ভুমিকা:
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা বিধানের জন্য বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন। আর এ জন্য দরকার নতুন নতুন খাদ্য উৎপাদন ও এর সংযোজন। Micro-livestock হিসাবে আখ্যায়িত খরগোশ এমনি একটি বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের উৎস। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভার ঢাকা দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ খরগোশের লালন পালন, খাদ্য, বাসস্থান, বিভিন্ন রোগ-বালাই, মাংসের গুণাগুণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে আসছে। দীর্ঘ দিনের গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছেঃ
বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা বিধানের জন্য বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের প্রয়োজন। আর এ জন্য দরকার নতুন নতুন খাদ্য উৎপাদন ও এর সংযোজন। Micro-livestock হিসাবে আখ্যায়িত খরগোশ এমনি একটি বহুমুখী খাদ্য উৎপাদনের উৎস। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ পশুসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সাভার ঢাকা দীর্ঘ ৭ বছর যাবৎ খরগোশের লালন পালন, খাদ্য, বাসস্থান, বিভিন্ন রোগ-বালাই, মাংসের গুণাগুণ ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করে আসছে। দীর্ঘ দিনের গবেষণার ফলাফল থেকে দেখা গেছেঃ
১. অল্প জায়গায় স্বল্প খাদ্য এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে খরগোশ পালন করা যায়।
২. খরগোশের মাংসের প্রোটিন, এনার্জি, খনিজ এবং ভিটামিনের পরিমাণ অন্যান্য সকল প্রজাতির জীবজন্তুর মাংসের চেয়ে বেশি এবং কোলেস্টেরল ফ্যাট ও সোডিয়াম কম থাকে। এছাড়া এদের মাংস সুস্বাদু ও সহজে হজম হয় এবং সকল ধর্মের মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য।
৩. খরগোশ দ্রুতবর্ধনশীল এবং একটি স্ত্রী খরগোশ প্রতিবারে ২-৮টি বাচ্চা দেয়। এরা নিম্ন মানের খাবার খেয়ে অধিক পুষ্টিসম্পন্ন মাংস উৎপাদন করে।
৪. খরগোশ পালন বেকার যুবক, মহিলা ও ভূমিহীন কৃষকের দারিদ্র বিমোচন এবং কর্মসংস্থানের অন্যতম একটি পেশা হতে পারে। এসব কারণে দেশে প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে সংশিষ্ট সকলের খরগোশ পালনের জন্য এগিয়ে আসা উচিত।
আমরা খরগোশকে সাধারণত সৌখিন প্রাণী হিসেবে পালন করি। তবে, বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালন করে প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। খরগোশের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর।
দেশে বাৎসরিক গোশতের চাহিদা প্রায় ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন এবং উৎপাদিত হয় মাত্র ১ মিলিয়ন মেট্রিকটন। দেশের চাহিদার তুলনায় মোট আমিষের শতকরা ১৫-২০ ভাগ আসে পশুসম্পদ থেকে যা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করা প্রয়োজন অথচ সেখানে আমরা প্রতিদিন মাত্র ২০ গ্রাম মাংস গ্রহণ করে থাকি। এজন্য প্রাণীজ আমিষের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে নতুন সংযোজন হিসাবে আমরা খরগোশ প্রতিপালনের বিষয়টি অধিক সম্ভাবনাময় দিক হিসাবে বিবেচনা করতে পারি।
অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় খরগোশ পালন বরং সহজ। এদের খাদ্য এবং ব্যবস্থাপনা সহজ বিধায় বাড়ীর মহিলা ও ছেলে-মেয়েরা কাজের ফাঁকে সহজেই এদের পরিচর্যা করতে পারে।
খরগোশের প্রজাতি:
