Pages

Showing posts with label BUSINESS. Show all posts
Showing posts with label BUSINESS. Show all posts

Friday 4 October 2019

ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল এক নারীর কারণে

ট্রয় নগরী ধ্বংস হয়েছিল এক নারীর কারণে। তার নাম হেলেন। এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু Stefanie Isak নামটি আমরা অনেকেই জানি না। ১৬ বছরের এই ইহুদী মেয়েটির কারণে সারা দুনিয়া ধ্বংস হবার উপক্রম হয়েছিল।
১৯০৬ সাল, ভিয়েনা শহরে বসবাসরত মেয়েটির বয়স তখন ১৬। ধনী ব্যবসায়ীর মেয়ে। একদিন রাস্তার ধাঁরে বসে থাকা এক আর্টিষ্ট কে দিয়ে শখ করে মেয়েটি তার একখানা পোট্রেট বানালো। অসম্ভব রূপবতী এই নারীর ছবি আঁকতে গিয়ে মনের অজান্তে আর্টিষ্ট তার প্রেমে পড়ে গেল।
আর্টিষ্ট এর বয়স তখন ১৮। ছেলেটির স্বপ্ন চিত্রশিল্পী হওয়া। একাডেমি অব ফাইন আর্টস্ ভিয়েনা (Academy of Fine Arts Vienna) তে চেষ্টা করছে ভর্তি হবার জন্য। কিন্তু পারছে না। ছেলেটির অবসর কাটে রাস্তার ধাঁরে ছবি একে। আবার মাঝে মাঝে পথচারীদের পোট্রেইট এঁকে দু চার পয়সা রোজগার করে।
শিল্পীদের মন অনেক রোম্যান্টিক হয়। এটাই স্বাভাবিক। তো পরদিন মেয়েটিকে সে প্রোপোজ করে। মেয়েটি হা কিংবা না, কিছুই বলেনা।
ছেলেটি মাঝে মাঝে মেয়েটির বাড়ির সামনে গিয়ে বসে থাকতো। একপলক দেখার জন্য। বিশাল বাড়িটি উচু প্রাচীরে ঘেরা। বিশাল লোহার গেট। মাঝে মাঝে ছেলেটি তার পোষা কুকুরকে গেটের ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিত বাড়ির ভিতরে। কুকুরটির মুখে থাকত প্রেম পত্র।
কুকুরটি ছিল ছেলেটির অনেক প্রিয় ভিয়েনা আসার সময় তার মা এই কুকুরটিকে তার সাথে দিয়েছিল। বলা যায়, কুকুরটি ছিল মায়ের দেয়া শেষ উপহার। কারণ, এইপর আর কোনদিন ছেলেটির দেখা হয়নি তার মা ক্লারা (Clara) এর সাথে। তিনি মারা যান। মেয়েটির পরিবার বিষয়টি আমলে নিলো। ছেলেটি চাল চুলোহীন, রাস্তার ছেলে। তার উপরে non-Jewish… এই সম্পর্ক কিছুতেই সম্ভব নয়। আর ছেলেটির 'ভবিষ্যৎ' বলে কিছু নেই। তারা ছেলেটিকে বারবার বারণ করে দিলো। কিন্তু প্রেম কি আর বারণ শোনে?
ছেলেটি সুযোগ পেলেই মেয়েটিকে দূর থেকে দেখতো। উত্তর না এলেও প্রেম পত্র দিতো। তো একদিন প্রেমপত্র সমেত কুকুরটিকে আবার পাঠালো মেয়েটির বাড়িতে। কিন্তু এইদিন আর কুকুরটি ফিরে এল না। ছেলেটি সারারাত অপেক্ষা করে, সকালে চলে গেল। পরদিন আবার মেয়েটির বাড়ির সামনে গেল। বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে ছেলেটি তার সেই প্রিয় কুকুরটির মৃতদেহ খুঁজে পেল। নির্মমভাবে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
সেইদিন কাঁদতে কাঁদতে ছেলেটি চলে এলো। আর কোনদিন ঐ বাড়ির সামনে যায় নি সে। চালচুলোহীন ওই রাস্তার ছেলেটি পরে যা করেছিলো তা ইতিহাস! বলা যায় রাস্তার সেই ছেলেটি নিজ হাতে গত শতাব্দীর ইতিহাস লিখে গেছে এমনকি,
পরবর্তীতে তার পোষা কুকুর Blondi, এতটাই বিখ্যাত হয়েছিল যে তার wiki page এর সাইজ অনেক বিখ্যাত সেলিব্রেটিদের চেয়ে বড়!!
অনেক পরে মেয়েটি নাকি বলেছিল, সে ছেলেটিকে মনে মনে ভালবাসত। সাহস করে বলতে পারে নি। যাই হোক, ছেলেটির
নাম ছিল - 'এডলফ হিটলার'! হ্যা; হিটলার ছোটবেলায় পোষ্ট কার্ড আঁকিয়েই জীবিকা নির্বাহ করতেন।

