Pages

Showing posts with label রাজনীতি. Show all posts
Showing posts with label রাজনীতি. Show all posts

Friday 4 October 2019

জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা আসলে কী? কোথা থেকে এলো এই আইন?

জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা আসলে কী? কোথা থেকে এলো এই আইন?
What is Article 370 and 35A?
৩৭০ ধারা বিলোপ করা হোক, এমন দাবি মাঝে মাঝেই শুনতে পাওয়া যায়। ৩৭০ ধারা কী, তার তাৎপর্যই বা কী, কাশ্মীরে গণভোটের কথা কেন উঠে আসে বারবার?
৩৭০ ধারা কী
৩৭০ ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর। এই ধারাবলে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ ১ ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়। এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত। ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে। কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক। ১৯৪৭ সালে, ব্রিটিশ ভারতকে ভারত ও পাকিস্তানে বিভাজন করে ভারতীয় সাংবিধানিক আইন কার্যকর হওয়ার সময়কাল থেকেই ভারতভুক্তির বিষয়টি কার্যকরী হয়।
অনুচ্ছেদ ৩৭০ কী কী মর্যাদা দিয়েছিল কাশ্মীরকে?
অনুচ্ছেদ ৩৭০ ভারতীয় রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরকে যে সকল সুবিধা দিয়েছিল তা হলোঃ
- নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকার স্বাধীনতা দেয়;
- পররাষ্ট্র সম্পর্কিত বিষয়াদি, প্রতিরক্ষা এবং যোগাযোগ বাদে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তাও দেয়।
এখন কী ঘটতে পারে?
সরকার কাশ্মীরে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ধোঁয়াশা রাখলেও সোশ্যাল মিডিয়াতে দুটো সম্ভাবনা নিয়ে জোরালো আলোচনা চলছে।
এক, বিজেপির বহু পুরনো নীতি অনুসারে সংবিধানের যে ৩৭০ ধারা কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয় তা অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে রাতারাতি বিলোপ করা।
আর দুই, রাজ্যটিকে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ - এই তিনভাগে ভাগ করে ফেলা, যাতে কাশ্মীরের স্বতন্ত্র স্বীকৃতি আপনা থেকেই বাতিল হয়ে যায়।
পেছনের কথাঃ
স্বাধীনতার পর প্রায় ৬০০টি রাজন্য পরিচালিত রাজ্যের সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করা হয়। ওই আইনে তিনটি সম্ভাবনার কথা রয়েছে।
প্রথমত স্বাধীন দেশ হিসেবে থেকে যাওয়া,
দ্বিতীয়ত, ভারতের যোগদান অথবা, পাকিস্তানে যোগদান। এ ব্যাপারে কোনও লিখিত ফর্ম না থাকলেও, কী কী শর্তে এক রাষ্ট্রে যোগদান করা হবে, তা রাজ্যগুলি স্থির করতে পারত।
তৃতীয়ত, অলিখিত চুক্তি ছিল, যোগদানের সময়কালীন প্রতিশ্রুতি রক্ষিত না হলে, দু পক্ষই নিজেদের পূর্বতন অবস্থানে ফিরে যেতে পারবে।
ভারতভুক্তির শর্ত হিসেবে জম্মু কাশ্মীরে সংসদ প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ- এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে ক্ষমতাধর। কাশ্মীরের ভারতভুক্তির ৫ নং উপধারায় জম্মু-কাশ্মীরের রাজা হরি সিং স্পষ্টত উল্লেখ করে দিয়েছিলেন যে তাঁর সম্মতি ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা আইনে এ রাজ্যের ভারতভুক্তি কোনও সংশোধনী আইনের মাধ্যমে বদলানো যাবে না। ৭ নং উপধারায় বলা ছিল যে এই ভারতভুক্তির শর্তাবলী ভবিষ্যৎ কোনও সংবিধানের মাধ্যমে বদলাতে বাধ্য করা যাবে না।
ভারতভুক্তি কীভাবে হল?
রাজা হরি সিং প্রাথমিক ভাবে স্থির করেছিলেন তিনি স্বাধীন থাকবেন, এবং সেই মোতাবেক ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে স্থিতাবস্থার চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। পাকিস্তান সে চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিল। কিন্তু জনজাতি এবং সাদা পোশাকের পাক সেনা যখন সে দেশে অনুপ্রবেশ করে, তখন তিনি ভারতের সাহায্য চান, যা শেষপর্যন্ত কাশ্মীরের ভারতভুক্তি ঘটায়। ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন। পরদিন, ২৭ অক্টোবর ১৯৪৭, গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন।
এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান ছিল খোলামেলা। ভারতের বক্তব্য ছিল এই ভারতভুক্তির বিষয়টি কোনও একজন শাসকের মতামতের ভিত্তিতে স্থির হতে পারে না, এর জন্য সে জায়গার অধিবাসীদের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। লর্ড মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন, “আমার সরকার মনে করে, কাশ্মীর আক্রমণকারীদের হাত থেকে মুক্ত হওয়ার অব্যবহিত পরেই সে রাজ্যের ভারতভুক্তির বিষয়টি রাজ্যের অধিবাসীদের দ্বারা স্থিরীকৃত হওয়া উচিত।” কাশ্মীরের ভারতভুক্তি যে সাময়িক সিদ্ধান্ত, তা ১৯৪৮ সালে জম্মু-কাশ্মীর সম্পর্কিত শ্বেত পত্রে ঘোষণা করে ভারত সরকার। ১৭ মে ১৯৪৯ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল এবং এন গোপালস্বামী আয়েঙ্গারের সম্মতিক্রমে জম্মু-কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাকে একটি চিঠি লেখেন। সে চিঠিতে তিনি বলেন, ভারত সরকারের স্থির সিদ্ধান্ত হল জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধান সে রাজ্যের অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়। সেই মতামতের প্রতিনিধিত্ব বহন করার উদ্দেশ্যেই গণপরিষদ গঠিত হয়েছে।
৩৭০ ধারা কীভাবে কার্যকর হয়েছিল?