বাংলাদেশে বিভিনড়ব প্রজাতির খরগোশ পাওয়া যায়। তম্মধ্যে রয়েছে ডার্ক গ্রে (দেশী), ফক্স, ডাচ, নিউজিল্যান্ড লাল, নিউজিল্যান্ড সাদা, নিউজিল্যান্ড কালো, বেলজিয়াম সাদা এবং ছিনছিলা উল্লেখযোগ্য।
বিভিনড়ব গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে, অল্প বয়স্ক খরগোশের মাংস বেশি বয়স্ক খরগোশের মাংসের তুলনায় উন্নতমানের হয়। আবার স্ত্রী খরগোশের মাংসের তুলনায় পুরুষ খরগোশের মাংস তুলনামূলক উন্নত মানের হয়ে থাকে। বয়স হলে মাংসে কোলেস্টেরল এবং লিপিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়। অন্য দিকে স্ত্রী খরগোশের মাংসে লিপিড, ফ্যাট এবং কোলস্টেরল এর পরিমাণ বেশি থাকে।
খরগোশ পালনের সুবিধা:
১. খরগোশ দ্রুত বর্ধনশীল প্রাণী। এদের খাদ্য দক্ষতা অপেক্ষাকৃত ভাল।
২. এক মাস পরপর এক সাথে ২-৮ টি বাচ্চা প্রসব করে।
৩. অল্প জায়গায় ও স্বল্প খাদ্যে পারিবারিকভাবে পালন করা যায়। অল্প খরচে অধিক উৎপাদন সম্ভব।
৪. খরগোশের মাংস অধিক পুষ্টি গুণসম্পনড়ব। সব ধর্মের মানুষই এর মাংস খেতে পারে।
৫. মাংস উৎপাদনে পোল্ট্রির পরেই খরগোশের স্থান।
৬. রান্না ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ, বাড়ীর পাশের ঘাস ও লতা-পাতা খেয়ে এদের পালন করা সম্ভব।
৭. পারিবারিক শ্রমের সফল প্রয়োগ করা সম্ভব।
খরগোশ প্রতিপালনের পদ্ধতি:
বাড়ীর আঙ্গিনা বা বারান্দায় অল্প জায়গায় অথবা বাড়ীর ছাদে অল্প বিনিয়োগ করে ছোট আকারের শেড তৈরি করে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়।
দুইটি পদ্ধতিতে খরগোশ প্রতিপালন করা যায়ঃ
১) গভীর লিটার পদ্ধতি: এই পদ্ধতিটি কম সংখ্যক খরগোশ পালনের জন্য উপযোগী। মেঝেতে মাটি খুঁড়ে গর্ত বানানো বন্ধ করার জন্য মেঝে কংক্রিটের হওয়া উচিত। মেঝের উপর ৪-৫ ইঞ্চি পুরু করে তুষ, ধানের খড় অথবা কাঠের ছিলকা ইত্যাদি ছড়িয়ে দিতে হবে। এই পদ্ধতিতে এক সাথে ৩০টার বেশি খরগোশ প্রতিপালন করা ঠিক নয়। পুরুষ খরগোশ আলাদা ঘরে রাখা উচিত। অবশ্য এভাবে প্রতিপালন করলে খরগোশ সহজে রোগাক্রান্ত হতে পারে। তাছাড়া খরগোশকে সামলানোও খুব অসুবিধা হয়।
আমাদের দেশে সাধারণত পরিবহনযোগ্য নেটের খাঁচা বা কাঠের বাক্স খরগোশ প্রতিপালনের জন্য ব্যবহার করা হয় যা খামারীরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে এবং রাতে ঘরের ভিতরে আনতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কোনা এলাকাতে পুরুষ এবং স্ত্রী খরগোশ একত্রে রাখা হয় কিন্তু বাচ্চা দেবার পর বাচ্চাসহ স্ত্রী খরগোশকে আলাদা করে ফেলা হয়। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্ত্রী এবং পুরুষ খরগোশকে সবসময় আলাদা রাখা হয়। কেবলমাত্র প্রজননের সময় পুরুষ খরগোশকে স্ত্রী খরগোশের নিকট দেয়া হয়।
আমাদের দেশে সাধারণত পরিবহনযোগ্য নেটের খাঁচা বা কাঠের বাক্স খরগোশ প্রতিপালনের জন্য ব্যবহার করা হয় যা খামারীরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে এবং রাতে ঘরের ভিতরে আনতে পারে। এক্ষেত্রে কোনো কোনা এলাকাতে পুরুষ এবং স্ত্রী খরগোশ একত্রে রাখা হয় কিন্তু বাচ্চা দেবার পর বাচ্চাসহ স্ত্রী খরগোশকে আলাদা করে ফেলা হয়। আবার কোনো কোনো এলাকায় স্ত্রী এবং পুরুষ খরগোশকে সবসময় আলাদা রাখা হয়। কেবলমাত্র প্রজননের সময় পুরুষ খরগোশকে স্ত্রী খরগোশের নিকট দেয়া হয়।
২) খাঁচা পদ্ধতি বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ প্রতিপালনের জন্য লোহার পাত দিয়ে তৈরি ৩-৪ তাকবিশিষ্ট খাঁচা অধিক উপযোগী। প্রতিটি তাকে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রেখে খোপ তৈরি করতে হবে।
