Pages

Saturday 4 November 2017

সিরিয়াসলি যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের উদ্দেশ্য

সিরিয়াসলি যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের উদ্দেশ্য:
আপনি মানলেও সত্য, না মানলেও সত্য যে, প্রেম-পিরিতি বড়ই প্যারাদায়ক। এই প্যারা সর্বোচ্চ পর্যায়েই পৌঁছাবে আপনার বিসিএস প্রস্তুতির সময়। প্যারাময় আর সার্বক্ষণিক অস্থিরতার এই প্রেম-পিরিতির জটিল সম্পর্ককে টিকিয়ে রেখে প্রস্তুতি নিতে পারবেন হয়তো, কিন্তু, চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোটা বহু কষ্টের হবে, অনেকের জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে।
পার্থিব একটা নিয়মই হলো, ভালো লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে তার মূল পরীক্ষাসহ পারিপার্শ্বিক আরো অনেক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। অধিকাংশ মানুষই পারিপার্শ্বিক পরীক্ষার দ্বন্দ্বে মূল পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়।
বিসিএসের ক্ষেত্রেও প্রিলি-রিটেন-ভাইভার পাশাপাশি বাস্তব জীবনের অনেক পারিপার্শ্বিক পরীক্ষা আসবে।
সেই পরীক্ষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ানক পরীক্ষা হচ্ছে প্রেম-পিরিতি ঘটিত সম্পর্ককেন্দ্রিক জটিলতা!
অন্যসব জটিলতাকে আপনার ঐকান্তিক চেষ্টায় কাটিয়ে উঠতে পারলেও প্রেম-পিরিতির ঝামেলাটা সহজে কাটাতে পারবেন না। আপনি নিশ্চিত চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে যাবেন। কারণ, এখানে দুটি জীবনসহ দুটি পরিবার জড়িত থাকে। মানসিক অস্থিরতা নিয়ে আর যাই-ই হোন না কেন বিসিএস ক্যাডার হওয়াটা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে।
আমার দেখা অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী চরম মেধাবী এবং ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ক্যাডার হতে পারেনি। পরীক্ষার রাতেও আমি অনেককে ফোনে ঝগড়া করতে দেখেছি চরম উত্তেজিত অবস্থায়। ওরা পারেনি।
বিষয়টা একটু ভাবুন। একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়ে সবাই সেনসিটিভ হয়।
যাহোক, সমাধানের ব্যাপারে দুটো কথা বলি।
#সমাধান_এক: কোনোভাবে সম্ভব হলে সম্পর্কটির আপাতত ইতি টানুন। আপনার ভালবাসার মানুষটি আপনার জন্য নির্ধারিত হলে জীবনসঙ্গী হিসেবে যেকোনভাবেই দিনশেষে তাকেই পাবেন।
সম্পর্কের ইতি টানায় কিছুদিন খারাপ লাগলেও সময় সব ঘা শুকিয়ে দেবে।
#সমাধান_দুই: বিসিএস ক্যান্ডিডেটরা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করা জনশক্তি, বিয়ের বয়স সবারই হয়েছে! কোনোভাবে সম্ভব হলে ভালবাসার মানুষটিকে বিয়ে করে ফেলুন। তাতে দায়িত্বের চাপে, কিছু করার তাড়নায় আপনার পেছনে রকেটের মতো আগুন জ্বলবে। আল্লাহ্ চাইলে আপনি অন্যদের চেয়ে অল্প সময়েই গন্তব্যে পৌঁছাবেন ইনশা-আল্লাহ্।
এক্ষেত্রে আপনি হয়তো সমাজের তিরস্কারের কথা ভাববেন। ঘাবড়াবেন না। সমাজের কথা ভেবে আপনি কখনো আপনার সিদ্ধান্তে পিছপা হবেন না। এই সমাজ আপনাকে শুধু টেনে নিচে নামানোর চেষ্টা করবে, কখনো ঠেলে উপরে উঠাবে না। আর সমাজ একটা আপেক্ষিক বিষয়। যে সমাজ আজ আপনার নিন্দায় মত্ত থাকবে, ঐ সমাজই আপনার সফলতায় হৈ চৈ শুরু করবে, আপনাকে নিয়ে গর্ব করবে।
আপনাকে নিয়ে তিরস্কার-নিন্দা-সমালোচনাই আপনাকে সফলতার পথে নিয়ে যাবে যদি চ্যালেঞ্জটা নিতে পারেন।
আর একটা কথা। জীবন শুধু বিসিএস ক্যাডার হওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়। এর আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। নিজের মন-প্রাণ উজাড় করে ভালবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেললে অনেক প্রভাবশালী বিসিএস ক্যাডার হয়েও জীবনটা আপনার পানসে হয়ে যাবে!
জীবন আপনার, সিদ্ধান্তও আপনার।
আমার কথাগুলোর সাথে আপনার দ্বিমত থাকা স্বাভাবিক। আর সবার জীবনের ঘটনাপ্রবাহও এক না।
সব প্রেম-পিরিতিও এক না। আমি এরকম অসংখ্য সফলতা-ব্যর্থতা খুব কাছে পর্যবেক্ষণ করেছি। অনেকে তাদের জীবনের ঘটনা আমার কাছে শেয়ার করে সমাধানের ব্যাপারে পরামর্শ চেয়েছে। ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
অনেকের সমস্যা এতো জটিল হয়েছে যে, তা সমাধান করে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর মতো পর্যাপ্ত সময় আর হাতে নাই। তাই সময় থাকতে জেগে উঠুন, ভাবুন, আপনার জীবনের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও আপনার হাতে নিয়ে নিন।
আর একটি কথা। অনেকে বলবেন, যা হবার তা হবে, সবই আল্লাহ্'র হাতে!
ভাই, সবই আল্লাহ্'র হাতে থাকলে আর হাশর-কেয়ামত-বিচার-মিযান-পুলসিরাত-জান্নাত-জাহান্নামের ব্যাপার থাকতো না। পৃথিবীতে মানুষ তার কাজ-কর্ম-মতামতের জন্য কিছুটা স্বাধীন বলেই আখিরাতে মানুষের বিচার-আচার হবে।
যাহোক, আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে অনেক কথা বললাম। আপনাদের জানাশোনার কাছে আমি কিছুই না।
ভুল হলে ক্ষমা করবেন।
আপনাদের শুভকামনায়-
কৃষিবিদ ইমরান আহমদ
৩৬তম বিসিএস (সুপারিশপ্রাপ্ত)

No comments:

Post a Comment