মূল খশড়া দেওয়া হয়েছিল জম্মু কাশ্মীর সরকারকে। কিছু অদলবদলের পর ৩০৬ এ ধারা (বর্তমান ৩৭০) ২৭ মে, ১৯৪৯ সালে গণপরিষদে পাশ হয়। প্রস্তাব পেশ করে আয়েঙ্গার বলেন, যদিও ভারতভুক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে, তা সত্ত্বেও ভারতের তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে যে পরিস্থিতি তৈরি হলে গণভোট নেওয়া হোক, এবং গণভোটে ভারতভুক্তি যদি গৃহীত না হয়, তাহলে “আমরা কাশ্মীরকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করব না।“
৩৭০ ধারা কি সাময়িক অবস্থান?
সংবিধানের একবিংশ অংশের প্রথম অনুচ্ছেদ এটিই। এ অংশের শিরোনাম হল- সাময়িক, পরিবর্তনসাপেক্ষ, এবং বিশেষ বিধান। ৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে বিবেচনা করা যেতেই পারে। জম্মু কাশ্মীর বিধানসভা এ ধারা পরিবর্তন করতে পারত, একে বিলোপ করতে পারত বা একে ধারণ করতে পারত। বিধানসভা একে ধারণ করার পক্ষে মত দেয়। আরেকটি ব্যাখ্যা হল- গণভোট না হওয়া পর্যন্ত ভারতভুক্তির সিদ্ধান্ত সাময়িক বলে গণ্য। গত বছর সংসদে এক লিখিত জবাবে ভারত সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির কোনও প্রস্তাব নেই। ৩৭০ ধারা সাময়িক এবং একে বহাল রাখা সংবিধানের সঙ্গে জালিয়াতি- এ কথা বলে মামলা করেছিলেন কুমারী বিজয়লক্ষ্মী। ২০১৭ সালে এ মামলা নাকচ করে দেয় দিল্লি হাইকোর্ট।
২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, শিরোনামে সাময়িক লেখা থাকলেও ৩৭০ ধারা সাময়িক নয়। ১৯৬৯ সালে সম্পৎ প্রকাশ মামলায় ৩৭০ ধারাকে সাময়িক বলে মানতে অস্বীকার করে সুপ্রিম কোর্ট।
৩৭০ ধারা কি বিলোপ করা যেতে পারে?
রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে অনুচ্ছেদ ৩৭০ (৩) বিলোপ করা যেতেই পারে। তবে তেমন নির্দেশের জন্য জম্মু কাশ্মীরের গণপরিষদের সম্মতি প্রয়োজন। কিন্তু গণপরিষদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে ২৬ জানুয়ারি, ১৯৫৭-তে। ফলে একটা মত হল, ৩৭০ ধারা আর বিলোপ করা যেতে পারে না। তবে এ ব্যাপারে আরেকটি মতও রয়েছে, সেটা হল রাজ্য বিধানসভার সম্মতিক্রমে এই বিলোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭০ ধারার তাৎপর্য কী?
৩৭০ ধারার ১ নং অনুচ্ছেদ উল্লিখিত হয়েছে, যেখানে রাজ্যগুলির তালিকায় জম্মু-কাশ্মীরকে রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে ৩৭০ ধারার মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরে সংবিধান লাগু হবে। তবে ১৯৬৩ সালের ২৭ নভেম্বর নেহরু লোকসভায় বলেছিলেন যে ৩৭০ ধারার ক্ষয় হয়েছে। জম্মু কাশ্মীরে ভারতীয় সংবিধান কার্যকর রাখার জন্য অন্তত ৪৫ বার ৩৭০ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভাবে রাষ্ট্রপতির আদেশের ভিত্তিতে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রায় নাকচ করা হয়েছে। ১৯৫৪ সালের নির্দেশ মোতাবেক প্রায় গোটা সংবিধানই, সমস্ত সংশোধনী সহ জম্মু-কাশ্মীরে কার্যকর করা হয়েছে। ৯৭টির মধ্যে ৯৪টি যুক্তরাষ্ট্রীয় তালিকা জম্মু কাশ্মীরে লাগু, ৩৯৫ টি অনুচ্ছেদের মধ্যে ২৬০টি রাজ্যে কার্যকর, ১৩টির মধ্যে ৭টি তফশিলও কার্যকর (লাগু) রয়েছে সেখানে।
জম্মু কাশ্মীরের সংবিধান সংশোধনের জন্য ৩৭০ ধারাকে একাধিকবার ব্যবহার করা হয়েছে যদিও ৩৭০ ধারার অন্তর্গত ভাবে রাষ্ট্রপতিরও সে ক্ষমতা নেই। পাঞ্জাবে এক বছরের বেশি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রাখতে সরকারের ৫৯তম, ৬৪ তম, ৬৭ তম এবং ৬৮তম সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন হয়েছিল। কিন্তু জম্মুকাশ্মীরের ক্ষেত্রে শুধু ৩৭০ ধারা প্রয়োগ করেই সে কাজ চলে যায়। তালিকাভুক্ত রাজ্যগুলির জন্য আইন প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ২৪৯ নং অনুচ্ছেদ জম্মু কাশ্মীরে লাগু করার জন্য বিধানসভায় কোনও প্রস্তাব পাশ করানো হয়নি, রাজ্যপালের সুপারিশের ভিত্তিতেই তা কার্যকর হয়ে যায়। এসব দিক থেকে দেখলে ৩৭০ ধারা জম্মু কাশ্মীরের অধিকারকে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় খর্ব করে। এখন ৩৭০ ধারা, জম্মু কাশ্মীরের থেকে ভারত রাষ্ট্রের পক্ষে বেশি সহায়ক।
জম্মু কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়ার জন্য ৩৭০ ধারার কি কোনও প্রয়োজন আছে?
জম্মু কাশ্মীরের সংবিধানের ৩ নং অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে যে জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবিধানের প্রস্তাবনায় কোনও সার্বভৌমত্বের কথা তো বলাই নেই, বরং সংবিধানের উদ্দেশ্য হিসেবে অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির কথা বলা রয়েছে। এ রাজ্যের জনগণ স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে স্বীকৃত, নাগরিক নয়। ৩৭০ ধারা সংহতি বিষয়ক নয়, স্বায়ত্তশাসন বিষয়ক। যাঁরা এর বিলোপ চাইছেন, তাঁরা সংহতি নিয়ে ভাবিত নন, তাঁদের মাথাব্যথা অভিন্নতা নিয়ে।
৩৫ এ ধারা কী?
৩৭০ ধারা থেকেই প্রবাহিত হয়েছে ৩৫এ ধারা, যা ১৯৫৪ সালের রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে কার্যকর হয়। ৩৫এ ধারানুসারে, জম্মু কাশ্মীরের বাসিন্দা বলতে কী বোঝায়, তাঁদের বিশেষ অধিকারগুলি কী কী, এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জম্মু কাশ্মীর বিধানসভার উপর ন্যস্ত রয়েছে।
জেনে রাখুনঃ
বিধানসভা কী?
ভারতের পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট।
উচ্চ কক্ষঃ রাজ্যসভা। ২৫০। ২৩৮+১২।
নিন্মকক্ষঃ লোকসভা। ৫৪৫। ৫৪৩+২।
বিধানসভাঃ
আর প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব পার্লামেন্টের নাম বিধানসভা। এর আসন এক এক রাজ্যে এক এক রকম। যেমনঃ- পশ্চিম বাংলায় ২৯৪ আবার তেলেঙ্গানা ১১৯
#একটু_মজা_নিনঃ
বাংলাদেশের সংবিধানে আছে অনুচ্ছেদ। তার অধীনে আছে দফা।
ভারতের সংবিধানে আছে ধারা। তার অধীনে অনুচ্ছেদ।