খাঁচাতে খরগোশের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা
ক) পূর্ণবয়স্ক পুরুষ খরগোশের জন্য ৪ বর্গফুট
খ) পূর্ণবয়স্ক মা খরগোশের জন্য ৬ বর্গফুট (প্রসূতি ঘর সহ)
গ) বাচ্চা খরগোশের জন্য ১.৫ বর্গফুট
পূর্ণবয়স্ক খরগোশের খাঁচা ১.৫ ফুট লম্বা, ১.৫ ফুট চওড়া এবং ১.৫ উঁচু হওয়া উচিত। এতে বাড়ন্ত দুইটি খরগোশ প্রতিপালন করা যাবে।
বড় আকারের খরগোশের জন্য ৩ ফুট লম্বা, ১.৫ ফুট চওড়া এবং ১.৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট খাঁচা উপযোগী। ২০ ফুট লম্বা, ১৩ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট বাঁশের বা পাকা ঘরে প্রায় ১৫০-২০০টি খরগোশ খাঁচায় লালন পালন করা যায়।
খাদ্য ব্যবস্থাপনা:
বয়স ও প্রজাতি ভেদে খরগোশের খাদ্য গ্রহণ ও পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হয়। একটি বয়স্ক খরগোশের খাদ্যে পুষ্টির জন্য ক্রুড প্রোটিন ১৭-১৮%, আঁশ ১৪%, খনিজ পদার্থ ৭% ও বিপাকীয় শক্তি ২৭০০ কিলো ক্যালরী/ কেজি হওয়া প্রয়োজন।
খাদ্যে পরিমাণ বয়স্ক খরগোশের জন্য প্রতিদিন ১৩০-১৪৫ গ্রাম, দুগ্ধবতী খরগোশের জন্য প্রতিদিন ২৫০-৩০০ গ্রাম ও বাড়ন্ত খরগোশের জন্য প্রতিদিন ৯০ গ্রাম খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
খাদ্যের ধরণ
সবুজ শাক-সবজিঃ ঋতু ভিত্তিক সবজি, পালং শাক, গাজর, মুলা, শশা, শাকের উচ্ছিষ্টাংশ, সবুজ ঘাস ইত্যাদি।
দানাদার খাদ্যঃ চাল, গম, ভুট্টা, তৈলবীজ ইত্যাদি। তবে, বাণিজ্যিকভাবে খরগোশ পালনের জন্য ব্রয়লার মুরগির জন্য প্রস্তুতকৃত খাদ্য খরগোশের রেশন হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিচের চিত্রে প্রাপ্ত বয়স্ক খরগোশের খাদ্য তালিকা দেয়া হল:
অসুস্থ খরগোশের চোখ ফ্যাকাসে, কান খাড়া থাকে না, লোম শুষ্ক ও রুক্ষ দেখায়, খাদ্য ও পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে, দৌড়াদৌড়ি কম করে, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।
খরগোশের রোগ ও প্রতিকার
মিক্সোমাটোসিস (Myxomatosis)
এটি খরগোশের একটি প্রাণনাশক রোগ৷ আঙ্গোরা, ফ্লেমিস রাবিট, জ্যাক রাবিট ইত্যাদি প্রজাতির খরগোশের এই রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তুলনামূলক ভাবে বেশী৷ এই ভাইরাস পক্স ভাইরাস শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত৷ রোগগ্রস্ত অবস্থায় খরগোশের প্রজনন ঘটালে মুখ, নাক, ঠোঁট, কান, চোখের পাতা ইত্যাদি অঙ্গে ইডেমা হয়৷ কান দেহ থেকে ঝুলে পড়তে পারে৷ কখনও কখনও শ্বাসকষ্ট হয়৷
চিকিৎসা এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট কোন ঔষধ নেই৷ রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হয়৷ সেফালেক্সিন বা এনরোফ্লক্সাসিন জলের সাথে মিশিয়ে খরগোশকে খাওয়ানো যেতে পারে৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা- অসুস্থ খরগোশকে মেরে ফেলে মাটিতে পুঁতে দিতে হবে৷
ফর্মালিন বা ৩ শতাংশ সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড দিয়ে খরগোশের খামার জীবাণুমুক্ত করতে হবে৷
প্রতিষেধক টীকা পাওয়া গেলে খরগোশকে টীকা দিতে হবে৷
সালমোনেল্লেসিস (Salmonellosis)
সালমোনেল্লা টাইফিমুরিয়াম নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগের কারণ৷ এই রোগে খরগোশের দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় ও পাতলা পায়খানা হয়৷ গর্ভবতী খরগোশের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে৷ এই রোগে খরগোশের মৃত্যুহার অনেক বেশী৷