Saturday 13 August 2016

ফেরিওয়ালা থেকে যেভাবে আকিজ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকিজ আকিজউদ্দীনের জীবনের গল্প


By Mr Rain
আকিজউদ্দীন, শেখ (১৯২৯-২০০৬)  শিল্পপতি, শিল্পোদ্যোক্তা, সমাজসেবক। শেখ আকিজউদ্দীন ১৯২৯ সালে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার মধ্যডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম মতিনা বেগম। পিতা শেখ মফিজউদ্দীন ধান, চাল, নারিকেল এবং নিত্য ব্যবহার্য জিনিসের আড়তদারি ব্যবসা করতেন। শেখ আকিজউদ্দীন বাবা-মার একমাত্র সন্তান ছিলেন। পিতা শেখ মফিজউদ্দীনও ছিলেন তাঁর পিতামাতার একমাত্র সন্তান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের পরিবর্তে বাবার স্বাধীন ব্যবসায়ী চেতনা আয়ত্ব করেছিলেন শেখ আকিজউদ্দীন।

১৯৫২ সালে শেখ আকিজউদ্দীন প্রথম বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসাটির ধারণা তিনি পেয়েছিলেন নিতাই চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তির নিকট থেকে। সেই সময়ের বিখ্যাত ‘বিধু’ বিড়ির মালিক বিধুভূষণ ছিলেন তাঁরই এক বন্ধুর বাবা। বিধুভূষণের অনুপ্রেরণাতেই আকিজউদ্দীন বিড়ির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর নিজ এলাকায় বেজেরডাঙ্গা রেলস্টেশনের পাশে একটি মুদি দোকান প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৫৪-৫৫ সালে এই দোকানে তাঁর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ষাট হাজার টাকা। এক রাতে  তাঁর পুরো দোকানটি পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কিন্তু অচিরেই তিনি গড়ে তোলেন নতুন দোকান। এবার তাঁর মুলধনের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ টাকা। এরই পাশাপাশি আকিজউদ্দীন শুরু করেন ধান, পাট, চাল, ডাল ও গুড়ের খুচরা ব্যবসা।১৯৪২-৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় বাড়ি ছেড়ে জীবিকার সন্ধানে কলকাতা আসেন। আত্মীয় পরিজনহীন বিশাল কলকাতা শহরে আকিজউদ্দীনের একমাত্র আশ্রয়স্থল হলো শিয়ালদহ রেলস্টেশন। পাইকারি দরে কমলালেবু কিনে হাওড়া ব্রিজে ফেরি করে তাঁর স্বাধীন ব্যবসাজীবন  শুরু হয়। এই জন্য পুলিশকে দুই টাকা ঘুষও দিতে হয় তাঁকে। সারাদিন কমলা বিক্রি করে রাতে ক্লান্ত হয়ে শিয়ালদহ স্টেশনে বালিশ ছাড়া খবরের কাগজ বিছিয়ে ঘুমাতেন তিনি। সারাদিনের একমাত্র খাদ্য ৬ পয়সার ছাতু। একদিন স্থানীয় জাকারিয়া হোটেলের মালিকের নজরে পড়েন তিনি। তাঁর সদয় বিবেচনায় সেই হোটেলের এক পাশে আশ্রয় জোটে তাঁর। এর মধ্যে রাস্তার পাশে ভ্যান গাড়িতে মুদি দোকান দেন। দোকানের নাম ‘নিলামওয়ালা ছ’আনা’। দোকানের প্রতিটি জিনিসের দর ছিল ছ’আনা। আকিজউদ্দীন হিন্দি ভাষা রপ্ত করে হিন্দি ছড়া কেটে জিনিস বিক্রি করতেন। একদিন আকিজউদ্দীনকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেল। সেখানে তিন দিনের জেল ও পাঁচ টাকা জরিমানা হয় তাঁর। আকিজউদ্দীন জেল থেকে বের হয়ে পুরো দোকানটি বিক্রি করে দেন। একদিন কলকাতাতে পরিচয় হয় এক পেশোয়ারী ব্যবসায়ীর সাথে। তাঁর সঙ্গে আকিজউদ্দীন পাড়ি জমালেন পেশোয়ারে। জমানো টাকা দিয়ে নতুন করে শুরু করলেন ফলের ব্যবসা। সেই সাথে শিখে নিলেন পশতু ভাষা। এভাবে  সেখানে কেটে গেলো দুই বছর। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ক্রান্তিকাল। অবশেষে দশ হাজার টাকার নগদ মুনাফা নিয়ে শেখ আকিজউদ্দীন ফিরে এলেন নিজের বাড়িতে।