Thursday 28 February 2019

যে ছেলেটা নিজের কেরিয়ার গ​ড়ার চেষ্টায় গার্ল ফ্রেণ্ডকে বললো, “এখন বিয়ে করতে পারবো না


Image result for gf and bf

যে ছেলেটা নিজের কেরিয়ার গ​ড়ার চেষ্টায় গার্ল ফ্রেণ্ডকে বললো, “এখন বিয়ে করতে পারবো না”, বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর সে কক্ষণো কাজে মন দিতে পারে নি।
যে মেয়েটা আরও স্বাধীন ভাবে বাঁচবে বলে বাড়ি ছেড়ে অন্য শহরে চলে এসেছে সারাদিন ঘুরে ঘুরে জীবনটাকে উপভোগ করার ইচ্ছে নিয়ে, সে এখন সবসম​য় বাড়িতে একলা বসে থাকে আর ভাবে মা বাবাকে একটা ফোন করা ঠিক হবে কিনা ।
যে ছেলেটা, বউয়ের মুখ ঝামটায় অতিষ্ঠ হ​য়ে দূরে চলে গেছে, শুধু এই ভেবে যে একলা থাকলে বেশি লেখার সম​য় পাওয়া যাবে, সে আর কোনোদিন আগের মত ছন্দ মিলিয়ে তুখোড় লাইন লিখতেই পারে নি ।
যে মেয়েটা মায়ের সাথে ঝগ​ড়া করে নিজের ইচ্ছেমত বৃষ্টিতে ভেজার হুমকি দিয়ে বেরিয়ে গেলো, সে বাড়ি থেকে কিছুদূরে স্টেশনে ছাতার নীচে একা বসেছিলো, কোত্থাও ভিজতে যেতে পারে নি ।
যে ছেলেটা একলা সিকিমে এডভেঞ্চারে যাবে বলে বউকে সঙ্গে নিতে চায় নি, সে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যেতে পারে নি, শিয়ালদা স্টেশন থেকেই একা বাড়ি ফিরে বউকে জ​ড়িয়ে সে হাউ হাউ করে কেঁদেছে ।
যে মেয়েটা কাল রাত্রে রাগের চোটে ব্রেক আপ করে বলেছিল​, “তোকে ছাড়া আমি খুব ভালো থাকবো, একদম ফোন করবি না আমায়”, সে আজ সারাক্ষণ ফোনের দিকে হা কিরে চেয়েছিলো, যদি একটা মেসেজ আসে ।
মানুষ একলা বাঁচতে চেয়েও পারে না, তাকে প্রিয়জনের সাথে নিজের মত করে বাঁচতে হ​য় ।
ভালবাসায় আগলাতে হ​য়, ছেড়ে যেতে নেই ।
-------অরুণাশিস সোম
https://www.youtube.com/channel/UC9EndGTcSVgfW20n0Hr9mkg

Wednesday 27 September 2017

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কিছু কথা অথবা জীবনি

মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কিছু কথা অথবা জীবনি । 
মজলুম নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ ধানগড়া গ্রামে জম্ম গ্রহণ করেন । আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পিতার নাম শরাফত আলী । তার পিতা অনেক উদার ও আদর্শ মনের একজন ভদ্রলোক ছিলেন । 
আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বয়স যখন ছয় তখন তার পিতা মৃত্যু বরণ করেন । 

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বয়স এগার হলো তখন তার মা মৃত্যু বরণ করেন ।তার পর থেকে সে তার চাচার অনুগ্রহে মাদ্রাসায় ভর্তি হলেও লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা,, গাণ গাওয়া,,বক্তৃতা নকল করা তার এইসব বিভিন্ন গুণের কারনে খুব দ্রুত কিছুগুণগ্রাহী জুটে যায় । 

আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সাংগঠনিক প্রতিভা ও ব্রিটিশ রাজত্বের বিরুদ্ধে মনোভাবে শষ্কিত হয়ে জমিদারদের অত্যাচার হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার স্নেহশীল শিক্ষক মাওলানা আব্দুল বাকী আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে পাঠিয়ে দেন,পীর সৈয়দ নাসির উদ্দিন বোগদাদীর কাছে আধ্যাত্মিক জীবনের শিক্ষার জন্য ।সেখান থেকে তার আধ্যাত্মিক জীবনে পাঠ্য শুরু হয় । 
আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর বাল্য নাম ছিল চেগা মিয়া । 

আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের অন্যতম নায়ক ছিলেন ।এবং আব্দুল হামিদ খান ভাসানী জীবদ্দশায় ১৯৪৭সালে সৃষ্ট পাকিস্তান এবং ১৯৭১সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। 

তিনি ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন । এবং স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশিষ্ট ভূমিকাও পালন করেন মাওলানা ভাসানী । 