চিকিত্সা-এনরোফ্লক্সাসিন বা সেফালোক্সিন বা সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামক আন্টিবায়োটিক খাওয়ালে ভাল ফল পাওয়া যায়৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা- খরগোশের খামার পরিষ্কার রাখতে হবে৷
দুষিত জল বা খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে৷
মৃত খরগোশেকে পুড়িয়ে ফেলতে হবে৷
খরগোশের খামারটিকে ভালভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে৷
পরজীবী ঘটিত রোগ (Parasitic diseases)
হেপাটিক কক্সিডিওসিস (Hepatic Coccidiosis)
আইমেরিয়া স্টাইডি নামক পরজীবী এই রোগের কারণ৷ সাধারণত কম বয়স্ক খরগোশের এই রোগ হয়৷
চিকিত্সা- সালফাকুইনক্সালিন ডেরিভেটিভ এই রোগের খুব ভাল ঔষধ৷ খাদ্যে শতকরা ০.০২৫ ভাগ হিসাবে ও পানীয় জলের শতকরা ০.০৪ ভাগ হিসাবে এই ঔষধ খরগোশটিকে খাওয়ালে খুব ভাল ফল পাওয়া যায়৷
ইন্টেসটিনাল কক্সিডিওসিস (Intestinal Coccidiosis)
আইমেরিয়া সিকিওলা, আইমেরিয়া ফ্লাভেসেনস, আইমেরিয়া ইন্টেসটিনালিস, আইমেরিয়া ইরেসিডুয়া, আইমেরিয়া ম্যাগনা, আইমেরিয়া মোডিয়া, আইমেরিয়া পারফোরানস, আইমেরিয় পিরিফর্মিস- এই আটটি প্রজাতির আইমেরিয়া ইন্টেসটিনাল কক্সিডিওসিসের কারণ৷
লক্ষণ- এই রোগের প্রধান কয়েকটি লক্ষণ হল পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসবে, ক্ষুধামন্দাভাব, পেট ফুলে থাকবে এবং চকলেট রঙের মলত্যাগ করবে৷
প্রতিরোধ ব্যবস্থা- খরগোশের খামার মিয়মিতভাবে জীবানুমুক্ত করতে হবে৷
খাবার ও জলের পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে৷
খাদ্যে কক্সিডিওসিস রোধকারী ঔষধ মেশাতে হবে৷
খরগোশ পালনে আর্থিক লাভ
কিছু দানাদার খাবার এবং বাড়ীর আশেপাশের ঘাস, লতা-পাতা এবং রান্না ঘরের উচ্ছিষ্টাংশ প্রদান করে পারিবারিকভিত্তিতে ২০টি খরগোশ প্রতিপালন করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণের সাথে সাথে মাসিক ৬০০০.০০ টাকা আয় করা সম্ভব যা অন্য কোনো ভাবে সম্ভব নয়।
এক কাঠা জায়গায় কমপক্ষে ১৩০টি খরগোশ পালন সম্ভব। সবুজ ঘাস, লতাপাতা, শাক-সবজি, ভাত খেতে এরা খুব পছন্দ করে। খুব সহজেই যে কেউ খরগোশ পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। ছয় মাস বয়সী ১০০টি স্ত্রী খরগোশের সঙ্গে ছয় মাস বয়সী ২৫-৩০টি পুরুষ খরগোশের মিলনের ফলে আড়াই কি তিন মাসে ৫০০-৬০০টি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। একটি খরগোশ বছরে ৫ থেকে ৬টি বাচ্চা দেয়। ছয় মাস বয়সী প্রতিটি খরগোশের মূল্য ৩০০-৫০০ টাকা (ঢাকার বাজার দরে)। খরগোশ বাচ্চা প্রদানের পর মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রসবকৃত বাচ্চাগুলো চলাফেরা করতে পারে। বাচ্চা প্রসবের সময় এরা অবশ্য নিরাপদ আশয় খোঁজে। কারণ বেজি, নেড়ি কুকুড়, বিড়াল, সাপ এদের জাতশত্রু। এসব প্রাণী যাতে এদের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিটি বাচ্চা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। তখন এদের প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা (ঢাকার বাজার দরে)। ঢাকাসহ দেশের প্রসিদ্ধ শহরগুলোতে খরগোশ কেনাবেচা হয়।
