয়া বেগমের সংসারে। শত শত হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক শব্দে এখন মুখরিত থাকে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জের বড়তলি গ্রামের রিজিয়ার বাড়ি। অসচ্ছলতা বলতে যা বোঝায় তা আজ আর রিজিয়া বেগমের সংসারে নেই। হাঁস এনে দিয়েছে রিজিয়ার সংসারে সুখের হাসি। তার খামারে বর্তমানে রয়েছে ৬৫০টি হাঁস। এ হাঁসের খামার করেই রিজিয়া এক এক করে পূরণ করে চলেছে তার জীবনের স্বপ্ন।
প্রায় এক যুগ আগে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে রিজিয়া বেগম একদিন বয়সী ১০০টি হাঁসের বাচ্চার একটি খামার গড়ে তোলেন। প্রথম বছরেই রিজিয়ার এ প্রকল্পটি লাভের মুখ দেখতে পায়। তখন নতুন আশায় বুক বাঁধেন তিনি। অতঃপর দ্বিতীয় দফায় ৮ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করে আরও ৩০০টি হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করেন তিনি। রিজিয়া বেগমের স্বামী তাইজুল ইসলাম এ কাজে তাকে সহায়তা করতে থাকেন। এ অবস্থায় রিজিয়া বেগমের কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। খামারের পরিধি বড় করার জন্য বিভিন্নভাবে মূলধন সংগ্রহের চেষ্টা করতে থাকেন। রিজিয়া বেগম সব বিষয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেন। তার আগ্রহ ও ইচ্ছাশক্তি দেখে পরিকল্পিত উপায়ে সঠিকভাবে খামার পরিচালনার জন্য ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন তাকে ৬ দিনব্যাপী উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রশিক্ষণের পর ব্যবসার প্রতিটি দিক তার চোখের সামনে আয়নার মতো স্বচ্ছভাবে দৃশ্যমান হয়।
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের পর রিজিয়া বেগমকে ২০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ প্রদান করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। রিজিয়া সফলভাবে উদ্যোক্তা ঋণের প্রথম দফার ঋণ পরিশোধ করে দ্বিতীয় দফায় ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। এভাবে পর্যায়ক্রমে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা গ্রহণ করেন রিজিয়া বেগম। এ অবস্থায় রিজিয়া বেগমের খামারে হাঁসের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৫০টিতে। সম্প্রতি হঠাৎ করেই অজ্ঞাত রোগে তার খামারের ৭০০ হাঁস মরে যায়। এতে তার হাঁসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৫০টিতে। তবু হাল ছাড়েননি রিজিয়া বেগম।
রিজিয়া বেগম জানান, হাঁসের খামারে লাভের টাকা দিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে তিনি ১২.৫ শতক জমি ক্রয় করেছেন। উদ্যোক্তা ঋণের তৃতীয় দফায় ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে পরিকল্পিত উপায়ে খামারের আকার বৃদ্ধি করেছেন। খামারের আয় থেকে সংসারের বাড়তি আয় করার লক্ষ্যে ভাড়ায় চালানোর জন্য স্বামীকে একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছেন। খামরের আয় দিয়ে থাকার ঘর পাকা করাসহ কিছু আসবাবপত্র ক্রয় করেছেন। এছাড়াও নিজের জন্য কিছু স্বর্ণালঙ্কার তৈরি করেছেন রিজিয়া বেগম। তার সংসারে আজ রঙিন টেলিভিশন, খাট, শোকেস, মোবাইলফোনসহ প্রয়োজনীয় সব কিছুই আছে। ক্রয় করেছেন একটি বিদেশি গাভী। গাভীর দুধ ও হাঁসের ডিম বিক্রি করে বেশ সচ্ছলভাবেই চলছে রিজিয়ার সংসার।
রিজিয়া জানায়, দরিদ্র পিতার সংসারে গ্রামের আর ১০টি ছেলেমেয়ের মতো বেড়ে ওঠা হয়নি তার। নানা রকম সামাজিক বঞ্চনার ভেতর দিয়ে বেড়ে উঠেন রিজিয়া বেগম। মাত্র ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলি গ্রামের আবদুল খালেকের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তার বিয়ে হয়। সতিনের ঘরে এসে সুখী হতে পারেননি রিজিয়া বেগম। বিয়ের এক বছর পর রিজিয়ার কোলজুড়ে আসে এক পুত্রসন্তান। অভাবের সংসারে এরপর থেকে রিজিয়া বেগমের ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। স্বামী ও সতিনের নির্যাতন সইতে না পেরে বিয়ের দেড় বছরের মাথায় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসেন রিজিয়া বেগম। শুরু হয় একমাত্র ছেলেকে নিয়ে রিজিয়া বেগমের বেঁচে থাকার লড়াই। এর একবছর পর মোহনগঞ্জের বড়তলি গ্রামের মোঃ তাইজুল ইসলাম (বর্তমান স্বামী) রেজিয়াকে বিবাহ করেন। কিন্তু তাইজুলের পিতা তাদের এ বিবাহ মেনে নেয়নি। এ অবস্থায় রিজিয়া বেগম ও তার স্বামী অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়।
রিজিয়া বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে এবং তার স্বামী রিকশা চালায়; চলতে থাকে তাদের সংসার। এভাবে দুঃখ-কষ্ট ও দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করতে করতে রিজিয়া বেগমের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয়ের সৃষ্টি হয়।
এ সময় রিজিয়া বেগম জানতে পারেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন বড়তলি গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। বড়তলি গ্রামের অনেক মহিলাই ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সমিতিতে সদস্য হয়ে ঋণ গ্রহণ করেছে। তারা বিভিন্ন আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকা- বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। রিজিয়া বেগম বড়তলি মহিলা উন্নয়ন সমিতিতে গিয়ে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের ফিল্ড অর্গানাইজারকে তার বর্তমান অবস্থার কথা জানান। এভাবে ২০০০ সালে রিজিয়া বেগম ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বড়তলি মহিলা উন্নয়ন দলের সদস্য হন এবং সাপ্তাহিক পাঁচ টাকা করে সঞ্চয় জমা করতে থাকেন।
কয়েক মাস পর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন হাঁস-মুরগি পালনের ওপর তিনদিনের একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। রিজিয়া বেগম ওই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন থেকে মাত্র ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে গড়ে তোলেন একটি হাঁসের খামার তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
সততা আর অধ্যবসায়ের ফলে একেবারে শূন্য থেকে আজ একটি সচ্ছল জীবন নিশ্চিত করতে পেরেছেন রিজিয়া বেগম। একজন সফল উদ্যোগী নারী হিসেবে তিনি এখন এলাকার অন্য নারীদের কাছে অনুকরণীয়। রিজিয়া বেগমের এ উদ্যোগটির চাহিদা কখনও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। রিজিয়া বেগম বিশ্বাস করেন বড় ধরনের ঋণ পেলে আগামীতে তার এ খামার আরও বড় করতে পারবেন।

সংগৃহীত ও সংকলিত
তথ্য: 
তথ্য আপা প্রকল্প