তিনি রাজনৈতিক জীবনের বেশীরভাগ সময় মাওপন্থী কম্যুনিস্ট তথা বামধারা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । তার অনুসারীদের অনেকে সেজন্য তাকে লাল মওলানা নামেও ডাকতেন । 

মওলানা ভাসানী ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন যে পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্রকাঠামো । 

১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমা শাসকদের ওয়ালাকুমুসসালাম বলে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন ।
 

তিনি ইসালামিক শিক্ষার জন্য ১৯০৭ সালে দেওবন্দ যান । এবং সেখানে তিনি দুই বছর অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন । ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন । ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দশ মাস কারাদণ্ড ভোগ করেন মওলানা ভাসানী । 

এর পর ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারেও ভূমিকা পালন করেন । ১৯২৬সালে আসামে প্রথম কৃষক প্রজা আন্দোলনের সুত্রপাতও ঘটান মওলানা ভাসানী । 

তার পরে তিনি ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র ভাসান চরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন । তখন থেকে তার নাম রাখা হয় ভাসানীর মাওলানা । তারপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয় ।
 


তিনি ১৯৭৬ সালে ১৭ই নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন । তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয় । সারা দেশ থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ তার জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছেন । 

১৯৩১ সালে সন্তোষের কাগমারীতে ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় এবং ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় কৃষক সম্মেলন করেছেন । ১৯৩৭ সালে মাওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করেন এবং একই সাথে তিনি মুসলিম লীগে যোগ দেন । সে সময়ে তিনি আসামে লাইন প্রথা চালু হলে এই নিপীড়নমূলক প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন । 

সেসময় তিনি আসাম চাষী মজুর সমিতি গঠন করেন এবং ধুবরী,, গোয়ালপাড়াসহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন । ১৯৪০ সালে শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন । ১৯৪৪ সালে মাওলানা ভাসানী আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন । 



১৯৪৫ সাল থেকে ৪৬ সাল পযন্ত আসাম জুড়ে বাঙালিদের বিরুদ্ধে বাঙ্গাল খেদাও আন্দোলন শুরু হলে ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয় । সেসময় বাঙালিদের রক্ষার জন্য ভাসানী বারপেটা,, গৌহাটিসহ আসামের বিভিন্ন জায়গা সফর করেন । তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ নিয়ে ১৯৪৭ সালে আসামে গ্রেফতার হন । ১৯৪৮সালে মুক্তি পান । তারপর তিনি টাঙ্গাইলের সন্তোষে ফিরে আসেন । 
১৯৪৮ সালের প্রথম দিকে তিনি বঙ্গীয় মুসলিম লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন । ১৯৪৮সালে মার্চের ১৭তারিখে ব্যবস্থাপক সভার কার্যাবলি বাংলায় পরিচালনা করার জন্য স্পিকারের কাছে দাবি জানান এবং এই দাবি নিয়ে পীড়াপীড়ি করেন । 


১৯ মার্চ বাজেট বক্তৃতায় অংশ নিয়ে বলেন যেসব কর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ প্রদেশ থেকে সংগ্রহ করে তার শতকরা ৭৫% প্রদেশকে দিতে হবে । 

এখানে উলেস্নখ যে, ব্রিটিশ আমলে বঙ্গপ্রদেশ জুটেক্স ও সেলসট্যাক্স রাজস্ব হিসেবে আদায় করত এবং এই করের ভাগ কেন্দ্রীয় সরকারকে দিতে হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গ সরকারের হাত থেকে এই কর ছিনিয়ে নিয়ে নিজেরাই আদায় করতে থাকে যার ফলে পূর্ববঙ্গ সরকার আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে । 

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই সময় পূর্ববঙ্গ সরকারের বার্ষিক বাজেট ছিল মাত্র ৩৬ কোটি টাকা । মুসলিম লীগ দলের সদস্য হয়েও সরকারের সমালোচনা করায় মুসলিম লীগের ক্ষমতাসীন সদস্যরা মওলানা ভাসানীর ওপর অখুশী হয় এবং তার নির্বাচনে ত্রুটি ছিল এই অজুহাত দেখিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করে এবং মওলানা ভাসানীকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন । 

পরিশেষে মওলানা ভাসানী ব্যবস্থাপক সভার সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এতদসত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের তৎকালীন গভর্নর এক নির্বাহী আদেশ বলে মওলানা ভাসানীর নির্বাচন বাতিল করেন । বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩ এবং ২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলিতে রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্ববান করলেন । 


২৩ জুন ও কর্মি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং সারাদেশ থেকে প্রায় ৩০০ কর্মী সে সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন । সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান । মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি । ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হয় । মওলানা ভাসানী সর্ব সম্মতি ক্রমে এই দলের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন । 

সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শামসুল হক। ২৪ জুন আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল । ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয় । ১১ অক্টোবর আরমানীটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল । 

এবং ঐ জন সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগ দাবী করা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । ভূখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার কারনে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান । 

১৯৫০ সালে সরকার কর্তৃক রাজশাহী কারাগারের খাপরা ওয়ার্ড এর বন্দীদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অনশন ধর্মঘট পালন করেন এবং ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলার বার লাইব্রেরী হলে মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়া এক জনসভা আর সে সভায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়েছিল । রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে সহযোগিতার কারণে গ্রেফতার হয়ে মওলানা ভাসানী ১৬ মাস কারানির্যাতনের শিকার হয়েছেন । অবশ্য সে জন্য জনমতের চাপে ১৯৫৩ সালের ২১ এপ্রিল মওলানা ভাসানীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল । 

পূর্ব বাঙলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে কৃষক শ্রমিক পার্টির সভাপতি শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামক নির্বাচনী মোর্চা গঠন করেলেন ।এবং সে নির্বাচনের যুক্তফ্রন্টে বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদে ২৩৭ টির মধ্য ২২৮ টি আসন অর্জনের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন । 


ফজলুল হকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর ২৫শে মে ১৯৫৪ মাওলানা ভাসানী বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে যান এবং সেখানে বক্তব্য রাখেন । ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্ণরের শাসন জারি করে এবং মাওলানা ভাসানীর দেশে প্রত্যাবর্তনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন । 