এক কাঠা জায়গায় কমপক্ষে ১৩০টি খরগোশ পালন সম্ভব। সবুজ ঘাস, লতাপাতা, শাক-সবজি, ভাত খেতে এরা খুব পছন্দ করে। খুব সহজেই যে কেউ খরগোশ পালনকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারেন। ছয় মাস বয়সী ১০০টি স্ত্রী খরগোশের সঙ্গে ছয় মাস বয়সী ২৫-৩০টি পুরুষ খরগোশের মিলনের ফলে আড়াই কি তিন মাসে ৫০০-৬০০টি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব। একটি খরগোশ বছরে ৫ থেকে ৬টি বাচ্চা দেয়। ছয় মাস বয়সী প্রতিটি খরগোশের মূল্য ৩০০-৫০০ টাকা (ঢাকার বাজার দরে)। খরগোশ বাচ্চা প্রদানের পর মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই প্রসবকৃত বাচ্চাগুলো চলাফেরা করতে পারে। বাচ্চা প্রসবের সময় এরা অবশ্য নিরাপদ আশয় খোঁজে। কারণ বেজি, নেড়ি কুকুড়, বিড়াল, সাপ এদের জাতশত্রু। এসব প্রাণী যাতে এদের ক্ষতি করতে না পারে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতিটি বাচ্চা এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে বিক্রির উপযোগী হয়। তখন এদের প্রতিটির মূল্য দাঁড়ায় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা (ঢাকার বাজার দরে)। ঢাকাসহ দেশের প্রসিদ্ধ শহরগুলোতে খরগোশ কেনাবেচা হয়।
কেস স্টাডি:
খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী সিরাজগঞ্জের অনেক নারী
খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার অনেক নারী। তাদের মধ্যে অন্যতম দুর্গা রানী ও আখলিমা খাতুন। খরগোশ বিক্রির টাকায় চলছে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ। সংসারের খরচের অংশ মেটান তারা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, খরগোশের মাংস খাওয়া যায় এবং এটি রোগ প্রতিরোধক। পাশাপাশি খরগোশ পালন এবং বাজারজাতকরণ সম্পর্কেও আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। নারীদের খরগোশ পালন ও অর্থ আয় আমাদের চমক লাগিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের নায়েব আলীর স্ত্রী আখলিমা বেগম (৪০) জানান, প্রায়ই বাড়িতে খরগোশ জবাই করি এবং এর মাংস খেয়ে থাকি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার হিসেবে। এক সময় মানুষ বাড়িতে খরগোশ পালন করত শখের বশে।
কিন্তু এখন পালন করে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে। আমি খরগোশ পালনের কাজকে আমার পেশা হিসেবে নিয়েছি। এটি আমার ভাগ্যকে পরিবর্তন করেছে এবং আমাকে আশার আলো দেখিয়েছে। বর্তমানে আমি খরগোশ পালন ও বাজারজাত করে বেশ লাভবান হচ্ছি। আমি আমার ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে চাই, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় আমি ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে পারছি না। সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে পারতাম।
একই উপজেলার সোলাপাড়া গ্রামের নীপেন চন্দ্র প্রামাণিকের স্ত্রী দুর্গা রানী (৩৮) বলেন, খরগোশ পালনের ব্যবসা তার ভাগ্যের দাঁড় উন্মুক্ত করেছে। তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার ছেলে কলেজে পড়ে। এরই মধ্যে তিনি খরগোশ পালনের আয় থেকে একটি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তাদের বসবাসের জন্য। তিনি তার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন এ ব্যবসা থেকেই। এছাড়া তিনি এখন থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো সঞ্চয় গড়ে তুলছেন।