ষাটের দশকে শেখ আকিজউদ্দীন চলে আসেন যশোরের সীমান্তবর্তী থানার নাভারন পুরাতন বাজারে। এখানে তিনি গড়ে তোলেন দেশের সর্ববৃহৎ আকিজ বিড়ি ফ্যাক্টরি। এরপর ধাপে ধাপে তিনি গড়ে তোলেন এস এ এফ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (১৯৬০), ঢাকা টোবাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (১৯৬৬), আকিজ প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (১৯৭৪), আকিজ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি লিমিটেড (১৯৮০), নাভারন প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (১৯৮০), জেস ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিমিটেড (১৯৮৬), আকিজ ম্যাচ ফ্যাক্টরি লিমিটেড (১৯৯২), আকিজ জুট মিল্স লিমিটেড (১৯৯৪), আকিজ সিমেন্ট কোম্পানী লিমিটেড (১৯৯৫), আকিজ টেক্সটাইল মিল্স লিমিটেড (১৯৯৫), আকিজ পার্টিক্যাল বোর্ড মিল্স লিমিটেড (১৯৯৬), আকিজ হাউজিং লিমিটেড (১৯৯৭), সাভার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (১৯৯৮), আকিজ ফুডস এন্ড বেভারেজ লিমিটেড (২০০০), আকিজ অনলাইন লিমিটেড (২০০০), নেবুলা ইঙ্ক লিমিটেড (২০০০), আকিজ কর্পোরেশন লিমিটেড (২০০১), আকিজ কম্পিউটার লিমিটেড (২০০১), আকিজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি লিমিটেড (২০০১), আফিল এ্যাগ্রো লিমিটেড (২০০৪) ও আফিল পেপার মিল্স লিমিটেড (২০০৫)। প্রায় বত্রিশ হাজার কর্মী তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে।

শেখ আকিজউদ্দীন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি  একজন সমাজসেবক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মোহাম্মদ শরীফ হোসেনের সহায়তায় ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আদ্-দ্বীন। বর্তমানে এই সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠান আদ্-দ্বীন মহিলা ও শিশু এবং চক্ষু হাসপাতাল সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। তাঁর অর্থায়নে পরিচালিত আকিজ কলেজিয়েট স্কুল প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই যশোর শিক্ষা বোর্ডের সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুনাম বহন করে আসছে। এছাড়া একটি এতিমখানা, একটি বালিকা বিদ্যালয় ও ফোরকানিয়া প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
শেখ আকিজউদ্দীনের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিলনা। তাঁর ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং তাঁর সকল শিল্প ইউনিটের এক একজন কর্ণধার। শেখ আকিজউদ্দীন ২০০৬  সালের  ১০ অক্টোবর  ৭৭ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।  [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]