১১ মাস লন্ডন,, বার্লিন,, দিল্লী এবং কলকাতায় অবস্থান করার পর তার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় এর পর তিনি ১৯৫৫ সালের ২৫ শে এপ্রিল দেশে ফিরে আছেন । পূর্ব বাংলায় খাদ্যজনিত দুর্ভিক্ষ রোধের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ৫০ কোটি টাকা আদায়ের দাবিতে ১৯৫৬ সালের ৭ই মে ঢাকায় অনশন ধর্মঘট শুরু করেলেন । 

সরকার দাবি মেনে নিলে ২৪শে মে অনশন ভঙ্গ করেন । একই বছরে ১২ই সেপ্টেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রিপাবলিকান পার্টির কোয়ালিশন সরকার গঠিত হলে মাওলানা ভাসানী সরকারের পররাষ্ট্রনীতির বিরোধিতা করে নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করার জন্য সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয় । 

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান গণপরিষদে যে খসড়া শাসনতন্ত্র বিল পেশ করা হয় তাতে পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিক বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল,,এবং তখন মাওলানা ভাসানী পল্টনের জনসভায় তার বিরোধিতা করে সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখেছিলেন ৷ 


অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি বলেন,, পূর্ববাংলা পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় শাসকদের দ্বারা শোষিত হতে থাকলে পূর্ববঙ্গবাসী তাদের সালামু ওআলায়কুম জানাতে বাধ্য হবে । এছাড়াও কাগমারী সম্মেলনে ভাসানী পাক ও মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন । 

প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী সেই দাবি প্রত্যাখান করলেন এবং ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন । একই বছর ২৫শে জুলাই তার নেতৃত্বে ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ন্যাপ গঠিত হয় । ন্যাপ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভাসানী প্রকাশ্যে বামপন্থী রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন এবং এর পর থেকে সবসময় বাম ধারার রাজনীতির সাথেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি । 

১৯৫৭ সালের ৭ই অক্টোবর দেশে সামরিক শাসন জারি হলে আইয়ুব খান ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ।এবং ১২ অক্টোবর মাওলানা ভাসানীকে কুমুদিনী হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করা হলো । ঢাকায় ৪ বছর ১০ মাস কারারুদ্ধ থাকলেন মওলানা ভাসানী । 

বন্দী অবস্থায় ১৯৬২সালের ২৬শে অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বন্যাদুর্গতদের সাহায্য এবং পাটের ন্যায্যমূল্যসহ বিভিন্ন দাবিতে অনশন ধর্মঘট পালন করলেন তারা । ৩রা নভেম্বর মুক্তিলাভ করেন এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট এর রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত হলেন । 

১৯৬৩ সালের মার্চ মাসে আইয়ুব খানের সাথে সাক্ষাত করেন। ঠিক এই একই বছর ২৪শে সেপ্টেম্বর চীনের বিপ্লব দিবসের উৎসবে যোগদানের জন্য ঢাকা ত্যাগ করেন এবং চীনে সাত সপ্তাহ অবস্থান করেন মওলানা ভাসানী । ১৯৬৪সালে ২৯শে ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল আওয়ামীলিগ পার্টি পুনরুজ্জীবিত করে দলের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একই বছর ২১শে জুলাই সম্মিলিত বিরোধী দল কপ গঠনে ভূমিকা পালন করেন । 

১৯৬৫সালের ১৭ই জুলাই আইয়ুব খানের পররাষ্ট্র নীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করলেন ।এবং ১৯৬৬সালে শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থাপিত ছয় দফা কর্মসূচীর বিরোধিতা করেন । ১৯৬৭ সালে ২২শে জুন কেন্দ্রীয় সরকার রেডিও এবং টেলিভিশন থেকে থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার বন্ধ করার নির্দেশ জারি করলে এর প্রতিবাদ করেন । 

১৯৬৭সালে নভেম্বর মাসে ন্যাপ দ্বি খন্ডিত হলে চীনপন্থি ন্যাপের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে মাওলানা ভাসানী বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামীদের মুক্তি দাবি করেন।এবং ১৯৬৯সালের ৮ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে সেখানে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে সাক্ষাত করে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে একমত হন । 

২৬শে ফেব্রুয়ারি আইয়ুব খান কর্তৃক আহুত গোলটেবিল বৈঠক প্রত্যাখান করে শ্রমজীবীদের ঘেরাও কর্মসূচী পালনে উৎসাহ প্রদান করেন । আইয়ুব খান সরকারের পতনের পর নির্বাচনের পূর্বে ভোটের আগে ভাত চাই,, ইসলামিক সমাজতন্ত্র কায়েম ইত্যাদি দাবি উত্থাপন করা হয় । 


কাগমারী সম্মেলনও ১৯৫৭ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।আর ৮ই ফেব্রুয়ারি ডক্টর কাজী মোতাহার হোসেনের সভাপতিত্বে তা আরম্ভ হয়েছিল । 

এই সভায় মওলানা ভাসানীও বক্তৃতা দিয়েছিলেন । বক্তৃতায় 
১৯৭০ সালের ৬ ও ৮ই আগস্ট বন্যা সমস্যা সমাধানের দাবিতে অনশন পালন করা হয় । তারপর সাধারণ নির্বচনে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । ১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানে প্রলয়ঙ্কারী ঘুর্ণিঝড় হলে দুর্গত এলাকায় ত্রান ব্যবস্থায় অংশ নেয়ার জন্য ন্যাপ প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাড়ালেনন । 

এবং ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান দাবি উত্থাপন করলেন । ১৯৭১ এর মার্চ মাসে শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রদান করেন এবং ১৯৭১ সালের ১৮ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের জন্য তার প্রতি আহবান জানালেন । স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হলেন । 

২৫ মার্চ রাতে মওলানা ভাসানী সন্তোষে তার গৃহে অবস্থান করছিলেন । সে পাকিস্তান বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে টাঙ্গাইল ছেড়ে তার পিতৃভূমি সিরাজগঞ্জে চলে গেলেন । পাকিস্তান বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দিলেন । তার পর মওলানা ভাসানী মোজাফ্ফর ন্যাপ নেতা সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে নৌকাযোগে ভারত সীমানা অভিমুখে রওনা হয় । 