কিন্তু এখন পালন করে লাভজনক ব্যবসা হিসেবে। আমি খরগোশ পালনের কাজকে আমার পেশা হিসেবে নিয়েছি। এটি আমার ভাগ্যকে পরিবর্তন করেছে এবং আমাকে আশার আলো দেখিয়েছে। বর্তমানে আমি খরগোশ পালন ও বাজারজাত করে বেশ লাভবান হচ্ছি। আমি আমার ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে চাই, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় আমি ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে পারছি না। সরকারি-বেসরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা পেলে ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে পারতাম।
একই উপজেলার সোলাপাড়া গ্রামের নীপেন চন্দ্র প্রামাণিকের স্ত্রী দুর্গা রানী (৩৮) বলেন, খরগোশ পালনের ব্যবসা তার ভাগ্যের দাঁড় উন্মুক্ত করেছে। তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন। বর্তমানে তার ছেলে কলেজে পড়ে। এরই মধ্যে তিনি খরগোশ পালনের আয় থেকে একটি আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করেছেন তাদের বসবাসের জন্য। তিনি তার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন এ ব্যবসা থেকেই। এছাড়া তিনি এখন থেকে ভবিষ্যতের জন্য একটি ভালো সঞ্চয় গড়ে তুলছেন।
দুর্গা রানী আরও বলেন, এক সময় তিনি ছিলেন ভীষণ দরিদ্র এবং অসুখী। তিনি তার স্বামী-সংসার নিয়ে চরম দুর্বিষহ জীবনযাপন করতেন, কারণ তার স্বামী ছিল কর্মহীন-বেকার। গত দুই বছর আগে এক প্রতিবেশীর কাছে খরগোশ পালনের বিষয়টি জানতে পারেন এবং বাড়িতে খরগোশ পালনে আগ্রহী হন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে একপর্যায়ে তিনি প্রাক্টিক্যাল অ্যাকশন নামক একটি এনজিওর আর্থিক সহযোগিতায় মানবমুক্তি নামক অপর একটি এনজিও কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত ভিটুআর প্রকল্পের সদস্য হিসেবে নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর তিনি সেই প্রকল্পের আওতায় সাতদিনের প্রশিক্ষণ নেন এবং বাড়িতে মাত্র তিনটি খরগোশ দিয়ে একটি ফার্ম স্থাপন করেন। এটা ছিল ২০১০ সালের কথা। বর্তমানে তার ফার্মটি ব্যাপক প্রসারিত হয়েছে। তিনটি খরগোশ বহু খরগোশে পরিণত হয়েছে। ফলে তাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হচ্ছে না।
শুধু আখলিমা ও দুর্গা রানী নয়, তাদের মতো বোয়ালিয়া ও সোলাপাড়া গ্রামের আরও অনেকেই এখন খরগোশ পালন করে স্বাবলম্বী। তারা খুঁজে পেয়েছেন তাদের জীবিকার পথ।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা খরগোশ পালনকারীদের বাড়িতে ভিড় করছেন। তারা প্রতিটি খরগোশ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা এবং প্রতি জোড়া খরগোশ ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকায় ক্রয় করছেন। খরগোশ পালনকারীরা জানান, খরগোশ বিক্রির জন্য তাদের খুব কমই বাজারে যেতে হয়। বরং ক্রেতারাই তাদের বাড়ি এসে এসব কিনে নিয়ে যান। তবে মাঝেমাঝে তারাও স্থানীয় হাট-বাজারে খরগোশ বিক্রি করে থাকেন।
সরেজমিন দেখা যায়, খরগোশ পালনকারী মহিলারা বাড়িতে স্বল্প পরিসরে খাঁচা-পদ্ধতিতে খরগোশ পালন করছেন। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি তারা খরগোশের ভরণ-পোষণ বা দেখা-শোনার কাজ করেন। এতে বাড়তি খরচ বা সময় নষ্ট হয় না।
এ প্রসঙ্গে প্রাক্টিক্যাল অ্যাকশন, বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জ অফিসের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, বহু মানুষ এখন খরগোশ পালন ও সেবনে আগ্রহ প্রকাশ করছে। কারণ এটি খুব সহজে, স্বল্পখরচে ও স্বল্প পরিসরে করা যায়। এছাড়া প্রতিটি খরগোশ মাত্র দুই মাসের মধ্যেই খাওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণী ও পশুসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, খরগোশের মাংস সুস্বাদু, রোগ প্রতিরোধক এবং পুষ্টিমানসম্পন্ন। যে কেউ ইচ্ছা করলে বাড়িতে খরগোশ পালন করতে পারেন এবং এ থেকে সংসারে বাড়তি আয় করতে পাররেন। এতে বিপুল পরিমাণ মূলধনের প্রয়োজন নেই। তাই এখন অনেকেই এটিকে পেশা হিসেবে নিচ্ছেন এবং স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