সর্বশেষে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মইনুল হক চৌধুরীর সাহায্যে মওলানা ভাসানী এবং সাইফুল ইসলাম ১৫ই এবং ১৬ই এপ্রিল পূর্ববঙ্গ অতিক্রম করে আসামের ফুলবাড়ী নামক স্থানে উপস্থিত হলেন । তারপরে তাদের হলদীগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হলো । এরপর মওলানা ভাসানী এবং সাইফুল ইসলামকে প্লেনে করে কলকাতায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল । 


এবং পার্ক স্ট্রিটের কোহিনুর প্যালেসের ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাট তাদের অবস্থানের জন্য দেয়া হয়েছিল । ১৯৭১ সালের ২৩শে এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে মওলানা ভাসানী একটি বিবৃতি প্রদান করেন যা ভারতীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল । 
তাছাড়াও মাওলানা ভাসানী চীনের নেতা মাও সে তুং,, চৌ এন লাই এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে তার বার্তা পাঠিয়ে তাদের অবহিত করেন যে পূর্ববঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপকহারে গণহত্যা চালাচ্ছেন । সেজন্য তিনি প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে অনুরোধ করেন এই মর্মে যে,, তিনি যেন পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ না করেন । 


উপরন্তু মওলানা ভাসানী প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবার আহ্বববান জানান । ১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মাওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করলেনন । 

৩১ মে মাওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার পাক বাহিনীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত । তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর । তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবেই । ৭ জুন মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ কয়েক লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে ।
 

এর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ দুইবার কোহিনুর প্যালেসে এসে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হলেন এবং তার পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন । 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে সর্বদলীয় চরিত্র দেয়ার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে আট সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয় যার সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী । ঐ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন ১। তাজউদ্দীন আহমদ ২। মণি সিংহ ৩। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ ৪। মনোরঞ্জন ধর । মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ঐ উপদেষ্টা কমিটির সভায় এই মর্মে অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছিল যে পূর্ববঙ্গের পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যতিরেক অন্য কোন প্রকার রাজনৈতিক সমাধান গ্রহণযোগ্য হবে না । 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মওলানা ভাসানী কলকাতা ছাড়াও দেরাদুন,, দিল্লী এবং অন্যান্য স্থানে অবস্থান করেছেন । পরবর্তীকালে অনেকে অভিযোগ করেন যে ভারতে থাকাকালীন তিনি নজরবন্দি অবস্থায় ছিলেন । ভারতে অবস্থানকালে মওলানা ভাসানী দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়েন । তখন তাকে দিল্লী অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছিল । 

ভারত সরকার গৃহবন্দী দশা থেকে মুক্তি প্রদানের পর মাওলানা ভাসানী ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হন । ১৯৭২সালে ২৫শে ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক হক কথা প্রকাশ করা হয় । বাংলাদেশ ও ভারত মৈত্রীচুক্তির বিরোধিতা করলে মুজিব সরকারের জাতীয়করণ নীতি এবং ১৯৭২ সালের সংবিধানের এর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন । 

১৯৭৩ সালে খাদ্যের দাবিতে ঢাকায় ১৫ই এবং ২২শে মে অনশন ধর্মঘট পালন করেন । ১৯৭৪ সালের ৮ই এপ্রিল হুকুমতে রাব্বানিয়া সমিতি গঠন করেন । এবং এই একই বছর জুন মাসে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে গৃহবন্দি হন । ১৯৭৬ সালের ১৬ই মে ফারাক্কা বাধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দিলেন । ও একই বছর ২রা অক্টোবর খোদাই খিদমতগার নামে নতুন আর একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করলেন। 

রাজনীতির পাশাপাশি মওলানা ভাসানী সমাজ সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে জড়িতও ছিলেন । জয়পুরহাট এর পাঁচবিবিতে মহিপুর হাজী মহসীন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি । তার পরে সেটি জাতীয়করণ করা হয় । আসামে ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন । এছাড়াও মওলানা ভাসানী কারিগরী শিক্ষা কলেজ,, শিশু কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন । তাছাড়াও তিনি কাগমারিতে মাওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ ও পঞ্চবিবিতে নজরুল ইসলাম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন । 




তথ্যসূত্র> সিরাজুল হোসেন খান,, উপমহাদেশের সামাজিক রাজনৈতিক ইতিবৃত্ত,, ঢাকা ।

Saturday 5 August 2017

১৫ই আগস্ট ১৯৭৫

#১৫ই_আগস্ট_১৯৭৫
বেয়াদবি করছিস কেন, কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। ভোর সাড়ে ৫টা দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির রক্ষীরা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শুরু করেছেন। ঠিক তখনই বাড়িটি লক্ষ্য করে দক্ষিণ দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ শুরু হয়।
ধানমন্ডির বাড়িটি আক্রান্ত হওয়ার আগেই শেখ মুজিবুর রহমান আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকাণ্ডের খবর জেনে যান। গুলির শব্দ শুনেই বঙ্গবন্ধু তার ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। ঘুম থেকে উঠে পড়েন গৃহকর্মী আব্দুল আর রমা। বেগম মুজিবের কথায় রমা নিচে নেমে দেখেন সেনাবাহিনীর কয়েকজন সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে।
এরই মধ্যে লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামতে থাকেন। দোতলায় বেগম মুজিব আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করেন। রমা তিনতলায় চলে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামালকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। ঘটনা শুনে শার্ট-প্যান্ট পরে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। সুলতানা কামাল আসেন দোতলায়।
শেখ জামাল তার স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় বেগম মুজিবের কক্ষে যান। ওদিকে গোলাগুলির মধ্যে অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল (বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী)। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জের চেষ্টার একপর্যায়ে রিসিভার নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেন ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি...’। বঙ্গবন্ধু তার কথা শেষ করতে পারেননি।
একঝাঁক গুলি জানালা দিয়ে অফিসের ভেতরে এসে দেয়ালে লাগে। কাচের জানালা ভেদ করে গুলি এসে মহিতুলের ডান হাতে বিদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন।
কিছুক্ষণ পর গুলিবর্ষণ থেমে গেলে নিচতলার ওই ঘর থেকে বারান্দায় বের হয়ে বঙ্গবন্ধু পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘এত গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছ’। এ কথা বলেই বঙ্গবন্ধু ওপরে চলে যান।
এরপর শেখ কামাল নিচে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আর্মি আর পুলিশ ভাইরা, আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।’ এ সময় শেখ কামালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মহিতুল ইসলাম ও পুলিশের ডিভিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট নুরুল ইসলাম খান।
ঠিক তখনই মেজর নূর, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) ও ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা সৈন্যদের নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। গেটের ভেতরে ঢুকেই তারা ‘হ্যান্ডস্ আপ’ বলে চিৎকার করতে থাকে।
এ সময় কোনো কথা না বলেই শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। নিজেকে বাঁচাতে লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। তখন মহিতুলকে বলতে থাকেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। আপনি ওদেরকে বলুন’।
মহিতুল তা বলার সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা তার হাতে থাকা স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। ওখানেই মারা যান শেখ কামাল।
নিচে কী হচ্ছে তার কিছুটা টের পাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তার ঘরের দরজা বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন। একপর্যায়ে ফোনে তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনকে পান। বঙ্গবন্ধু তাকে বলেন, ‘জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আস। আর্মির লোকেরা আমার বাসায় অ্যাটাক করেছে। সফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বল। ’
তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহকেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাকে বলেন, ‘সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে, কামালকে বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’
জবাবে সফিউল্লাহ বলেন, ‘আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং। ক্যান ইউ গেট আইট অফ দ্য হাউজ?’
এদিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্নেল জামিল তার ব্যক্তিগত লাল রঙের গাড়িটি নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের কাছে আসতেই ঘাতকরা জামিলকে হত্যা করে।
এর কিছুক্ষণ পর ঘাতকরা গুলি করতে করতে ওপরে চলে আসে। তারা শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেয়া গৃহকর্মী আব্দুলকে গুলি করে। তারা শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেয়া গৃহকর্মী আব্দুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে তিনি সিঁড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।
এ সময় নিজ ঘরে বঙ্গবন্ধু ছাড়াও ছিলেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজি জামাল। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরে অবস্থান নেয়। গোলাগুলি থামলে বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে বাইরে আসা মাত্রই ঘাতকরা তাকে ঘিরে ধরে। মেজর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গের সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। তখন ঘাতকদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, “তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?”
বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি, কী করবি-বেয়াদবি করছিস কেন?” এ সময় নিচতলা ও দোতলায় সিঁড়ির মাঝামাঝি অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও নূর। বঙ্গবন্ধুকে নিচে আনার সময় নূর কিছু একটা বলতেই মহিউদ্দিন সরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা ও নূর স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে।
বঙ্গবন্ধুর বুকে ও পেটে ১৮টি গুলি লাগে। নিথর দেহটা সিঁড়ির ওপর পড়ে থাকে। রমার কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে গুলির কথা শুনে বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসের এবং গৃহকর্মীরা বাথরুমে আশ্রয় নেয়।
ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নিচে নেমে এসে বেরিয়ে যায়। এরপরেই মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন তাদের সৈন্যসহ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢুকে পড়ে। আজিজ পাশা তার সৈন্যদের নিয়ে দোতলায় চলে যান এবং ঘরের দরজায় গুলি করতে থাকে। পরে বেগম মুজিব দরজা খুলে তাদেরকে না মারার অনুরোধ করেন। ঘাতকরা বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে আসতে থাকে।
সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেই বেগম মুজিব চিৎকার করে বলেন, “আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেল।”
বেগম মুজিব অস্বীকৃতি জানালে তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনেন। শেখ রাসেল, শেখ নাসের এবং রমাকে নিয়ে আসে। ওই ঘরেই বেগম মুজিব, শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতক আজিজ পাশা রিসালদার মোসলেউদ্দিন।
শেখ নাসের, শেখ রাসেল আর রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের সবাইকে এক লাইনে দাঁড় করানো হয়। লাইন থেকে নিয়ে পাশের ঘরে বাথরুমে নিয়ে শেখ রাসেলকে হত্যা করে। লাইনে দাঁড়িয়ে শেখ রাসের প্রথমে রমাকে ও পরে মহিতুলকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভাইয়া আমাকে মারবে না তো?”
এ সময় শেখ রাসেল মায়ের কাছে যেতে চাইলে আজিজ পাশা মহিতুলের কাছ থেকে জোর করে দোতলায় নিয়ে যেতে বলে। তখন এক হাবিলদার শেখ রাসেলকে দোতলায় নিয়ে যায় এবং সেখানেই শেখ রাসেলকে হত্যা করে। গুলিতে রাসেলের চোখ বেরিয়ে আসে। মাথার পেছনের খুলি থেতলে যায়।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর সেই প্রিয় বাড়িটি যেন রক্তগঙ্গা বয়ে যায়। যেন গুলির শব্দ আর কামানের গর্জনে কেঁপে ওঠে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা। 
(সংগৃহীত)