নেত্রকোনায় খোরগোশ পালন করে আদিবাসীদের দিন বদলের চেষ্টা
নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নে আদিবাসী অধ্যুষিত নয়াপাড়া গুচ্ছগ্রামে খোরগোশ পালন করে বেশ কয়েকটি আদিবাসী পরিবার নিজেদের দিন বদলের চেষ্টা করছে।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালে সুসং দূর্গাপুরের আদিবাসী যুবক নিহার রঞ্জন প্রথমে এক জোড়া খরগোশ এনে পালন শুরু করেন। তার দেখা দেখি আদিবাসী অনেকেই খরগোশ পালনে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে ২০০৮ সালে নেত্রকোনার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির ইনকাম এন্ড ফুড সিকিউরিটি ফর আলট্রাপোর-ইফসাস প্রকল্প নামে গুচ্ছগ্রামে খরগোশ পালনের পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। গুচ্ছ গ্রামের আদিবাসী পরিবারগুলো তিনটি সমিতির মাধ্যমে প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হয়। সমিতিগুলো হচ্ছে, সিলভিয়া, পাহাড়ীকা ও নিথুরিয়া। সমিতি থেকে খরগোশ পালনের জন্য প্রতিটি পরিবারকে সুদবিহীন ১১ হাজার ৯৮০ টাকা ঋণ দেয়া হয়। ঋণ পেয়ে গুচ্ছ গ্রামের সুরনা হাজং, পুস্পবালা হাজং, গীতা হাজং, চপলা রিছিল, কনকিনা চাম্বু গং, মায়া রানী হাজং, রিজিলা হাজংসহ বেশ কিছু আদিবাসী পরিবার দুই পদ্ধতিতে খরগোশ পালন শুরু করে। ৪ ফুট উচ্চতা এবং ৭ ফুট চওড়া কাঠের ঘর বানিয়ে চারদিকে নেট দিয়ে সেখানে খরগোশ পালা হয়। জন্মের দিন থেকে খরগোশ প্রাপ্ত বয়স্ক হতে ৬ মাস সময় লাগে। এরপর প্রতি মাসে মাদি (মহিলা) খরগোশ ৫-৬টি করে বাচ্চা প্রসব করে। কোন কোন খরগোশ সর্বোচ্চ ৯টি বাচ্চাও প্রসব করে।
গীতা হাজং বলেন, নিথুরিয়া সমিতির মাধ্যমে ঋণ পেয়ে তিনি সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার মনচাপড়া গ্রামের সন্তোষ হাজংয়ের কাছ থেকে এক হাজার টাকা দিয়ে দুটি মাদি ও দুটি পুরুষ খরগোশ কেনেন। ছয় মাস পর থেকেই খরগোশগুলো বাচ্চা দেয়া শুরু করে। তিনি জানান, খরগোশ পালনে খাবারের ঝামেলা নেই। খরগোশের প্রধান খাবার হচ্ছে সবুজ ঘাস ও তরু লতা। এ ছাড়াও কপি, মূলা, শিমপাতা, মুড়ি, রুটি, ভাতসহ সবকিছুই খায় খরগোশ। সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি সামান্য সময় ব্যয় করলেই বাড়ীতে খরগোশ পালন করা যায়। খরগোশের মাংশ অত্যন্ত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু। এ অঞ্চলের আদিবাসীদের কাছে ক্রমেই খরগোশের মাংশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
সিলভিয়া সমিতির সদস্য কনকিনা চাম্বু গং বলেন, আগে আমাদের সংসার চালাতে খুব কষ্ট হতো। খরগোশ পালন ও তা বিক্রি করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে।
সুসং দূর্গাপুরের প্রথম খরগোশ পালক হাজং নিহার রঞ্জন বলেন, স্বল্প পূঁজিতে আমাদের এলাকায় খরগোশ পালনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। সরকার এই প্রকল্পে পৃষ্টপোষকতা করলে আদিবাসীদের উজ্জল ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
সংগৃহীত ও সংকলিত
তথ্য:
তথ্য আপা প্রকল্প
No comments:
Post a Comment