সেই আহমদ ছফা


Image may contain: 2 people, people smiling, people standing

"আহমদ ছফাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “আপনি কী মনে করেন হুমায়ুন আহমেদ এখন শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের সমান জনপ্রিয় লেখক?”
জবাবে আহমদ ছফা মুচকি হেসে বলেছিলেন, “হুমায়ুন আহমেদ এখন শরৎচন্দ্র চট্টপাধ্যায়ের চেয়েও জনপ্রিয় লেখক। কিন্তু মেরিটের দিক দিয়ে সে নিমাই ভট্টাচার্যের সমান। হি রাইটস ওনলি ফর বাজার!”
সেই আহমদ ছফা
“স্বাধীনতার পরে শহীদ পরিবার হিসেবে মোহাম্মদপুরে বাড়ি দিল সরকার। তিন দিন পর সেই বাড়িতে রক্ষীবাহিনী এসে হাজির। আমার মতো মানুষরে উচ্ছেদ করতে ট্রাকভর্তি অস্ত্রশস্ত্র আনছে! সুবেদার মেজর হাফিজ আমাদের বাসার পর্দাটর্দা ছিঁড়া ফেলল। অশালীনভাবে আমাদের উচ্ছেদ করল। এ সময় আমাদের পাশে এসে দাঁড়াইল আহমদ ছফা। রক্ষীবাহিনীর অন্যায়ের প্রতিবাদে কেরোসিন ঢাইলা নিজের গায়ে আগুন ধরাইয়া দেওয়ার হুমকি দিল সে।”
– আয়েশা ফয়েজ [হুমায়ূন আহমেদের মা]
হুমায়ুন আজাদের "নারী" নিষিদ্ধ করার পর আহমদ ছফা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিক্রি করেছিলেন সেই বই।
চুলের ডগা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত হচ্ছে একজন সত্যিকার সাহিত্যিকের।“ খানিকটা দূর থেকে মাথার নিচে বই দিয়ে বেঞ্চে শুয়ে থাকা আহমদ ছফাকে দেখিয়ে নিজের ছেলেকে এমনটি বলেছিলেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
আহমদ ছফা- সমাজের শেকড়ে পেতে রেখেছিলেন নিজের আত্মা-মনন-চৈতন্যকে। এদেশের বিভিন্ন কালপর্বের হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন ফুটে উঠেছে তাঁর লেখায়, তাঁর কাজে। বুদ্ধিবৃত্তিক শঠতা, ভণ্ডামি,পরশ্রীকাতরতাকে যেমন তিনি নির্মমভাবে তুলে ধরেছেন, তেমনই ধিক্কার দিয়েছেন ভীরু-কাপুরুষদের, চাবকে দিতে দ্বিধায় ভোগেননি- তার কলম ঝলসে উঠেছে নষ্টদের বিরুদ্ধে ।
ত্রিকালদর্শী এই লেখক বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই এ সত্য উচ্চারণ করেছিলেন যে, এদেশের বুদ্ধিজীবীরা যা বলেছে তা শুনলে বাংলাদেশ স্বাধীন হত না এবং আজ যা বলছে তা শুনলে এদেশের সমাজও পরিবর্তিত হবে না- সেই কথাগুলো আজও কত প্রাসঙ্গিক ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পতিত জমিতে সব্জি চাষ করেছেন, অবহেলিত পথশিশুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন পাঠশালা, গরিব মেয়েদের জন্য সেলাই স্কুল খুলেছেন, পুষেছেন পাখি। যান্ত্রিক এই নগরীর ছাদের টবে ফুটিয়েছেন ফুল- এসবের ভেতরেই একজন প্রাণবান চিরতরুণকে খুঁজে পাই। যিনি পরজীবী পরগাছা বুদ্ধিজীবী নন।
আহমদ ছফা জন্মেছিলেন তাঁর বুকের ভেতর মানুষের জন্য অপরিসীম ভালবাসা নিয়ে। একটি লাঞ্ছিত বেগুন গাছের চারা প্রাণ ফিরে পেয়েছে তাঁর শুশ্রƒষায়। প্রায় খুন হয়ে যাওয়া একটি মুমূর্ষু তুলসী গাছকে বাঁচিয়ে তোলেন পরম যত্ন-সেবা দিয়ে। তাঁর ‘পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গ পুরাণে’ এসব সাধারণ ঘটনা পড়ি আর মুগ্ধ হয়ে যাই।
এই নিষ্পত্র স্বজনহীন নগরে মানুষের প্রতি ভালবাসাকে যুদ্ধজয়ের একমাত্র আয়ুধ বলে আমাদের ভেতর আর আস্থা জাগাবেন কে?
হাজার সালাম হে স্বাপ্নিক
আহমদ ছফা ও তারেক মাসুদ স্বপ্ন দেখা,তা ছড়িয়ে দেয়ার দুই স্বাপ্নিক।

Tuesday 24 January 2017

All Bangla Blog (বাংলা ব্লগসমুহ)

                       Bangladeshi All Blog

Wednesday 31 August 2016

বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ছয়জন মুসলিম নারীর শীর্ষে রয়েছেন শেখ হাসিনা।




বিশ্বের শীর্ষ প্রভাবশালী ছয়জন মুসলিম নারীর শীর্ষে রয়েছেন শেখ 
 হাসিনা।

ফোর্বস সাময়িকীর ২০১৬ সালের শীর্ষ ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকা পর্যালোচনায় এ তথ্য সামনে এসেছে। এতে স্থান পেয়েছেন ছয়জনমুসলিম নারী। তাদের মধ্যে প্রথমেই আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।সম্প্রতি ফোর্বসের করা বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের ১৩তম বার্ষিক তালিকায়এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।ফোর্বসের করা ওই তালিকায় বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের র্যা ঙ্কিং হচ্ছে ৩৬। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বের অষ্টাদশতম দেশ বাংলাদেশের এই প্রধানমন্ত্রী গত বছর একই তালিকায় ছিলেন ৫৯ নম্বরে। সে হিসেবে এবারের তালিকায় তার প্রভূত উন্নতি হয়েছে।বিশ্বখ্যাত এই মার্কিন সাময়িকী জানায়, বিশ্বে নারী নেতার সংখ্যা ২০০৫ এর তুলনায় এখন দ্বিগুণ। তালিকায় বিশ্বের রাজনৈতিক ক্ষমতাধর নারীদের র্যা ঙ্কিংও করা হয়। এতেদেখা গেছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ২৬ নারীর তালিকায় শেখ হাসিনা আছেন ১৫তম স্থানে।তালিকায় মুসলিম প্রভাবশালী নারীদের র্যা ঙ্কিংয়ে শেখ হাসিনার পরে আছেন আরব আমিরাতের পরমত সহিষ্ণুতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী শেইখা লুবনা আল কাসিমি (৪৩), সৌদি আরবের ব্যবসায়ী লুবনা এসওলায়ান, আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক ব্যবসায়ী ড. রাজা ইয়াসা আল গার্গ, মরিশাসেরপ্রথম নির্বাচিত নারী প্রেসিডেন্ট আমিনা গুরিব-ফাকিম ও বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনাপরিচালক ইন্দোনেশীয় নাগরিক শ্রী মূল্যাণীইন্দ্রাবতী।সার্বিকভাবে বিশ্বের প্রভাবশালী নারীর তালিকায় ষষ্ঠবারে মতো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মে

লেখক ঃ  
Mithu DK